জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানালেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তিনি মনে করেন, স্থানীয় নির্বাচন আগে হলে রাজনৈতিক ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জনসম্পৃক্ততা বাড়বে।সোমবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত একটি পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন। এতে তিনি স্থানীয় নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাব্য তিনটি উপকারিতার কথা তুলে ধরেন, এবং পরিষ্কার করেন যে, এটি জাতীয় নির্বাচন পেছানোর প্রস্তাব নয়। ‘জাতীয় নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র নয়’—সাফ জানালেন সারজিসসারজিস আলম বলেন, “আমরা আগে স্থানীয় নির্বাচনের কথা বলছি, যাতে কেউ এটাকে জাতীয় নির্বাচন পেছানোর কৌশল ভাববেন না। প্রয়োজনে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে দেওয়া হোক—আমাদের তাতে আপত্তি নেই।”তিনি এ বক্তব্য দিয়েছেন এমন সময়ে, যখন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে চলছে টানা বিক্ষোভ ও নগর ভবনে তালা ঝুলিয়ে অবস্থান কর্মসূচি। তিনটি বড় উপকারিতার কথা বললেন সারজিসসারজিস আলম তাঁর পোস্টে স্থানীয় নির্বাচন আগে আয়োজন করলে কী কী সুবিধা হতে পারে, তা তিনটি দিক থেকে ব্যাখ্যা করেন— জনসেবা পুনরায় সচল হবে: বর্তমানে স্থানীয় সরকার পর্যায়ের অনেক অফিসে জনপ্রতিনিধির অভাব রয়েছে। নির্বাচনের মাধ্যমে সেই শূন্যতা পূরণ হলে জনগণ আবার প্রয়োজনীয় সেবা পাবে। জাতীয় নির্বাচনের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে ‘লিটমাস টেস্ট’: স্থানীয় নির্বাচন নির্বাচন কমিশন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা যাচাইয়ের মঞ্চ হতে পারে। এতে করে জাতীয় নির্বাচনের আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পরীক্ষা ও প্রয়োজনীয় সংশোধন করার সুযোগ মিল

বে। ‘মাই ম্যান’ নয়, জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ: সারজিসের মতে, ক্ষমতাসীনদের দ্বারা মনোনীত নয় বরং সাধারণ মানুষের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই এই প্রক্রিয়ায় সামনে আসবেন। কারণ এই নির্বাচন অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে অনুষ্ঠিত হলে দলীয় প্রভাব comparatively কম থাকবে।  ইশরাকসহ যোগ্য প্রার্থীদের জন্য সুযোগ তৈরির প্রস্তাব“যদি আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়, তবে ইশরাক ভাইয়ের মতো যোগ্য প্রার্থীরা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে নির্বাচিত হতে পারবেন,”—পোস্টে উল্লেখ করেন সারজিস। তিনি বিশ্বাস করেন, এটি রাজনৈতিক সমতা ও গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তি গড়বে। জনপ্রিয়তা নির্ধারণে সাহায্য করবে স্থানীয় নির্বাচনতিনি আরও বলেন, “বিএনপি বর্তমানে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল, তাদের সমর্থকও সবচেয়ে বেশি। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় যে প্রতিনিধিরা নির্বাচিত হবেন, তারা হবেন দলের ভেতরের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় ব্যক্তি। এতে করে দলবাজ, তেলবাজ বা সিন্ডিকেট-নির্ভর চাঁদাবাজরা ক্ষমতার আসনে বসতে পারবে না।” এনসিপি আহ্বায়কের চারদফা বার্তাসারজিস আলমের পোস্টের কিছুক্ষণ পরই এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করে একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লেখেন— “জুলাই ঘোষণাপত্র, জুলাই সনদ, স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও গণপরিষদ নির্বাচন।” জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়ছে, ঠিক সেই সময়েই সারজিস আলমের এই প্রস্তাব একটি আলাদা দৃষ্টিভঙ্গির জানালা খুলে দেয়। জাতীয় নির্বাচন যাতে আরও বিশ্বাসযোগ্য, কার্যকর ও গণমুখী হয়, তার জন্য স্থানীয় নির্বাচন আগে আয়োজনের ভাবনাটি নতুন আলোচনার জন্ম দিতে পারে।