সম্প্রতি ইউটিউব প্ল্যাটফর্মে ভুয়া টক শো’র বিস্তার আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে, যা সাধারণ দর্শকদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দিচ্ছে। খণ্ড খণ্ড ভিডিও ক্লিপ জোড়া দিয়ে তৈরি এই ভুয়া অনুষ্ঠানগুলোতে রাজনীতিবিদ, উপস্থাপক ও বিশ্লেষকদের কথোপকথনের মতো করে উপস্থাপন করা হচ্ছে, অথচ আসলে এগুলো সম্পূর্ণভাবে সাজানো ও মনগড়া।একটি ভিডিওতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ভারতে আশ্রয় নেওয়া শেখ হাসিনা, এবং পরিচিত সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীনকে একসঙ্গে একটি ভার্চুয়াল টক শোতে দেখা যায়। বাস্তবে তারা কখনো একসঙ্গে কোনো আলোচনায় অংশ নেননি। ভিডিওটি কৃত্রিমভাবে বিভিন্ন উৎস থেকে ক্লিপ সংগ্রহ করে তৈরি করা হয়েছে, যেখানে দেখা যায় খালেদ মুহিউদ্দীন প্রশ্ন করছেন, শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের আগস্টে ক্ষমতা হারানো নিয়ে কী ভাবছেন। অথচ কিছুক্ষণের মধ্যেই বোঝা যায়, ভিডিওর চিত্র-শব্দ মিলছে না, অঙ্গভঙ্গি বারবার একই রকম, এবং মুখভঙ্গি বিকৃত।তথ্যপ্রযুক্তি ও মিডিয়া গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ডিজিটালি রাইট’–এর ভেরিফিকেশন প্ল্যাটফর্ম ডিসমিসল্যাব এই ভুয়া ভিডিওগুলো নিয়ে বিশ্লেষণ চালিয়েছে। তারা বলছে, ইউটিউবে প্রচারিত ২৮৮টি ভিডিও পর্যালোচনায় প্রায় সব ভিডিওতেই মূল বক্তব্যগুলোকে কাটাছেঁড়া করে ভিন্ন প্রসঙ্গে উপস্থাপন করা হয়েছে। গড়ভাগে প্রতিটি ভিডিও ১২ হাজারের বেশি বার দেখা হয়েছে।ডিসমিসল্যাবের মতে, এইসব ভুয়া কনটেন্টে ইউটিউব বিজ্ঞাপন দেখায়, যার ফলে ভিডিও নির্মাতারা যেমন আয় করে, ইউটিউবও লাভবান হয়, যদিও
এসব কনটেন্ট ইউটিউবের নিজস্ব গাইডলাইন লঙ্ঘন করে।ডিজিটালি রাইটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরাজ আহমেদ চৌধুরী জানান, “এ ধরনের ভিডিও মানুষকে বিভ্রান্ত করে এবং সমাজে বিভাজনের সৃষ্টি করে। রাজনীতি ও গণতন্ত্রের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।”উল্লেখযোগ্য যে, একটি ভুয়া ভিডিও চলতি মাসের মধ্যেই ফেসবুকে ২ লাখের বেশি বার দেখা হয়েছে, এবং একই ভিডিও ‘টক শো ফার্স্ট নিউজ’ নামের ইউটিউব চ্যানেলে ১ লাখ ৩৫ হাজারবার দেখা হয়েছে। উক্ত চ্যানেলটিতে এমন আরও একাধিক ভিডিও রয়েছে, যেগুলো একইভাবে বিকৃত করে বানানো হয়েছে।সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীনের আসল চ্যানেল ‘ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন’ হলেও, তার চেহারা ও নাম ব্যবহার করে ভুয়া টক শো তৈরি করা হচ্ছে। ডিসমিসল্যাবের গবেষণায় দেখা যায়, ‘খালেদ মুহিউদ্দীন টক শো’ নামে ইউটিউবে সার্চ দিলে কমপক্ষে ৫০টি চ্যানেল পাওয়া যায়, যেগুলোতে তার নাম ও ফুটেজ ব্যবহার করে ভুয়া ভিডিও তৈরি করা হয়েছে।২৫ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত চালানো গবেষণায় দেখা গেছে, এই চ্যানেলগুলোর মধ্যে ২৯টি অন্তত একটি ভুয়া ভিডিও প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে ২০টি চ্যানেল তৈরি হয়েছে ২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর, আর বাকিগুলো ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে।এছাড়া ডিসমিসল্যাব জানায়, এই ভিডিওগুলোর মাধ্যমে অন্তত ৫৮ জন রাজনীতিক, সাংবাদিক ও উপস্থাপকের বক্তব্য ও মুখাবয়ব বিকৃত করা হয়েছে, যা কেবল ব্যক্তিগত সম্মানহানি নয়, সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্যও হুমকিস্বরূপ।
মন্তব্য (০)