দীর্ঘ ২৩ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে দেশের পেশাদার লিগে প্রথমবারের মতো শিরোপা ঘরে তুলেছে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডান। ২০২৪-২৫ মৌসুমে এই সাফল্য যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পাওয়ার এক উজ্জ্বল সূচনা। ২০০১ সালের পর এই ক্লাব কার্যত প্রতিযোগিতার মঞ্চ থেকে সরে গিয়েছিল, আর তার সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছিল এক সময়ের ফুটবল উন্মাদনা।ঐতিহ্যের শিকড়ে ফিরে দেখাঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৩৬ সালে ঢাকার হাজারীবাগে। সে সময় এটি মুসলিম সমাজে ক্রীড়া চেতনার জাগরণ ঘটায়। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর কলকাতা মোহামেডানের বিখ্যাত খেলোয়াড় মোহাম্মদ শাহজাহান ঢাকায় এসে ক্লাবকে পুনর্গঠিত করেন।১৯৫৬ সালে ক্লাবটি প্রথমবারের মতো ঢাকা লিগের ফাইনাল খেলায় অংশ নেয় এবং রানার্সআপ হয়। এর এক বছর পর, ১৯৫৭ সালে মোহামেডান প্রথমবারের মতো লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়। তারপর থেকে বহু বছর ধরে ক্লাবটি ঢাকার ফুটবলে একক আধিপত্য বিস্তার করে।ক্লাব সংস্কৃতি ও বাস্তবতার চিত্রবর্তমানে দেশে ফুটবলের জনপ্রিয়তা যেমন কমেছে, তেমনি হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী ক্লাবসংস্কৃতি। মোহামেডান-আবাহনীর লড়াই নিয়ে একসময় মানুষের মনে যে উন্মাদনা থাকত, এখন তার জায়গা নিচ্ছে নতুন প্রজন্মের পছন্দের ক্লাব বসুন্ধরা কিংস।তবে এখনো আশার জায়গা আছে। লেখকের মতে, “সঠিক পরিকল্পনা ও প্রয়োগের মাধ্যমে মোহামেডান আবারও পুরোনো মর্যা
দা ফিরে পেতে পারে।”ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও করণীয়বর্তমান সময়ের বাস্তবতায় মোহামেডানকে গণমানুষের ক্লাবে রূপান্তর করতে হলে কিছু কাঠামোগত পরিবর্তন জরুরি। প্রয়োজন হলে ক্লাবের গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে পুনর্গঠনের পদক্ষেপ নিতে হবে। ফুটবলের উন্নয়নে একটি শক্তিশালী ও স্বতঃস্ফূর্ত কমিটি গঠন করে দ্রুত মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু করতে হবে।সরকার থেকে প্রাপ্ত সাভারের জমিতে একটি স্থায়ী ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণ করে ফুটবল, ক্রিকেট ও হকির একাডেমি গড়ে তোলার জন্য এখন থেকেই উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।সমর্থকদের ভূমিকা আরও দৃঢ় হতে হবেমোহামেডানের বিভিন্ন সাপোর্টার গ্রুপ যেমন মোহাপাগল, আমাদের মোহামেডান, ফ্যান ক্লাব, আল্ট্রাস ও ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট ওয়ারিয়ার্স—যদি একক প্ল্যাটফর্মে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে, তাহলে সেই সমর্থন আরও কার্যকর হবে।সমর্থকদের মাঠে উপস্থিতি বাড়ানো, ক্লাব পরিচালনায় সম্পৃক্ততা বাড়ানো ও দলাদলি পরিহার করে একসাথে কাজ করাই হতে পারে ভবিষ্যতের সাফল্যের চাবিকাঠি।সামনে ৯০ বছর পূর্তি, প্রস্তুতি শুরু হোক এখনই ২০২৬ সালে ঢাকা মোহামেডান তার গৌরবময় ৯০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন করতে যাচ্ছে। এই গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষকে সামনে রেখে খেলোয়াড়দের বকেয়া পরিশোধ, এএফসির লাইসেন্স প্রাপ্তি এবং একটি শক্তিশালী দল গঠনের প্রস্তুতি এখন থেকেই শুরু করা প্রয়োজন।
মন্তব্য (০)