শান্তি, শৃঙ্খলা ও সম্প্রীতির আহ্বানসেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, "আমরা হানাহানি, বিদ্বেষ চাই না। মতের ভিন্নতা থাকতেই পারে, কিন্তু শ্রদ্ধাবোধ থাকা চাই সবার প্রতি।" গত ১৩ এপ্রিল রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে ‘সম্প্রীতি ভবন’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সেনাপ্রধান বলেন, "ইনশাআল্লাহ, আমরা সবাই মিলে দেশটিকে শান্তির পথে নিয়ে যাব।"গণ-অভ্যুত্থানের পর সেনাবাহিনীর ভূমিকা৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর সেনাবাহিনী সংবেদনশীল ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে। সেনাপ্রধান স্পষ্ট করে দিয়েছেন, “আমি সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক মাঠে নামতে দেব না।”জাতীয় উৎসব ও ঐক্যের প্রতীকবাংলা নববর্ষে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে তিনি বলেন, “বাংলা নববর্ষ জাতীয় ঐক্য, সংস্কৃতি ও মানবিকতার প্রতীক। এখানে ধর্ম নয়, মানবিকতাই বড়। আমরা সবাই এই মাটির সন্তান।”২০০৯ সালের পিলখানা হত্যাকাণ্ড স্মরণ২৫ ফেব্রুয়ারি শহীদ সেনা দিবসে তিনি বলেন, "মতের ভিন্নতা থাকলেও, দিনের শেষে আমরা যেন দেশের স্বার্থে এক থাকি। তাহলেই দেশ উন্নতির পথে এগোবে।"সামরিক বিশেষজ্ঞদের প্রশংসাসামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে সেনাপ্রধানের ভূমিকা ছিল দূরদর্শী ও সাহসী। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) বায়েজিদ সরোয়ার বলেন, “সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে দেশ বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেয়েছে।”অব. জেনারেল আবদুল্লাহ আল মামুন লিখেছেন, “সেনাপ্রধানের ‘ছাত্রদের বুকে গুলি নয়’ সিদ্ধান্তই ছিল সবচেয়ে মানবিক ও দূরদর্শী।”বিনিয়োগ নিরাপত্তা ও ব্যবসায়ী সহায়তা৮ আগস্ট সেনাসদরে ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করে সেনাপ্রধান বলেন, “শিল্পপ্রতিষ্ঠান, সাপ্লাই চেইন ও বন্দরের নিরাপত্তায় সেনাবাহিনী সদা প্রস্তুত।”বিদ্বেষমূলক অপচেষ্টার জবাব২৫ ফেব্রুয়ারি তিনি বলেন, “সেনাবাহিনী ও সেনাপ্রধানের প্রতি বিদ্বেষের কারণ খুঁজে পাইনি।” মেজর জেনারেল (অব.
) নাঈম আশফাকুর চৌধুরী বলেন, “চ্যালেঞ্জের মধ্যেও সেনাবাহিনীই এখন একমাত্র পূর্ণ কার্যকর প্রতিষ্ঠান।”আন্তর্জাতিক প্রভাব ও সীমান্ত রাজনীতিতিনি আরও বলেন, ভারতের কিছু স্বার্থে আঘাত লাগায় তারা বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। সেনাবাহিনী দেশের স্বার্থে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তুলছে।অভ্যুত্থান পরবর্তী গুজব ও স্পষ্ট বার্তাবাংলাদেশে সেনাবাহিনী নিয়ে ভারতের কিছু সংবাদমাধ্যম ভিত্তিহীন গুজব ছড়ালে অন্তর্বর্তী সরকার কড়া প্রতিক্রিয়া জানায়—বাংলাদেশের সেনাবাহিনী পেশাদার ও জনগণের আস্থার প্রতীক।সেনাপ্রধানের কৌশলী পরামর্শ২৪ মার্চ সেনা প্রাঙ্গণে সেনা কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “উসকানিতে প্রতিক্রিয়া নয়, ধৈর্য ধরুন। শক্তিশালী সে নয়, যে অপরকে পরাস্ত করে, বরং সে, যে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে।”আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও মানবিক মুখআলজাজিরার ডকুমেন্টারি ‘Rebuilding Bangladesh Democracy After Sheikh Hasina’তে সেনাবাহিনীর সহমর্মিতা ও জনগণের পাশে দাঁড়ানো চিত্র উঠে আসে। সেনাপ্রধান আলজাজিরাকে বলেন, “বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের মানুষের বিরুদ্ধে যেতে পারে না।”আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর তৎপরতা৫ আগস্ট থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত ৭৮২২ জন অপরাধী গ্রেপ্তার, ৯৩৭০টি অবৈধ অস্ত্র এবং ২.৮৫ লাখ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।দুই মাসে ২৪৫৭ জন অপরাধী গ্রেপ্তার হয়েছে। কিশোর গ্যাং, মাদক ব্যবসায়ী, অপহরণকারীসহ বহু চক্র ধরা পড়েছে।শিল্পাঞ্চলে কার্যকর হস্তক্ষেপসেনাবাহিনী ১৩৭টি ঝুঁকিপূর্ণ ঘটনা ও ২৩২টি বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করেছে। এছাড়া ৪৩৪০ জন আহত ছাত্র আন্দোলনকারীকে চিকিৎসা সেবা দিয়েছে।মানবাধিকার রক্ষার অঙ্গীকার১৩ নভেম্বর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়, “বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড প্রতিরোধে সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে।”শ্রমিক অসন্তোষের শতাধিক ঘটনায় সহিংসতা প্রতিরোধ করেছে সেনাবাহিনী।সংকটে আস্থা ও শক্তি সেনাবাহিনীজুলাই-আগস্টের ভয়াবহ বন্যাতেও সেনাবাহিনীর অগ্রণী ভূমিকায় মানুষ স্বস্তি পেয়েছে। সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে জনগণ আজ আশাবাদী।উপসংহার:যে সময় দেশ নানা সংকটে, বিভক্তিতে জর্জরিত, সেই সময়ে সেনাবাহিনী একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে দায়িত্বশীল ভূমিকা রেখে চলেছে। সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান শান্তি, শৃঙ্খলা ও জনগণের আস্থার প্রতীক হিসেবে উদ্ভাসিত হয়েছেন—শত চ্যালেঞ্জেও সেনাবাহিনী নিরবে এগিয়ে চলেছে দেশের মঙ্গলকামনায়।
মন্তব্য (০)