সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে রাতের আঁধারে ভোটগ্রহণের বিষয়ে বিস্ফোরক তথ্য দিয়েছেন। তিনি আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে জানান, সরকারের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সহায়তায় রাতেই ব্যালট বাক্স পূর্ণ করা হয়েছিল।মঙ্গলবার ঢাকার একটি আদালতে ‘স্বেচ্ছায়’ জবানবন্দি দেন সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেন, “যখন দেখলাম অনেক কেন্দ্রে ৯০ থেকে ১০০ শতাংশ ভোট পড়েছে, তখনই বুঝে যাই—দিনের ভোট আসলে আগেই শেষ হয়ে গেছে, সেটাও রাতে।”সরকারের চাপ ও ভোট ডাকাতির অভিযোগজবানবন্দিতে নূরুল হুদা বলেন, “২০১৮ সালের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছে। তাদের সমর্থিত কর্মীবাহিনী পুলিশের সহায়তায় ব্যালট বাক্স রাতেই ভরেছে। আমরা কমিশনের লোকেরা অনেকটাই অন্ধকারে ছিলাম।”তিনি আরও বলেন, “অনেক কেন্দ্রে ভোটের হার ছিল ৯০ থেকে ১০০ শতাংশ, যা সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক। এসব অনিয়ম আমার নজরে এলেও গেজেট প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পর আমার কিছুই করার ছিল না।”সচিবের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেনসাবেক সিইসি অভিযোগ করেন, “তৎকালীন ইসি সচিব হেলালুদ্দীন মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের ওপর সরকারপন্থী
প্রভাব বিস্তার করেন। তিনি প্রশাসনের লোকদের প্রভাবিত করে নির্বাচন কমিশনকে পাশ কাটিয়ে অনিয়ম করতে সহায়তা করেছেন।”তিনি এ-ও জানান, রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসাররা দায়িত্বে থেকেও কমিশনের নির্দেশনা উপেক্ষা করেন, আর গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আগে থেকেই মাঠ দখলে রাখে।আত্মীয় প্রার্থীর প্রসঙ্গেও স্পষ্ট বক্তব্যজবানবন্দিতে নিজের ভাগিনা এসএম শাহজাদা সাজুকে নিয়ে প্রশ্ন উঠলে নূরুল হুদা বলেন, “সে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল, কিন্তু আমি কোনোভাবেই তার প্রচারে বা নির্বাচনে যুক্ত ছিলাম না। তবে যেহেতু সে আমার আত্মীয়, কিছুটা প্রাধান্য পেয়েছিল, এটাও অস্বীকার করছি না।”রিমান্ড ও মামলার অগ্রগতিউল্লেখ্য, বিএনপির করা রাষ্ট্রদ্রোহ ও ভুয়া নির্বাচনের অভিযোগে ২২ জুন কে এম নূরুল হুদাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর দুই দফায় মোট আটদিনের রিমান্ডে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। মঙ্গলবার রিমান্ড শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমান তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন, এরপর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এদিকে, ২৫ জুন আরেক সাবেক সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। তিন দিনের রিমান্ড শেষে তাকেও কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মন্তব্য (০)