ব্রেকিং নিউজ :

দৃষ্টিকোণ নিউজ একটি নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ অনলাইন সংবাদ মাধ্যম, যা সর্বশেষ সংবাদ ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করে।

আমরা দেশের ও বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ খবর, রাজনীতি, অর্থনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর নির্ভরযোগ্য প্রতিবেদন প্রকাশ করি।

বিশ্ববাণিজ্য

ট্রাম্পের ঘোষণায় মার্কিন শেয়ারবাজারে বড় ধস, বিশ্ববাজারে ছড়াল অনিশ্চয়তা

ট্রাম্পের ঘোষণায় মার্কিন শেয়ারবাজারে বড় ধস, বিশ্ববাজারে ছড়াল অনিশ্চয়তা Image সংগৃহীত | ছবি: সংগৃহীত
ইমেইল :

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক আকস্মিক ঘোষণায় বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজারে আলোড়ন দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় সোমবার দুপুরে ট্রাম্প তাঁর নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ প্রকাশ করেন কিছু কড়া ভাষার শুল্ক-সংক্রান্ত চিঠি। তাতে বলা হয়, আগামী ১ আগস্ট থেকে একাধিক দেশের ওপর নতুন আমদানি শুল্ক বসানো হবে।এই ঘোষণার তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়ে নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে। মাত্র এক ঘণ্টার ব্যবধানে ডাও জোন্স সূচক পড়ে যায় ৪২২ পয়েন্ট, যা দিনটির সবচেয়ে বড় ধস হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। নাসডাক সূচক কমে ০.৯২% এবং এসঅ্যান্ডপি ৫০০ কমে ০.৭৯%।বড় কোম্পানির শেয়ারে বড় ধসট্রাম্পের ঘোষণার পরপরই টয়োটা, নিসান, হোন্ডা, এলজি ও এসকে টেলিকমের মতো বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দরপতন শুরু হয়। কিছু কোম্পানির শেয়ার ৭ শতাংশ পর্যন্ত পড়ে যায়। এমনকি বিশ্বব্যাপী পরিচালিত শেয়ারভিত্তিক তহবিলগুলোতেও ২-৪ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতি হয়।বন্ড, সুদহার ও ডলার সূচকে পরিবর্তনশেয়ারবাজারের এই পতনের প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি বন্ড মার্কেটেও। ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের সুদের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪.৩৯%, আর ৩০ বছরের বন্ডের হার পৌঁছায় ৪.৯২%-এ। সাধারণভাবে, সুদহার বাড়লে বন্ডের দাম কমে যায়—এটিই এখানে দেখা গেছে।অন্যদিকে ডলার সূচক (US Dollar Index) বেড়ে ০.

৩% বৃদ্ধি পায়, যার ফলে জাপানি ইয়েন, কোরিয়ান ওয়ান ও দক্ষিণ আফ্রিকান র‍্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি মুদ্রা দুর্বল হয়ে পড়ে।বিশ্ববাজারের প্রতিক্রিয়াযুক্তরাষ্ট্রে শেয়ারবাজার পতন হলেও মঙ্গলবার সকালে এশিয়ার শেয়ারবাজারগুলো তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল ছিল। বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাজারে শুধু শুল্ক নয়, ট্রাম্পের আচরণ নিয়ে অনিশ্চয়তাও বড় কারণ। তাঁর ‘শুল্ক চিঠি’ আন্তর্জাতিকভাবে উদ্বেগ তৈরি করেছে।যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ বিশ্লেষক রস মেফিল্ড বলেছেন, “প্রস্তাবিত শুল্কহার বাজারের অনুমানের চেয়ে বেশি হওয়ায় ব্যাপক শেয়ার বিক্রি শুরু হয়েছে।”সময়সীমা ও চুক্তির সম্ভাবনাশেয়ারবাজারের এই পতনের পেছনে ৯ জুলাইয়ের বাণিজ্য চুক্তি সময়সীমা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। জেফরিস ইউরোপের প্রধান অর্থনীতিবিদ মোহিত কুমার এক বিশ্লেষণে বলেন, “এই সময়সীমা বাজারে সাময়িক অনিশ্চয়তা তৈরি করলেও, এটা অন্য দেশগুলোকে দ্রুত চুক্তিতে আসতে বাধ্য করবে।”তিনি আরও বলেন, “দাম পড়ে যাওয়া শেয়ারের মধ্যেই লুকিয়ে থাকতে পারে বিনিয়োগের সুবর্ণ সুযোগ।”বাজারে আশাবাদ ও আত্মতুষ্টি—উভয়ই আছেঅনেক বিনিয়োগকারী মনে করছেন বাজার আবার ঘুরে দাঁড়াবে, তবে কিছু বিশ্লেষক এতে আত্মতুষ্টির গন্ধ পাচ্ছেন। ওয়েলস ফারগো ইনভেস্টমেন্ট ইনস্টিটিউটের কৌশলবিদ স্কট রেন মন্তব্য করেছেন, “ওয়াল স্ট্রিট ট্রাম্পের শুল্ক নীতিকে খুব সহজভাবে নিচ্ছে, যা ঝুঁকিপূর্ণ।”তিনি আরও বলেন, “শুল্ক কার্যকর হলে খরচ বাড়বে, ভোক্তা ব্যয় কমবে এবং মার্কিন অর্থনীতি মন্দার দিকে যেতে পারে।” বিশেষ করে তিনি এসঅ্যান্ডপি ৫০০-এর ভোক্তা খাত ও ছোট কোম্পানির শেয়ারকে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করেন।ট্রাম্পের খেয়ালিপনা ও অর্থনৈতিক আস্থা সংকটবিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ট্রাম্পের অনিয়মিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ মার্কিন অর্থনীতির দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতায় প্রশ্ন তুলছে। ২০২৪ সালে ডলারের মান ১৯৭৩ সালের পর সবচেয়ে বড় পতনের মুখে পড়ে। এতে বিনিয়োগকারীরা এখন বিকল্প বাজার খুঁজছেন।একাধিক অর্থনীতিবিদ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র আর আগের মতো ‘নিরাপদ বিনিয়োগ গন্তব্য’ হিসেবে গণ্য হচ্ছে না। ফেডারেল রিজার্ভের ওপর ট্রাম্পের চাপ ও মন্তব্য মার্কিন অর্থনৈতিক কাঠামোয় আস্থার ঘাটতি তৈরি করছে।উপসংহারট্রাম্পের এক ঘোষণাই বিশ্ববাজারে ব্যাপক অস্থিরতা তৈরি করে ফেলেছে। বিশ্ব অর্থনীতি এখন অনিশ্চয়তায় ঘেরা—বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের মতো অর্থনৈতিক পরাশক্তির ভেতরের অস্থিরতা বাজারে আরও প্রভাব ফেলবে। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, সামনে কিছু বাণিজ্য চুক্তি হলে স্বস্তি ফিরতে পারে। না হলে আগস্ট থেকে নতুন শুল্ক বাস্তবায়িত হলে আবারও বড় ধস দেখা যেতে পারে।

সম্পর্কিত ট্যাগ :

মন্তব্য (০)

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না. প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে *

সম্পর্কিত খবর