আজ পবিত্র আশুরা, হিজরি ১৪৪৭ সনের ১০ মহররম। মুসলিম উম্মাহর ইতিহাসে এই দিনটি গভীর শোক, ত্যাগ ও আত্মোৎসর্গের প্রতীক। ইসলামের সূর্য যখন রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ও অন্যায়ের অন্ধকারে আচ্ছন্ন হতে যাচ্ছিল, তখন কারবালার প্রান্তরে ইমাম হোসেন (রা.) সত্য ও ন্যায়ের পতাকা উঁচিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে।কারবালার বিয়োগান্তক ইতিহাসইসলামের চতুর্থ খলিফা হজরত আলী (রা.)-এর পুত্র ইমাম হোসেন (রা.) ছিলেন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র। হিজরি ৬১ সনের ১০ মহররম, কারবালার রক্তাক্ত প্রান্তরে তাঁর পরিবারের ৭২ জন সদস্যসহ শাহাদাতবরণ করেন। এই আত্মত্যাগ ছিল অত্যাচার, দমন ও অবৈধ শাসনের বিরুদ্ধে ইসলামের এক অবিস্মরণীয় প্রতিবাদ।মুয়াবিয়ার মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র ইয়াজিদ জোরপূর্বক খিলাফতের ক্ষমতা গ্রহণ করেন। ইমাম হোসেন (রা.) সেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ান এবং চুক্তি ভঙ্গের প্রতিবাদ জানান। এর ফলেই শুরু হয় কারবালার ভয়াল অধ্যায়। ফোরাত নদীর তীরে তাঁকে পরিবারসহ অবরুদ্ধ করে রাখা হয়, পানি বন্ধ করে দেওয়া হয় এমনকি শিশুদেরও রেহাই দেওয়া হয়নি।সকাল থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত চলা সেই যুদ্ধে ইমাম হোসেন (রা.
) একে একে হারান তাঁর পরিবার ও সঙ্গীদের। শেষে নিজেও শাহাদাতবরণ করেন। তাঁর শরীরে পাওয়া যায় বর্শা, তরবারি ও তিরের অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন।আশুরার তাৎপর্য আজও অনন্যআশুরা শুধুমাত্র একটি দিনের ঘটনা নয়, এটি একটি চেতনার নাম। এটি ন্যায়-অন্যায়ের চূড়ান্ত পার্থক্যরেখা। ইসলামের ইতিহাসে এই দিনটি নবী-রাসুলদের স্মৃতি বিজড়িত একটি তাৎপর্যময় সময়, যাকে ঘিরে বহু ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছে।শিয়া সম্প্রদায়ের জন্য এটি একটি আবশ্যিক ধর্মীয় দিন হলেও, সুন্নি মুসলমানরাও নফল রোজা রাখা, দোয়া ও বিভিন্ন ইবাদতের মাধ্যমে দিনটি পালন করে থাকেন। বাংলাদেশে যুগ যুগ ধরে এই দিনটি শিয়া-সুন্নি নির্বিশেষে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে পালিত হয়ে আসছে।শান্তিপূর্ণ পালনের আহ্বানআশুরার মূল বার্তা হল ত্যাগ, আত্মোৎসর্গ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায় প্রতিষ্ঠার শিক্ষা। এই বার্তা যেন সকল আনুষ্ঠানিকতার কেন্দ্রে থাকে, সেটাই কাম্য। ঢাকাসহ সারাদেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।এ বিষয়ে প্রত্যাশা, সব ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মতো আশুরাও হবে শৃঙ্খলাপূর্ণ, সম্প্রীতিময় ও নিরাপদ। শিয়া সম্প্রদায়ের তাজিয়া মিছিল, ইবাদত ও স্মরণানুষ্ঠান যেন নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়, সেদিকে দৃষ্টি রাখা জরুরি।আশুরার চেতনায় জাতির পুনর্জাগরণআজকের দিনে আমাদের উচিত ইমাম হোসেন (রা.)-এর সাহস ও ন্যায়পরায়ণতার আদর্শকে অন্তরে ধারণ করা। শুধু শোক নয়, আশুরা সত্য প্রতিষ্ঠার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে জাগরণের বার্তা বয়ে আনে। কাজী নজরুল ইসলামের কথায়, “ত্যাগ চাই, মর্সিয়া-ক্রন্দন চাহি না” — এটাই হওয়া উচিত আমাদের মূল দর্শন। ইসলামের আদর্শ অনুযায়ী, সত্যের পথ যতই কঠিন হোক, ত্যাগ ও ঈমানের শক্তিতেই বিজয় সম্ভব।
মন্তব্য (০)