ব্রেকিং নিউজ :

দৃষ্টিকোণ নিউজ একটি নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ অনলাইন সংবাদ মাধ্যম, যা সর্বশেষ সংবাদ ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করে।

আমরা দেশের ও বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ খবর, রাজনীতি, অর্থনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর নির্ভরযোগ্য প্রতিবেদন প্রকাশ করি।

বিশ্লেষণ

৫৪ বছরে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক: কতটা দিলাম, কতটা পেলাম?

৫৪ বছরে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক: কতটা দিলাম, কতটা পেলাম? Image সংগৃহীত | ছবি: সংগৃহীত
ইমেইল :
৪৪

স্বাধীনতার পর গত ৫৪ বছরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক বহু বাঁক পেরিয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বহু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, কখনও সম্পর্কের উষ্ণতা বেড়েছে, আবার কখনও টানাপোড়েনেও ভুগেছে। এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো—বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে কী সুবিধা দিয়েছে, আর কতটুকু পেয়েছে। স্বাধীনতার পরপরই মৈত্রী ও বাণিজ্য চুক্তি১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পেছনে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ অবদান থাকায়, ১৯৭২ সালের ১৯ মার্চ দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় ২৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী চুক্তি। এই চুক্তি ছিল সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য প্রথম কৌশলগত ও কূটনৈতিক সমঝোতা। যদিও এই চুক্তি নিয়ে ‘ভারতের আধিপত্য’ প্রতিষ্ঠার সমালোচনাও ছিল।এর ঠিক নয় দিন পর, ২৮ মার্চ ১৯৭২, স্বাক্ষর হয় প্রথম দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি। চুক্তি অনুযায়ী, দুই দেশ সীমান্তবর্তী ১৬ কিলোমিটার এলাকায় পণ্য বিনিময় ও ট্রানজিট সুবিধা পায়। নৌ-প্রটোকল ও বাণিজ্যের বিস্তার১ নভেম্বর ১৯৭২, দুই দেশের মধ্যে হয় অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন চুক্তি (Inland Water Transit and Trade Protocol)। এর মাধ্যমে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।পরবর্তী সময়ে, ৫ জুলাই ১৯৭৩, হয় ৩ বছর মেয়াদি বাণিজ্য চুক্তি এবং ৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৭৪, স্বাক্ষরিত হয় ট্রেড অ্যান্ড পেমেন্টস অ্যারেঞ্জমেন্ট চুক্তি। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্য এবং অর্থ পরিশোধের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে ক্লিয়ারিং অ্যাকাউন্ট চালু হয়। রুপি থেকে রূপান্তরযোগ্য মুদ্রায় বাণিজ্যে রূপান্তর১৭ ডিসেম্বর ১৯৭৪, দুই দেশ রুপি নির্ভর বাণিজ্য বাতিল করে আন্তর্জাতিকভাবে রূপান্তরযোগ্য মুদ্রায় বাণিজ্য শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়, যা কার্যকর হয় ১ জানুয়ারি ১৯৭৫ থেকে। পরবর্তী চুক্তি ও নবায়নসমূহ১২ জানুয়ারি ১৯৭৬: আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর

প্রথমবারের মতো দুই দেশের সম্পর্ক কিছুটা জটিল হয়ে পড়ে, তবে পরবর্তীতে কিছু প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়।৪ অক্টোবর ১৯৮০: বাণিজ্য চুক্তির নবায়ন করে দুই দেশ।৮ নভেম্বর ১৯৮৩: নৌ-প্রটোকল পুনর্নবায়ন, নতুন রুট ও পোর্ট অব কল যুক্ত হয়। আঞ্চলিক বাণিজ্যে অগ্রগতি১১ এপ্রিল ১৯৯৩: বাংলাদেশ সার্ক অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য ব্যবস্থা (SAPTA) চুক্তি স্বাক্ষর করে।১ জানুয়ারি ২০০৬: SAPTA-এর পরিবর্তে SAFTA (South Asia Free Trade Area) কার্যকর হয়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যে শুল্ক হ্রাস শুরু হয়। ভারতের পক্ষ থেকে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা১৩ আগস্ট ২০০৮, এলডিসি সুবিধাভোগী দেশ হিসেবে ভারত বাংলাদেশের ৯৮.২ শতাংশ পণ্যে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা দেয়। কে কতটা পেলো: প্রশ্ন থেকেই যায়দুই দেশের মধ্যে চুক্তি ও সুবিধার তালিকা দীর্ঘ। বাংলাদেশ ভারতকে নৌপথ, ট্রানজিট, এলডিসি শুল্ক ছাড়সহ নানা সুবিধা দিয়েছে। ভারতও শুল্কমুক্ত সুবিধা, রপ্তানি সহায়তা দিয়েছে।কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য ঘাটতির ভার ভারসাম্যহীন। ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি তুলনামূলক কম, যেখানে আমদানি অনেক বেশি। সম্প্রতিক সময়ে টানাপোড়েন২০১০ সালের পর থেকে সম্পর্ক দৃশ্যত উন্নতির দিকে গেলেও, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং জনগণের প্রতিক্রিয়া দুই দেশের সম্পর্ককে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। বাণিজ্যে পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে বাংলাদেশি বাজারে ভারতীয় পণ্যের প্রভাব কমছে, তবে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব কী হবে—তা সময়ই বলবে। উপসংহারবাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ৫৪ বছরের ইতিহাসে নানাবিধ চুক্তির মধ্য দিয়ে এগিয়েছে। একদিকে মৈত্রী ও সহযোগিতা, অন্যদিকে বৈষম্য ও আস্থাহীনতা—এই দুই মেরুর মধ্যে দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়েছে। আগামীতে এই সম্পর্ক কতটা ভারসাম্যপূর্ণ হবে, সেটিই এখন দেখার বিষয়। #বাংলাদেশভারত #বাণিজ্য #বাংলাদেশনিউজ #আন্তর্জাতিকসম্পর্ক #বাংলাদেশস্বাধীনতা

সম্পর্কিত ট্যাগ :

মন্তব্য (০)

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না. প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে *

সম্পর্কিত খবর