বাংলাদেশের তরুণ সমাজের একটি বড় অংশ ভবিষ্যতে রাজনীতিতে জড়িত হওয়ার বিষয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) ও অ্যাকশনএইড পরিচালিত সাম্প্রতিক এক জরিপে উঠে এসেছে এই তথ্য।জরিপে অংশ নেওয়া তরুণদের ৮২ দশমিক ৭ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা ভবিষ্যতে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে চান না। জরিপটি মূলত জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান বিষয়ে তরুণদের ভাবনা বোঝার জন্য পরিচালিত হয়।রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তরুণদের দূরত্ব৩৪ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, দেশের প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তরুণদের সম্পর্ক 'অকার্যকর', আর ১৬ দশমিক ১ শতাংশ মনে করেন, এই সংযোগ ‘খুবই অকার্যকর’।তরুণদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা বাড়াতে উত্তরদাতারা যে কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন, তার মধ্যে রয়েছে— ছাত্র বা যুব সংগঠনের কার্যক্রমে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে তরুণদের অংশগ্রহণ বাড়ানো প্রান্তিক যুবকদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা দলীয় এজেন্ডায় যুবকেন্দ্রিক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয়তা বৃদ্ধি করা জরিপ পদ্ধতি ও অংশগ্রহণকারীরাজরিপটির ফলাফল ঢাকার মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টার ইন-এ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়। তথ্য সংগ্রহের সময়কাল ছিল ২০ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত। মিশ্র পদ্ধতিতে—পরিমাণগত জরিপ ও গুণগত সাক্ষাৎকার—তথ্য সংগ্রহ করা হয়।পরিমাণগত অংশে ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ২ হাজার তরুণ-তরুণী অংশ নেন, যেখানে নারী ও পুরুষের অনুপাত ছিল সমান। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে কমপক্ষে ১০ শতাংশ ছিলেন অমুসলিম, এবং জরিপটি দেশের আট বিভাগের ১৬টি জেলায় পরিচালিত হয়।গুণগত সাক্ষাৎকারে ১৭টি কেস স্টাডি নেওয়া হয়, যার মাধ্যমে বিভিন্ন পেশা, ধর্ম এবং প্রত্যাশার তরুণদের মতামত জানার চেষ্টা করা হয়।নির্বাচনী আশা ও তরুণদের দৃষ্টিভঙ্গিআগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না—এমন প্রশ্নে ৪০ দশমিক ৮৯ শতাংশ তরুণ বলেছেন, তারা মোটামুটি আশাবাদী। ২৭ দশমিক ৯১ শতাংশ ‘খুবই আশাবাদী’ এবং ১১ দশমিক ৯৩ শতাংশ ‘সম্পূর্ণ আশাবাদী’। অন্যদিকে ৬ শতাংশ তরুণ সম্পূর্ণ হতাশ।তরুণদের ওপর ভিত্তি করে গঠিত রাজনৈতিক দলগুলো প্রথাগত দলের চেয়ে বেশি ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে কি না—এই প্রশ্নে ৪২ দশমিক ১৪ শতাংশ তরুণ আশাবাদী, এবং ৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ ‘খুবই আশাবাদী’।রাজনীতির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ৫৬ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, এটি ধাপে ধাপে সংস্কারের মাধ্যমে উন্নত হতে পারে। তবে ১৩ দশমিক ১ শতাংশ মনে করেন, কোনো সংস্কার
না হলেও অবস্থা অপরিবর্তিত থাকবে।রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক চর্চার উন্নতি হবে কি না—এমন প্রশ্নে ৩৮ দশমিক ২৪ শতাংশ কিছুটা উন্নতির সম্ভাবনা দেখেন, আর ১০ দশমিক ৪৩ শতাংশ মনে করেন নিশ্চিতভাবেই উন্নতি হবে।কাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক সংস্কারজরিপে অংশ নেওয়া তরুণদের মধ্যে— ৬০ শতাংশ রাজনৈতিক সহিংসতা, স্বজনপ্রীতি ও পৃষ্ঠপোষকতার অবসান চান ৫৪ শতাংশ চান নিয়মিত অভ্যন্তরীণ নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক কাঠামো ৫২ দশমিক ৭ শতাংশ চান নীতিনির্ভর রাজনীতির বিস্তার ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশ চান দলীয় তহবিল ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বচ্ছতা ৪৩ দশমিক ৬ শতাংশ চান, তরুণ ও নারীদের নেতৃত্বে অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি তথ্যের উৎস ও রাজনৈতিক সচেতনতাজাতীয় রাজনীতি সম্পর্কে ১৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ পুরুষ এবং ২৪ দশমিক ২৭ শতাংশ নারী তরুণ একেবারেই অসচেতন। আঞ্চলিক রাজনীতির বিষয়ে ১২ দশমিক ৩৮ শতাংশ পুরুষ ও ১৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ নারী কোনো ধারণা রাখেন না।রাজনৈতিক তথ্য পাওয়ার উৎস হিসেবে— ৮৭ দশমিক ৪ শতাংশ তরুণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করেন ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ টেলিভিশন ১৩ শতাংশ সংবাদপত্র মাত্র ১ দশমিক ৪ শতাংশ রেডিওর ওপর নির্ভরশীল ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিয়ে মতামতধর্মভিত্তিক রাজনীতি দেশের উন্নয়নে সহায়ক কি না—এমন প্রশ্নে ৪৮ দশমিক ২৩ শতাংশ ‘হ্যাঁ’ বলেছেন, আর ৫১ দশমিক ৭৭ শতাংশ ‘না’ বলেছেন। মুসলিম তরুণদের ৫৮ দশমিক ১৪ শতাংশ ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে উন্নয়নের অনুকূল মনে করেন অন্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে মাত্র ১২ দশমিক ২৩ শতাংশ একই মত পোষণ করেন ধর্মভিত্তিক দলের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি নিয়ে ৩৮ দশমিক ৩ শতাংশ তরুণ উদ্বিগ্ন, এবং ৮ দশমিক ৯ শতাংশ ‘খুবই উদ্বিগ্ন’। তবে ৩০ শতাংশ তরুণ নিরপেক্ষ বা মাঝে মাঝে উদ্বিগ্ন।ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতাবর্তমান পরিস্থিতিতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা নিরাপদ কি না—এমন প্রশ্নে ৭৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ তরুণ ‘হ্যাঁ’ বলেছেন। মুসলমানদের মধ্যে ৮৪ শতাংশ এবং অন্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে ৪৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ নিরাপত্তা অনুভব করেন।ধর্ম পালনে স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা রয়েছে কি না—এমন প্রশ্নে: ৩৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ তরুণ বলেছেন, ‘খুবই নিরাপদ’ ২৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ বলেছেন, ‘নিরাপদ’ অন্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে ৩৯ দশমিক ২১ শতাংশ বলেন, তাঁরা ভয় বা বিধিনিষেধ ছাড়াই ধর্ম পালন করতে পারেন না ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ মনে করেন, তাঁরা ‘খুবই অনিরাপদ’
মন্তব্য (০)