ব্রেকিং নিউজ :

দৃষ্টিকোণ নিউজ একটি নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ অনলাইন সংবাদ মাধ্যম, যা সর্বশেষ সংবাদ ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করে।

আমরা দেশের ও বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ খবর, রাজনীতি, অর্থনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর নির্ভরযোগ্য প্রতিবেদন প্রকাশ করি।

অন্যান্য

ফিরছে স্টিমার! বরিশালের নদীপথে আবার বাজবে স্মৃতিময় হুইসেল

ফিরছে স্টিমার! বরিশালের নদীপথে আবার বাজবে স্মৃতিময় হুইসেল Image সংগৃহীত | ছবি: ফাইল ছবি
ইমেইল :

বরিশাল, এক সময়ের নদীমাতৃক জনপদ, যেখানে মানুষের জীবন ও যাত্রার সাথে জড়িয়ে ছিল স্টিমারের ছলাৎ ছলাৎ শব্দ। সেই ঐতিহাসিক স্টিমার ২০২২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বন্ধ হয়ে যায়, থেমে যায় দেড় শতাব্দীর জলযাত্রার এক অধ্যায়। তবে এবার সেই স্মৃতিময় যাত্রা আবারও ফিরে আসছে—নতুন আশার আলো নিয়ে।গত শনিবার, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বরিশালবাসীকে জানান এক সুখবর—আবার চালু হচ্ছে স্টিমারসেবা। তাঁর ঘোষণায় যেন নগরের বাতাসে ফিরে এসেছে পুরোনো সেই হুইসেলের ধ্বনি, স্টিমারের ছন্দ, আর যাত্রার আনন্দ। স্টিমার: শুধু বাহন নয়, ছিল এক সংস্কৃতিস্টিমার ছিল একপ্রকার ভাসমান প্রাসাদ—কাঠের দোতলা কাঠামো, প্রশস্ত বারান্দা, ঐতিহ্যবাহী আসবাব, আর বিশাল প্যাডেল হুইলযুক্ত। প্রথম দিকে কয়লা দিয়ে চালানো হতো, পরে ডিজেল চালিত হয়।এর বিপরীতে, লঞ্চ হলো আধুনিক সময়ের প্রতিনিধিত্বকারী নৌযান, বহুতল ও দ্রুতগতিসম্পন্ন। কিন্তু লঞ্চ যতটা বাস্তব, স্টিমার ততটাই রোমান্টিক ও স্মৃতিভরা। এক ইতিহাসের শুরু ও নিঃশব্দ পতন১৮৮৪ সালে ব্রিটিশ আমলে প্রথম চালু হয় কয়লাচালিত স্টিমার।ঢাকা থেকে খুলনা পর্যন্ত চলত স্টিমার, মাঝপথে যাত্রাবিরতি হতো বরিশাল, ঝালকাঠি, মোরেলগঞ্জ, হুলারহাট প্রভৃতি ঘাটে।এক সময়ের ‘পিএস গাজী’, ‘পিএস মাহসুদ’, ‘পিএস অস্ট্রিচ’—এসব স্টিমার হয়ে ওঠে নদীমাতৃক সংস্কৃতির অমূল্য নিদ

র্শন।কিন্তু সড়ক যোগাযোগ উন্নয়ন, পদ্মা সেতু, লঞ্চ মালিকদের দৌরাত্ম্য ও জ্বালানি সংকট এই ঐতিহ্যকে ধ্বংস করে দেয়।২০১৯ সাল থেকে সীমিত পরিসরে চললেও, ২০২২ সালে সব স্টিমার চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। স্টিমার ফিরিয়ে আনার উদ্যোগনৌপরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চারটি স্টিমার সংস্কার করা হচ্ছে। এর মধ্যে ‘পিএস অস্ট্রিচ’ ও ‘পিএস মাহসুদ’ চলবে ঢাকা-বরিশাল রুটে পর্যটকদের জন্য, আর ‘পিএস লেপচা’ ও ‘পিএস টার্ন’ সংরক্ষিত হবে ঐতিহ্য হিসেবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী ৫-৬ মাসের মধ্যেই দুটি স্টিমার চালু হবে। বিআইডব্লিউটিসির তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রামে জাহাজ নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে, এখন শুধু সার্ভে রিপোর্টের অপেক্ষা। জনসাধারণ ও বিশেষজ্ঞদের প্রতিক্রিয়াবরিশাল বিএম কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক শাহ সাজেদা বলেন,"স্টিমারে ভ্রমণের কত স্মৃতি আমাদের। বাতাসে ভেসে আসত হুইসেলের শব্দ—সেই অনুভূতির তুলনা নেই।"বরিশাল যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক দেওয়ান আবদুর রশিদ বলেন,"এই ঐতিহাসিক নৌযানগুলোকে ভাসমান জাদুঘরে রূপান্তর করতে হবে। এটি আমাদের সাংস্কৃতিক পরিচয় ও জীবন্ত ইতিহাসের অংশ।"বরিশালের নদীপথে আবারও বাজবে স্টিমারের হুইসেল, ফিরে আসবে স্মৃতিঘেরা দিনগুলো। স্টিমার শুধু যানবাহন নয়, এটি এক ঐতিহ্য, আবেগ ও সংস্কৃতির প্রতীক—যার ফেরাটা হবে বরিশালবাসীর জন্য এক গর্বের পুনর্জন্ম।

সম্পর্কিত ট্যাগ :

মন্তব্য (০)

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না. প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে *

সম্পর্কিত খবর