ফুটবল দুনিয়া সাক্ষী হলো এক আবেগঘন ও হতাশাজনক মুহূর্তের, যেখানে একই রাতে বিদায় নিলেন যুগের দুই সেরা মহাতারকা—ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও লিওনেল মেসি।শেষ বাঁশির শব্দটা যেন ছিল রোনালদোর জন্য এক নিঃশব্দ পরাজয়ের বার্তা। ৪০ বছর বয়সী এই পর্তুগিজ মহাতারকা দাঁড়িয়ে ছিলেন মাঠের কেন্দ্রচক্রে, চোখে-মুখে গভীর হতাশার ছায়া। হঠাৎ করেই আকাশের দিকে তাকালেন, হাত নেড়ে কিছু বললেন—মনে হচ্ছিল, নিজের ভেতরের ক্ষোভ ও ভাগ্যের কাছে জবাব খুঁজছিলেন।রোনালদোর ফুটবল যাত্রা যতই দীর্ঘ হোক না কেন, জয়ের ক্ষুধা এখনো অটুট। কিশোর বয়সে যেমন হার মানতে কষ্ট হতো, চল্লিশেও তার অনুভূতি একই রকম। ম্যাচ শেষে অধিনায়কের আর্মব্যান্ড খুলতে খুলতে যখন মাঠ ছাড়ছিলেন, সেই দৃশ্য রোনালদো-ভক্তদের হৃদয়ে নাড়া দিয়েছিল। এক পূর্ণবয়স্ক প্রতিযোগী, যার ভেতরে আজও বেঁচে আছে এক আবেগময় কিশোর।ফুটবল এমনই—নির্মম, তবু হৃদয়ছোঁয়া। কিংবদন্তিরাও এখানে হার মানে।আরেকপ্রান্তে ছিলেন লিওনেল মেসি। যুক্তরাষ্ট্রের চেজ স্টেডিয়ামে ম্যাচ শেষে তাঁর চোখেও ধরা পড়েছে গভীর হতাশা। ৩৮ বছর বয়সেও মেসির চোখে ছিল হার না মানার সেই চিরচেনা আগুন। হার মানলে, দল বিদায় নিলে আজও তার মুখে ফুটে ওঠে এক শিশুসুলভ কষ্টের ছায়া। তার কিংবদন্তি হয়ে ওঠার পেছনে এই জয়ের তৃষ্ণাটাই যে সবচেয়ে বড় ইন্ধন!কিন্তু ফুটবল রসিকতায় কম যায় না। বাংলাদেশ সময় এক রাত ও এক সকালেই দুই মহাতারকা বাদ পড়েছেন মহাদেশীয় দুই ভিন্ন টুর্নামেন্ট থেকে।রাত ১২:৩০টায় এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে আল নাসর ৩–২ গোলে হারে জাপানের কাওয়াসাকি ফ্রন্তেলের কাছে। এটাই ছিল রোনালদোর টুর্নামেন্ট থেকে বিদায়ের ক্ষণ।অন্যদিকে, যারা রোনালদোর ম্যা
চ দেখে ঘুমিয়ে ভোরে উঠে মেসির খেলা দেখতে বসেছিলেন, তাঁদের জন্য দিনটা যেন দুইবার ভেঙে পড়ার গল্প। সকাল ৬:৩০টায় কনক্যাকাফ চ্যাম্পিয়নস কাপের সেমিফাইনালে মায়ামি হেরে যায় ভ্যাঙ্কুভারের কাছে ৩–১ গোলে। দুই লেগ মিলিয়ে ৫–১ গোলে পরাজিত হয়ে বিদায় নেয় মেসির দল ইন্টার মায়ামি।রোনালদোর পরাজয়ে আরও আক্ষেপ ছিল একটি মুহূর্তে। ৯৫ মিনিটে একেবারে নিশ্চিত গোলের সুযোগ পেয়েও লক্ষ্যভেদ করতে ব্যর্থ হন তিনি। একা পেয়েও কাওয়াসাকির গোলরক্ষকের সামনে গোল করতে না পারায় হতাশায় মাঠেই দাঁড়িয়ে ছিলেন নিজেকে নিয়ে প্রশ্নে নিমগ্ন।২০২২ সালে আল নাসরে যোগ দেওয়ার পর থেকে এখনো পর্যন্ত বড় কোনো শিরোপার স্বাদ পাননি রোনালদো। এই মৌসুমও গেল নিরাশায়। তবে হাল ছাড়েননি। ম্যাচ শেষে এক্স হ্যান্ডলে রোনালদো লেখেন,“কখনো কখনো স্বপ্নকে অপেক্ষা করতে হয়। আমি এই দল এবং পারফরম্যান্স নিয়ে গর্বিত।”অন্যদিকে, প্রথম লেগে ২–০ গোলে পিছিয়ে থাকা মায়ামি দ্বিতীয় লেগের ৯ মিনিটেই এগিয়ে যায় জর্দি আলবার গোলে। লুইস সুয়ারেজের সহায়তায় মেসির পাস থেকে তৈরি হয় সেই গোলের সুযোগ। কিন্তু বিরতির পরেই ভ্যাঙ্কুভার তিনটি গোল করে ম্যাচ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। মেসি একাধিক সুযোগ পেলেও তা কাজে লাগাতে পারেননি।ফুটবল পরিসংখ্যানভিত্তিক সংস্থা অপ্টা জ্যাক জানিয়েছে, লিওনেল মেসির বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচেই জিতে ইতিহাস গড়েছে ভ্যাঙ্কুভার হোয়াইটক্যাপস।শেষ কথায়একই দিনে দুই মহাতারকার বিদায় নিঃসন্দেহে ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়ে এক দগদগে ক্ষত। তবে এটিও সত্য, রোনালদো ও মেসির মতো কিংবদন্তিরা পরাজয়েও অনুপ্রেরণা হয়ে থাকেন। সময়ের নিয়মে তারা হার মানলেও, স্মৃতির পাতায় তাদের উজ্জ্বলতা অমলিন থাকবে চিরকাল।
মন্তব্য (০)