ব্রেকিং নিউজ :

দৃষ্টিকোণ নিউজ একটি নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ অনলাইন সংবাদ মাধ্যম, যা সর্বশেষ সংবাদ ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করে।

আমরা দেশের ও বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ খবর, রাজনীতি, অর্থনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর নির্ভরযোগ্য প্রতিবেদন প্রকাশ করি।

ব্যাংক

রাক্ষুসে ব্যাংক পরিচালকরা অধরা, লুটে নিয়েছেন আড়াই লাখ কোটি টাকা!

রাক্ষুসে ব্যাংক পরিচালকরা অধরা, লুটে নিয়েছেন আড়াই লাখ কোটি টাকা! Image প্রতীকী ছবি | ছবি: প্রতীকী ছবি
ইমেইল :

 কেলেঙ্কারির হোতা শতাধিক পরিচালক আট বছরে পরিচালকদের ঋণ বেড়েছে ১৬০ শতাংশ১৬টি ব্যাংক পরিচালকদের দিয়েছে ৫ হাজার কোটির বেশি ঋণইসলামী ব্যাংকের পরিচালকরা নিয়েছেন রেকর্ড ২৭ হাজার কোটি টাকাদেশের ব্যাংক খাতে চরম দুর্নীতি ও লুটপাটের চিত্র উঠে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন সূত্রে। ব্যাংকের টাকা সাধারণ গ্রাহকের হলেও তা লুটপাট করে নিয়েছেন কিছু অসাধু ব্যাংক পরিচালক। নিজেদের ব্যাংক থেকে সীমা অতিক্রম করে এবং একে অন্যের ব্যাংক থেকে ভুয়া নথিপত্রে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন তাঁরা। প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকার ‘লোপাট’বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, গত বছরের ২০ আগস্ট পর্যন্ত পরিচালকদের নামে-বেনামে নেওয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২,৩৩,৮৮৫ কোটি টাকা, যা ২০১৬ সালের তুলনায় প্রায় ১৬০% বেশি। ২০১৬ সালে এই ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ৯০ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোর শীর্ষ ঋণ বিতরণকারী তালিকা:ব্যাংক পরিচালকদের দেওয়া ঋণ (কোটি টাকা)ইসলামী ব্যাংক ২৭,০০০পূবালী ব্যাংক ১৭,০০০জনতা ব্যাংক ১৩,৫০০এক্সিম ব্যাংক ১৩,৫০০ইউসিবিএল ১০,০০০শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ৮,০০০+সোস্যাল ইসলামী, প্রাইম, অগ্রণী ব্যাংক ৭,০০০+ঢাকা, ব্যাংক এশিয়া, সাউথইস্ট ব্যাংক ৬,০০০+ব্র্যাক, সিটি, ইস্টার্ন ব্যাংক ৫,০০০+ পরিচালকদের নাম-বেনামে ঋণপ্রাপ্তি এবং প্রতারণার কৌশল:নিজ ব্যাংক থেকে সীমিত ঋণ নেওয়ার নিয়ম থাকলেও একে অন্যের ব্যাংক থেকে সমঝোতার মাধ্যমে ঋণ নিয়েছেন।ড্রাইভার, সহকারী ও আত্মীয়দের নামে বেনামি প্রতিষ্ঠান খুলে ঋণ আদায় করেছেন।কেউ কেউ ভুয়া দলিল ও জাল সইয়ের মাধ্যমে ব্যাংকের কোটি কোটি টাকা সরিয়ে নিয়েছেন। ব্যবস্থাপনায় অস্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাববিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যাংক খাতকে দুর্নী

তির ‘আখড়া’ বানানো হয়েছে। কেউই জবাবদিহির আওতায় নেই—না ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট, না বোর্ড, না নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ‘রক্ষক হয়ে ভক্ষক’ হয়েছেন পরিচালকরা।ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক এমডি মুখলেসুর রহমান বলেন,“ব্যাংকের আইনি কাঠামো দুর্বল। মামলা করতে পারে না ব্যাংক, করতে হয় দুদকের মাধ্যমে—যা দীর্ঘসূত্রতায় আটকে যায়।” বড় ঋণগ্রহীতা ও পালিয়ে যাওয়া পরিচালকরাএস আলম গ্রুপ দেশের সর্বোচ্চ ঋণগ্রহীতা। মালিক সাইফুল আলমসহ অনেকে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।রন হক শিকদার ও রিক হক শিকদারসহ ন্যাশনাল ব্যাংকের ১০ সাবেক পরিচালকের বিরুদ্ধে ৪৬৯ কোটি টাকার আত্মসাতের মামলা হয়েছে।সালমান এফ রহমান ও তাঁর ছেলে সায়ান রহমানের নামও এসেছে খেলাপির তালিকায়।ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান রুকমিলা জামানসহ পুরো পরিবার দেশ ছেড়েছেন। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও উদ্বেগসিএসপিএস-এর নির্বাহী পরিচালক ড. মিজানুর রহমান বলেন,“পরিচালকদের জামানত বিক্রি করে ঋণ আদায়ও সম্ভব নয়, কারণ তা বাজারমূল্যের ১০%–এরও কম। সরকার টু সরকার ভিত্তিতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে অপরাধীদের ফিরিয়ে এনে বিচার করা উচিত।” সৎ উদ্যোক্তারা বঞ্চিত, খারাপ গ্রাহকরা ভোগ করছে সুযোগআজও অনেক উদ্যোক্তা নিজের পুঁজিতে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তাঁরা ব্যাংকে ঋণ চাইলে পান না, উচ্চ সুদ, হয়রানি ও শর্তে নাজেহাল হতে হয়। অথচ ঋণখেলাপিরা বেপরোয়াভাবে বিদেশে বাড়ি-গাড়ি কিনে বিলাসী জীবনযাপন করছেন।বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তদন্ত বলছে, পরিচালকদের ঋণের তালিকা থেকে প্রভাবশালী গ্রুপগুলোর নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে সামগ্রিক ঋণের পরিমাণ কমে এলেও, বাস্তবচিত্র ভয়াবহ। যদি যথাযথ আইন ও ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তবে ব্যাংকিং খাতের ওপর জনগণের আস্থা আরও দুর্বল হবে।

মন্তব্য (০)

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না. প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে *

সম্পর্কিত খবর