ব্রেকিং নিউজ :

দৃষ্টিকোণ নিউজ একটি নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ অনলাইন সংবাদ মাধ্যম, যা সর্বশেষ সংবাদ ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করে।

আমরা দেশের ও বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ খবর, রাজনীতি, অর্থনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর নির্ভরযোগ্য প্রতিবেদন প্রকাশ করি।

অন্যান্য

আট মাসে দুদকের নজিরবিহীন অভিযান: ১৯২ একর জমি, ২৮ ভবন ও ৩৮ ফ্ল্যাট জব্দ

আট মাসে দুদকের নজিরবিহীন অভিযান: ১৯২ একর জমি, ২৮ ভবন ও ৩৮ ফ্ল্যাট জব্দ Image প্রতীকী ছবি | ছবি: প্রতীকী ছবি
ইমেইল :

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গত আট মাসে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং সরকারি কর্মকর্তাদের বিপুল সম্পদ জব্দ করেছে। জুলাই ২০২৪ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত সময়ে বিভিন্ন আদালতের আদেশে এই সম্পদ জব্দ করা হয়।দুদক সূত্রে জানা গেছে, এই সময়ে মোট ৭৪টি জব্দের আদেশ পায় কমিশন। এর আওতায় প্রায় ১৯২ একর জমি, ২৮টি বহুতল ভবন, ৩৮টি আবাসিক ফ্ল্যাট এবং ১৫টি প্লট জব্দ করা হয়েছে। জব্দ তালিকায় রয়েছে ২৩টি গাড়ি ও ৩টি জাহাজ। এসব সম্পদের আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা, যা দেশ-বিদেশে বিস্তৃত।২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর দুদক দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে সক্রিয় হয়। আগে অভিযোগ ছিল, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সংস্থাটি রাজনৈতিক প্রভাবে পরিচালিত হতো এবং শুধুমাত্র নির্বাচিত কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধেই তদন্ত করা হতো।২০২৪ সালের ২৯ অক্টোবর পদত্যাগ করেন তৎকালীন দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ ও দুই কমিশনার মো. জহুরুল হক এবং মোছা. আছিয়া খাতুন। তাঁদের পদত্যাগের পর ১০ ডিসেম্বর নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে মোহাম্মদ আবদুল মোমেন ও দুই কমিশনার মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.

) হাফিজ আহ্সান ফরিদ নিয়োগ পান।বর্তমানে দুদক নিয়মিতভাবে সম্পদ জব্দের আবেদন করছে এবং আদালত তা মঞ্জুর করছেন। তবে সুনির্দিষ্টভাবে কারা এসব সম্পদের মালিক, সে বিষয়ে কমিশনের পক্ষ থেকে পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। বিভিন্ন সময়ে আদালতের আদেশ ও দুদক সূত্র থেকে কিছু নাম জানা গেছে।শেখ পরিবারের একাধিক সদস্য জব্দের তালিকায় রয়েছেন। গত ৩০ এপ্রিল আদালতের এক আদেশে সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, শেখ রেহানা ও তাঁর সন্তানদের সম্পদ জব্দ করা হয়। এ ছাড়া সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন তাজুল ইসলাম, নসরুল হামিদ, এনামুর রহমান, জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক, মির্জা আজম, জাকির হোসেন, জান্নাত আরা হেনরীসহ অনেকে। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সম্পদও জব্দ করা হয়েছে।বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ ফেরত আনার বিষয়ে আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্সের তথ্যমতে, শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকার শেয়ার এবং ৪ হাজার কোটি টাকার ব্যাংক জমা জব্দ করা হয়েছে। একইসাথে ৮৪ জনকে বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।দুদকের একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তদন্ত শুরু হওয়ার পর সন্দেহজনক অবৈধ সম্পদ শনাক্ত হলে তা অবরুদ্ধ করতে দ্রুত আদালতে আবেদন করা হয়, যাতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সম্পদ বিক্রি করে দিতে না পারেন। মামলার তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দেওয়া হয় এবং বিচার শেষে দোষী সাব্যস্ত হলে জব্দকৃত সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হয়।রাজউকের সাবেক সহকারী পরিচালক মো. শামসুল আলম মিলকীর উত্তরার একটি আটতলা ভবনও জব্দ করা সম্পদের মধ্যে অন্যতম। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওই বাড়িতে ১০টি ফ্ল্যাট রয়েছে এবং প্রতি মাসে আড়াই লাখ টাকা ভাড়া উঠত, যা দুদকের নির্দেশে সরাসরি হস্তান্তর করা হতো।অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, দুদকের এ তৎপরতা কি কেবল রাজনৈতিক বদলির ফল, নাকি এটি একটি নিরপেক্ষ প্রক্রিয়া? ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে ক্ষমতাসীনসহ যেকোনো পক্ষের বিরুদ্ধেই তদন্ত ও জব্দের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।" তিনি আরও জানান, জব্দ করা সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া দীর্ঘ হলেও আদালতের রায়ের ভিত্তিতে তা রাষ্ট্রের অনুকূলে নেওয়া যায়।তিনি সুপারিশ করেন, দুদক যাতে অধিক কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে, সে লক্ষ্যে জব্দকৃত সম্পদের ১০ শতাংশ কমিশনের জন্য বরাদ্দ রাখা যেতে পারে, যা সংস্থাটিকে আর্থিকভাবে স্বাধীন ও তৎপর করে তুলবে।

সম্পর্কিত ট্যাগ :

মন্তব্য (০)

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না. প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে *

সম্পর্কিত খবর