টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এক বছরে ১০০ ছক্কা মারার কীর্তি গড়েছেন একজনই—সংযুক্ত আরব আমিরাতের অধিনায়ক মুহাম্মদ ওয়াসিম। এই রেকর্ড তিনি গড়েছেন ২০২৩ সালে, যেখানে নাম নেই ক্রিস গেইল, রোহিত শর্মা কিংবা সূর্যকুমার যাদবদের মতো বিশ্বসেরা তারকাদের।সম্প্রতি বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজেও ঝড় তুলেছেন এই বিধ্বংসী ওপেনার। প্রথম ম্যাচে করেন ৩৯ বলে ৫৪ রান, আর দ্বিতীয় ম্যাচে ৪২ বলে বিধ্বংসী ৮২ রান, যেটি আমিরাতের ঐতিহাসিক জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে। ওয়াসিমের পরিসংখ্যানে লুকিয়ে আছে বাংলাদেশের সান্ত্বনাযদি কেউ প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশের বোলারদের কী দোষ? তাহলে জবাব হতে পারে—ওয়াসিম তো সবাইকেই পেটান!২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশি রান ওয়াসিমেরই—৬৭ ইনিংসে ২৫০৪ রান, গড় প্রায় ৪০। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সূর্যকুমার যাদবের রান ২৩৫৪, যদিও তিনি খেলেছেন ৭০ ইনিংস।এই সময়ে সবচেয়ে বেশি ছক্কার মালিকও ওয়াসিম—১৫৯টি। সূর্য রয়েছেন দ্বিতীয় স্থানে, ১৩৪টি ছক্কা নিয়ে।বাংলাদেশের পক্ষে এই সময়ে সবচেয়ে বেশি রান লিটন দাসের—১২২৭, আর অবস্থান ২৮তম। ছক্কা মারার খেলায় পিছিয়ে বাংলাদেশটি-টোয়েন্টিতে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য দরকার শক্তিমত্তা, সাহস এবং ছক্কা মারার সামর্থ্য। বাংলাদেশ সেই জায়গাতেই পিছিয়ে। অন্তত ২০০ রান করেছেন এমন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেট মাশরাফি বিন মর্তুজার—১৩৬.১০। অথচ তিনি মূলত একজন বোলার!বর্তমান স্কোয়াডে থাকা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেট রিশাদ হোসেনের—১৩৪.১৮। অথচ তারও মূল ভূমিকা ব্যাটিং নয়!অপরদিকে ওয়াসিমের স্ট্রাইক রেট ১৫৬.
১২—এটি যে কোনো আন্তর্জাতিক ব্যাটসম্যানের জন্য ঈর্ষণীয়। সম্ভাবনার পরিসংখ্যানে ধরা পড়ে সীমাবদ্ধতাদ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ১৬ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ছিল ১৬০/২। হাতে ছিল ৮ উইকেট, কিন্তু শেষ ৪ ওভারে এসেছে মাত্র ৪৫ রান। এর মধ্যে মাত্র দুটি ছক্কা ও চারটি চার—যা এই ফরম্যাটে অনেকটাই অপ্রত্যাশিত।প্রথম ম্যাচেও ১০ ওভারে ১০৩ রান তোলার পর বাংলাদেশের ফাইনাল স্কোর দাঁড়ায় ১৯১। অথচ ব্যাকড্রপ ছিল ২২০–২৩০ রানের। ওয়াসিম বনাম বিশ্ব ও বাংলাদেশের বাস্তবতাতর্ক থাকতে পারে, ওয়াসিম খেলেছেন ওমান, হংকং, নেপালের মতো তুলনামূলক দুর্বল দলের বিপক্ষে। কিন্তু টি-টোয়েন্টি তো এমনই এক ফরম্যাট, যেখানে ব্যাটসম্যানের ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা ও শারীরিক সামর্থ্যই বড় কথা।ওয়াসিমের দুটি সেঞ্চুরি—একটি আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে, আরেকটি ওমানের বিরুদ্ধে। তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশও দুটি সেঞ্চুরি পেয়েছে—তামিমের ওমানের বিপক্ষে এবং পারভেজ হোসেনের আমিরাতের বিপক্ষে। কাজেই পরিপ্রেক্ষিত বিশ্লেষণে ওয়াসিমের কৃতিত্বকে ছোট করা যাবে না। সমস্যা কি মানসিকতায়?বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের টেকনিক বা ক্লাস হয়তো ওয়াসিমের চেয়ে ভালো। কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে সবসময় এসবই সব নয়। ছক্কা মারার সাহস, শরীরী ভাষা ও মানসিকতা পার্থক্য গড়ে দেয়।ওয়াসিম বড় হয়ে উঠেছেন পাকিস্তানের টেপ টেনিস সংস্কৃতিতে, যেখানে প্রতিদিনই শিখতে হয় ছক্কা মারা। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা কবে, কীভাবে এই সাহস অর্জন করবেন—সেটাই বড় প্রশ্ন।সংক্ষিপ্ত তথ্য (Quick Stats): ওয়াসিম: ৬৭ ইনিংসে ২৫০৪ রান, ১৫৯ ছক্কা, স্ট্রাইক রেট ১৫৬.১২ বাংলাদেশ: সর্বোচ্চ রান লিটন দাস (১২২৭), সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেট মাশরাফি (১৩৬.১০) ওয়াসিমের চেয়ে সূর্যকুমার যাদবের ইনিংস বেশি, রান কম দুই ম্যাচেই বাংলাদেশের সম্ভাব্য সংগ্রহ থেকে অন্তত ২০ রান কম
মন্তব্য (০)