গাজীপুরে একসময় ছাত্রনেতা পরিচয়ধারী জিয়াউল হক স্বপন, ওরফে জি এস স্বপন, এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। কারণ, তাঁর বিরুদ্ধে উঠে এসেছে চাঁদাবাজি ও টার্গেট মামলা দিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানির অভিযোগ।স্বপন একসময় গাজীপুর মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, তবে বর্তমানে তিনি কোনো দলীয় পদে নেই। এরপরও বিএনপির পরিচয় ব্যবহার করে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও অবৈধ সুবিধা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। স্থানীয় বিএনপি নেতারাও স্বীকার করেছেন যে, তার কর্মকাণ্ডে দলের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে।স্বপনের বিরুদ্ধে রয়েছে অন্তত দুটি মামলা ও একাধিক অভিযোগ। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, তিনি মোটা অংকের চাঁদা দাবি করেন, তা না পেলে মামলা দিয়ে হয়রানি করেন। এমনকি একজন ১১ বছরের শিশুকেও মামলায় আসামি করা হয়েছে।চাঁদা না পেয়ে মামলা: শিক্ষার্থী, শিক্ষক, ব্যবসায়ী কেউ বাদ যায়নিগাজীপুরের বহু শিক্ষক, ব্যবসায়ী, এমনকি বিএনপির নেতা-কর্মীরাও স্বপনের মামলার ফাঁদে পড়েছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করেছেন, ‘আওয়ামী লীগ সমর্থক’ আখ্যা দিয়ে চাঁদা দাবি করেন স্বপন। টাকা না দিলে তাদের নাম মামলায় ঢুকিয়ে দেন।এক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, একটি মৃত্যুবাষিকীর অনুষ্ঠানে তার আইফোন ও টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর নতুন আইফোন না দেওয়ায় তাকেও মামলায় আসামি করা হয়। একাধিক অডিও রেকর্ডে স্বপনের হুমকি ও গালিগালাজ প্রকাশিত হয়েছে, যা ইতিমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েছে।‘মামলার বাদী চেনে
ন না আসামিদের’ – নতুন অভিযোগের মোড়বেশ কিছু মামলায় দেখা গেছে, বাদী নিজেই স্বীকার করছেন যে তারা আসামিদের চেনেন না। অভিযোগ উঠেছে, এসব মামলার আসামির তালিকা তৈরি করেছে স্বপন, যিনি অনেক ক্ষেত্রে মামলার আইনজীবী হিসেবেও আছেন। এতে মামলাকে ব্যবসায় পরিণত করার অভিযোগ আরও জোরালো হয়েছে।বিএনপির নেতাদের অবস্থানগাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি শওকত হোসেন সরকার বলেন, "স্বপনের এ ধরনের কার্যকলাপে আমরা বিব্রত। সে বর্তমানে কমিটিতে নেই, তাই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন। তবে আদালতে নির্দেশ দিয়েছি, যেন তার করা কোনো মামলা গ্রহণ না করা হয়।"কেন্দ্রীয় নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, “বিএনপিতে কোনো চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী বা অপকর্মকারীর স্থান নেই।”পুলিশের বক্তব্য ও আইনি অগ্রগতিগাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, স্বপনের নামে দুটি মামলা রয়েছে এবং তাকে গ্রেফতারের জন্য অভিযানও চালানো হয়েছিল। বর্তমানে তিনি জামিনে রয়েছেন।স্বপনের দাবি: সবই ‘ষড়যন্ত্র’স্বপন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমি কাউকে মামলা দিইনি, আইনজীবীও না। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে।” যদিও ভুক্তভোগীদের বক্তব্য ও মামলার বাস্তব চিত্র ভিন্ন।গাজীপুরে রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে মামলা বাণিজ্য ও চাঁদাবাজির অভিযোগ এখন ওপেন সিক্রেট। স্থানীয়দের মতে, এর সুষ্ঠু তদন্ত ও উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি, না হলে রাজনীতিকে ঘিরে গড়ে ওঠা আস্থার ভীতই ধসে পড়বে।
মন্তব্য (০)