ব্রেকিং নিউজ :

দৃষ্টিকোণ নিউজ একটি নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ অনলাইন সংবাদ মাধ্যম, যা সর্বশেষ সংবাদ ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করে।

আমরা দেশের ও বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ খবর, রাজনীতি, অর্থনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর নির্ভরযোগ্য প্রতিবেদন প্রকাশ করি।

অন্যান্য

আকর্ষণ হারাচ্ছে জাতীয় জাদুঘর, কমছে দর্শনার্থীর সংখ্যা

আকর্ষণ হারাচ্ছে জাতীয় জাদুঘর, কমছে দর্শনার্থীর সংখ্যা Image সংগৃহীত | ছবি: ফাইল ছবি
ইমেইল :

একসময় দেশের সাংস্কৃতিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত জাতীয় জাদুঘর আজ দর্শনার্থীদের আগ্রহ হারাচ্ছে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবর্তন না আনার কারণে এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটির প্রতি মানুষের আগ্রহ দিন দিন কমে যাচ্ছে। গত পাঁচ বছরে দর্শনার্থীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে, যা জাতীয় জাদুঘরের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে।আজ আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবস১৮ মে বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবস। এ বছরের প্রতিপাদ্য—‘দ্রুত পরিবর্তনশীল সমাজে জাদুঘরের ভবিষ্যৎ’—প্রাসঙ্গিকতার দিক থেকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও তাৎপর্যপূর্ণ। দিবসটি উপলক্ষে জাতীয় জাদুঘরে শোভাযাত্রা, সেমিনার ও বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।দর্শনার্থীর পরিসংখ্যানে হতাশাএক দশক আগেও যেখানে বছরে ৬ লাখের বেশি দর্শনার্থী জাতীয় জাদুঘর পরিদর্শনে আসতেন, সেখানে ২০২০-২১ অর্থবছরে এই সংখ্যা কমে দাঁড়ায় মাত্র ১ লাখ ১৪ হাজারে। করোনাভাইরাস মহামারি, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সড়ক অবরোধকে দায়ী করা হলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এগুলোর বাইরেও নানা কাঠামোগত দুর্বলতা রয়েছে।প্রচারের ঘাটতি ও পরিবর্তনের অভাববিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘদিন একই নিদর্শন প্রদর্শন, দক্ষ জনবলের অভাব এবং ‘জাদুঘর মার্কেটিং’-এর ঘাটতি এর পেছনে অন্যতম কারণ। জাদুঘরের কর্মকর্তা আসমা ফেরদৌসী জানান, সম্প্রতি কিছু গ্যালারি নতুন করে সাজানো হলেও সেটি দর্শনার্থীদের মন কাড়ার মতো যথেষ্ট নয়।জাদুঘরের গৌরবময় নিদর্শনসমূহজাতীয় জাদুঘরে বর্তমানে ১ লাখ ১৯ হাজারের বেশি নিদর্শন সংরক্ষিত থাকলেও মাত্র ৫ হাজার প্রদর্শনের জন্য উন্মুক্ত। এখানে রয়েছে ষষ্ঠ ও সপ্তম শতকের বিরল বিষ্ণু ও বুদ্ধমূর্তি, নবাব সিরাজউদ্

দৌলার ব্যবহৃত তরবারি ও গালিচা, দুই লাখ বছরের পুরোনো জীবাশ্ম, মুক্তিযুদ্ধের দুর্লভ স্মারক, এবং জয়নুল, কামরুল, সুলতানদের শিল্পকর্ম।দর্শনার্থীদের অভিমতজাদুঘরে আগত অনেক দর্শনার্থী আসেন অন্যান্য প্রয়োজনে ঢাকায় এসে হাতে সময় পেলে। যেমন ময়মনসিংহ থেকে আসা নুরুল মোমেন ও তার পরিবার বলেন, “১০ বছর আগেও যেমন ছিল, এখনও তেমনই আছে। কোনো দৃশ্যমান পরিবর্তন চোখে পড়ে না। বসার জায়গা অপ্রতুল এবং শিশুদের জন্য বিশেষ কিছু নেই।”আরেক দর্শনার্থী সামিউল ইসলাম জানায়, পাঠ্যবইয়ে দেখা বিষয়গুলো বাস্তবে দেখে ভালো লেগেছে, তবে আরও ইন্টারেক্টিভ কিছু থাকলে আরও উপভোগ্য হতো।প্রশাসনিক স্থবিরতাজাদুঘরের কার্যক্রমে স্থায়ী মহাপরিচালকের অনুপস্থিতি, নিয়মিত কিপারের ঘাটতি, এবং প্রাত্যহিক কাজ ব্যাহত হওয়া এর আধুনিকায়নে বড় বাধা। বর্তমানে সচিব পদে তিনবার পরিবর্তন এবং মহাপরিচালকের দায়িত্ব অতিরিক্ত সচিবের ওপর থাকায় জাদুঘরের কর্মকাণ্ড ধারাবাহিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।শুধু রাজধানী নয়, সারাদেশে প্রভাবজাতীয় জাদুঘর কেবল শাহবাগেই সীমাবদ্ধ নয়; এর অধীনে রয়েছে আহসান মঞ্জিল, জসীমউদ্দীন স্মৃতি জাদুঘর, ওসমানী স্মৃতি জাদুঘর, জয়নুল সংগ্রহশালা সহ আরও ১০টির বেশি প্রতিষ্ঠান, যেগুলোর অবস্থাও কমবেশি একই রকম। নতুনত্ব বা আধুনিকায়নের ছোঁয়া না থাকায় এসব প্রতিষ্ঠানও দর্শক হারাচ্ছে।সমাধান কী?আইকম বাংলাদেশের অনারারি চেয়ারপারসন জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, “আধুনিক প্রযুক্তি, দর্শনীর অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি, বিশেষায়িত জনবল এবং নিয়মিত আয়োজন ছাড়া জাদুঘর দর্শকদের কাছে আকর্ষণীয় হতে পারে না।” তিনি আরও বলেন, “এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটিকে বাঁচাতে এখনই প্রয়োজন দূরদৃষ্টি ও আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি।”

সম্পর্কিত ট্যাগ :

মন্তব্য (০)

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না. প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে *

সম্পর্কিত খবর