আজ ১২ মে, আধুনিক নার্সিংয়ের পথিকৃৎ ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল-এর জন্মদিন উপলক্ষে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নার্স দিবস। দিনটি বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও গুরুত্বের সঙ্গে পালিত হচ্ছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য—“আমাদের নার্স, আমাদের ভবিষ্যৎ, নার্সিং পেশার উন্নতি, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি”। বাংলাদেশে নার্স সংকট ভয়াবহ রূপ নিয়েছে দেশে বর্তমানে ১ লাখ ২ হাজার ৯৯৭ জন চিকিৎসকের বিপরীতে নার্স আছেন মাত্র ৭৬ হাজার ৫১৭ জন। অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, একজন চিকিৎসকের অনুপাতে কমপক্ষে তিনজন নার্স থাকা জরুরি। এই হিসেবে দেশে নার্সের ঘাটতি প্রায় ২ লাখ ৩২ হাজার ৪৭৪ জন। এই সংকটের ফলে—রোগীরা সঠিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।চিকিৎসাসেবার গতি ব্যাহত হচ্ছে। যোগ্যতা থাকলেও নেই সম্মান ও পদোন্নতিবর্তমানে বহু নার্স মাস্টার্স, এমপিএইচ, পিএইচডি-সহ উচ্চতর ডিগ্রিধারী হলেও—অধিকাংশ স্টাফ নার্স পদেই কর্মজীবন শুরু ও শেষ করছেন।৯০ ভাগ নার্স অবসর নিচ্ছেন কোনো পদোন্নতি ছাড়াই।পদোন্নতিতে রয়েছে চরম বৈষম্য ও দীর্ঘসূত্রতা।এই পরিস্থিতিতে নার্সদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা দিন দিন বাড়ছে। ফিরে পেতে চান ঐতিহ্যের সাদা পোশাকনার্সদের ঐতিহ্যবাহী সাদা পোশাক বদলে ফেলা হয় গত সরকারের সময়ে।বর্তমানে ব্যবহৃত জলপাই রঙের পোশাক নিয়ে রয়েছে নার্সদের তীব্র আপত্তি। সাদা রঙ পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার প্রতীক। রোগীদের কাছেও সাদা পোশাকে নার্সদের উপস্থিতি বেশি পরিচিত ও
স্বস্তিদায়ক। নার্সদের দাবি, ঐতিহ্য রক্ষা ও সম্মান ফিরিয়ে আনতে সাদা পোশাক পুনর্বহাল করা হোক। ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের স্মরণেজন্ম: ১২ মে ১৮২০, ফ্লোরেন্স, ইতালি।নার্সিংকে সমাজে গৌরবজনক পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন।নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেন সেবাকে।১৮৫৩ সালে লন্ডনের একটি হাসপাতালে নারী নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব পালন করেন।তার প্রতি সম্মান জানিয়ে আজকের দিনটি পালিত হয় আন্তর্জাতিক নার্স দিবস হিসেবে। স্বীকৃতি চাই, মর্যাদা চাই — নার্সদের আবেদননার্সদের সংগঠন ন্যাব (নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ)-এর সভাপতি জাহানারা সিদ্দিকী বলেন—"নার্সরা দেশের স্বাস্থ্যসেবায় অমূল্য অবদান রাখলেও তাদের সামাজিক মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা এখনও নিশ্চিত হয়নি।" তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান—সাদা পোশাক পুনরায় চালু করা হোক।পদোন্নতি ও ন্যায্য দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন করা হোক। আশা জাগানিয়া বক্তব্য অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারবর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নার্সবান্ধব মনোভাব পোষণ করেন।তিনি জানিয়েছেন— বাংলাদেশি নার্সদের আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করে বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা হবে। নার্সরা ভবিষ্যতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হতে পারেন।দেশের স্বাস্থ্য খাতের ভরকেন্দ্র হয়ে ওঠা এই মহান পেশাজীবীদের জন্য যথাযথ সম্মান, উন্নয়ন ও সুযোগ নিশ্চিত করাই সময়ের দাবি।
মন্তব্য (০)