ব্রেকিং নিউজ :

দৃষ্টিকোণ নিউজ একটি নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ অনলাইন সংবাদ মাধ্যম, যা সর্বশেষ সংবাদ ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করে।

আমরা দেশের ও বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ খবর, রাজনীতি, অর্থনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর নির্ভরযোগ্য প্রতিবেদন প্রকাশ করি।

অন্যান্য

সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি: জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের দাবি এবং রাজনৈতিক বিতর্ক

সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি: জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের দাবি এবং রাজনৈতিক বিতর্ক Image সংগৃহীত | ছবি: সংগৃহীত
ইমেইল :

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সংবিধান ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছে, যার কেন্দ্রে রয়েছে জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি চালুর বিষয়টি। তবে এই প্রস্তাবকে ঘিরে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। একদিকে যেমন বিএনপি ও তাদের সমমনা কয়েকটি দল এর বিরোধিতা করছে, অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সংসদের উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ উভয় স্থানেই এই পদ্ধতি চালুর দাবি জানাচ্ছে।পিআর পদ্ধতি কী?বর্তমানে বাংলাদেশে "ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট" (First Past the Post) পদ্ধতি প্রচলিত আছে। এই পদ্ধতিতে একটি আসনে যে প্রার্থী সবচেয়ে বেশি ভোট পান, তিনি জয়ী হন এবং যে দল বেশি আসনে জয়লাভ করে, তারাই সরকার গঠন করে।অন্যদিকে, সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি অনুযায়ী, রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে তাদের প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে সংসদে আসন লাভ করে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো দল মোট ভোটের ১০ শতাংশ পায়, তবে জাতীয় সংসদের ৩০০টি আসনের মধ্যে তারা ৩০টি আসন পাবে। জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন এই পদ্ধতির পক্ষে জোরালো প্রচার চালাচ্ছে।কেন এই বিতর্ক?জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব২৯ জুনের বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সংবিধান সংস্কার কমিশন ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবগুলো একত্রিত করে রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে উপস্থাপন করে। এই প্রস্তাবে জাতীয় সংসদকে নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষ—এই দুই ভাগে বিভক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।নিম্নকক্ষ: এখানে বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন। সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা ৫০ থেকে বাড়িয়ে ১০০ করার এবং শুধু নারী প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে সরাসরি নির্বাচনের প্রস্তাব করা হয়েছে।উচ্চকক্ষ: এখানে ১০০ জন প্রার্থী রাজনৈতিক দলগুলোর সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব হারে মনোনীত হবেন। উচ্চকক্ষের সদস্যরা অর্থবিল বাদে সব ধরনের আইন প্রণয়নে পর্যালোচনা ও পরামর্শ দিতে পারবেন। সংবিধান সংশোধন, জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত চুক্তি এবং যুদ্ধ ঘোষণা সংক্রান্ত বিল উচ্চকক্ষের অনুমোদনের বাধ্যবাধকতার প্রস্তাব করা হয়েছে।দলগুলোর অবস্থানবিএনপি ও সমমনা দলগুলো: তারা সংসদকে দ্বিকক্ষ

বিশিষ্ট করার বিরোধিতা না করলেও, উচ্চকক্ষের নির্বাচন প্রক্রিয়া ও ক্ষমতা নিয়ে মতভিন্নতা পোষণ করেছে। তাদের মতে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন একটি "অবান্তর ধারণা"। তারা নিম্নকক্ষের আসন সংখ্যার অনুপাতে উচ্চকক্ষে আসন নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনি ব্যবস্থা "ঐক্যের পরিবর্তে বিভক্তিমূলক সমাজ এবং অস্থিতিশীল সরকার সৃষ্টির কারণ হতে পারে" এবং এর আড়ালে "ফ্যাসিস্ট পুনর্বাসনের পথ সুগম" হতে পারে।জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন: এই দুটি দল সংসদের উচ্চকক্ষের পাশাপাশি নিম্নকক্ষেও সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি চালুর প্রস্তাব করেছে।জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও এবি পার্টি: এই দলগুলো উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি চালুর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তবে এনসিপি এবং নাগরিক ঐক্যের মতো কিছু দল উচ্চকক্ষের ক্ষমতা এবং নিম্নকক্ষের আসনের অনুপাতে এর গঠন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, যদি নিম্নকক্ষের আসনের অনুপাতে উচ্চকক্ষ গঠিত হয়, তবে এটি নিম্নকক্ষের "রেপ্লিকা" হবে।সংস্কারের প্রতিবন্ধকতানির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. মো. আব্দুল আলীম মনে করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ থাকলে এই সংস্কার বাস্তব রূপ নেবে না। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়াসহ বিশ্বের প্রায় ৯০টি দেশে পিআর পদ্ধতি চালু আছে। এই পদ্ধতির কিছু ইতিবাচক দিক যেমন ভোটের অপচয় কমা এবং ভোটারদের কাছে দলের দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি, তেমনি কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। তার মতে, রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন না এলে এবং দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য না হলে বাংলাদেশে এই পদ্ধতি কার্যকর করা কঠিন হবে।সামনে কী?সংবিধান সংস্কারের সঙ্গে জড়িত এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিতে রাজনৈতিক ঐকমত্য না হলে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার আটকে যেতে পারে। এই পদ্ধতি চালুর নামে নির্বাচন পেছানোর চেষ্টা করা হচ্ছে কিনা, নাকি ছোট দলগুলো আসন বাড়ানোর পথ তৈরি করতে চাইছে—তা নিয়ে বিতর্ক ও আলোচনা চলমান।এই বিতর্কে আপনার কী মতামত? সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি কি বাংলাদেশের জন্য সুফল বয়ে আনবে?

সম্পর্কিত ট্যাগ :

মন্তব্য (০)

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না. প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে *

সম্পর্কিত খবর