সীমান্তঘেঁষা গ্রামে বুনো ময়ূরের উপস্থিতিপঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার দর্জিপাড়া সীমান্তবর্তী গ্রামে প্রায়ই দেখা মেলে বুনো ময়ূরের। মাত্র ৫০০ মিটার দূরেই ভারতের বনাঞ্চল, সেখান থেকেই ময়ূর খাবারের সন্ধানে বাংলাদেশে আসে। যদিও তারা এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা নয়, তবু স্থানীয়রা তাদের বিরক্ত না করায় তারা বারবার ফিরে আসে। আলোকচিত্রীদের চোখে ধরা পড়ছে ময়ূর১১ এপ্রিল ও ৯ মে দুটি ময়ূরের ছবি তুলেছেন আলোকচিত্রী রেজাউল হাফিজ ও হাসান মাহমুদ। বন্ধু ফিরোজ আল সাবাও নিয়মিত ময়ূর দেখার কথা জানিয়েছেন। ২০২২ সাল থেকে প্রতি বছরই এ অঞ্চলে ময়ূরের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে।মধুপুর শালবনে শুরু পুনর্বাসন প্রক্রিয়াগতকাল রোববার মধুপুর শালবনের দোখলা রেঞ্জে পাঁচ জোড়া ময়ূর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। শুরুতে এদেরকে বুনো পরিবেশে অভ্যস্ত করার পর প্রকৃতিতে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। ময়ূর ছাড়ার উদ্বোধন করেন পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট প্রাণিবিদ ড.
রেজা খান। বিলুপ্তির অতীত এবং ফিরে আসার সম্ভাবনাআইইউসিএনের ২০১৫ সালের তালিকায় বাংলাদেশে ময়ূরকে ‘বিলুপ্ত প্রাণী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সর্বশেষ বন্য ময়ূরের দেখা মেলে ১৯৮৩ সালে গাজীপুরের ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানে। এক সময় ঢাকার রমনা পার্ক, সাভার, এমনকি রাজধানীতেও ময়ূর ছিল অতি সাধারণ দৃশ্য। দুই ধরনের ময়ূর, দুই রকম বিলুপ্তিবাংলাদেশে আগে দুই প্রজাতির ময়ূর ছিল—ভারতীয় এবং সবুজ ময়ূর। ভারতীয় ময়ূর ছিল সমতল ভূমিতে, সবুজ ময়ূর বাস করত পার্বত্য চট্টগ্রামে। বর্তমানে দুটোই বিলুপ্ত, তবে সবুজ ময়ূর এখন বিশ্বব্যাপী বিপন্ন হিসেবে তালিকাভুক্ত। বিশেষজ্ঞদের মতামত: বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রয়োজনপাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক বলেন, চিড়িয়াখানা বা প্রজননকেন্দ্রের ময়ূর শত্রু চিনতে পারে না। তাই তাদের বুনো পরিবেশে ছাড়ার আগে ‘শত্রু চেনানো’, রাতে গাছে ওঠার অভ্যাস করানো, এবং ক্যামেরা বা স্যাটেলাইট নজরদারির মাধ্যমে পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। ভবিষ্যতের পরিকল্পনামধুপুর ছাড়াও পঞ্চগড়কে ময়ূর পুনর্বাসনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ভারতীয় সীমান্তের পাশেই থাকা বনাঞ্চল এবং সেখানে ইতিমধ্যে ভারতীয় ময়ূরের চলাচল প্রাকৃতিক অভিযোজনের সুযোগ বাড়াবে।বাংলাদেশে বিলুপ্তপ্রায় ময়ূরকে পুনরায় বনে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ শুরু হয়েছে মধুপুর শালবনে পাঁচ জোড়া ময়ূর ছেড়ে দিয়ে। শত্রু চেনানো, পর্যবেক্ষণ ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ময়ূরকে প্রকৃতিতে ফিরিয়ে আনতে চাইছে বন অধিদপ্তর ও পরিবেশবাদীরা। দীর্ঘমেয়াদি তদারকি ও সঠিক পরিকল্পনায় একদিন হয়তো আবারও শালবনে দৃষ্টিনন্দন ময়ূরের নৃত্য দেখা যাবে।
মন্তব্য (০)