পুলিশি হামলার বিচার এবং তিন দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে রাতভর অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত কাকরাইল মোড়ে অন্তত ৫০ জন শিক্ষার্থী অবস্থান করছেন, যার ফলে এলাকায় যান চলাচলে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটেছে।রমনা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল কাদির জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীরা রাতভর সড়কে বসে ও শুয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, “এখনও অন্তত অর্ধশত শিক্ষার্থী এখানে অবস্থান করছেন। তাঁদের কারণে কাকরাইল মোড়ের পুরো সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে এবং এলাকাজুড়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে।”আন্দোলনকারীরা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, তাঁদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা কোনো অবস্থাতেই পিছু হটবেন না।কী নিয়ে এই আন্দোলন?গতকাল বুধবার দুপুর ১১টা ৪৫ মিনিটে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ‘যমুনা’র উদ্দেশ্যে লংমার্চ শুরু করেন। দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে লংমার্চটি কাকরাইল মসজিদের সামনে পৌঁছালে পুলিশের বাধার সম্মুখীন হন তারা। শিক্ষার্থীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে যমুনার দিকে অগ্রসর হতে চাইলে পুলিশ লাঠিপেটা করে।পরে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করে, যার ফলে শিক্ষার্থীরা পিছু হটে যায়। শিক্ষার্থীদের দাবি, এ ঘটনায় অন্তত ৫০ জন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।শিক্ষার্থীদের দাবির সারসংক্ষেপআন্দোলনকারীরা তিনটি প্রধান দাবি উত্থাপন করেছেন:জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ৭০% শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি চালু করতে হবে, যা ২০২৫-২৬ অর্থ
বছর থেকে কার্যকর হবে।বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কোনো প্রকার কাটছাঁট ছাড়া অনুমোদন করতে হবে।বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস স্থাপনের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন দিয়ে অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে বাস্তবায়ন করতে হবে।ঘটনাস্থলের পরিস্থিতিদুপুর ২টার দিকে প্রায় ২০০ জন শিক্ষার্থী কাকরাইল মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিকেল ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮টি বাসে করে কয়েকশ শিক্ষক-শিক্ষার্থী এসে আন্দোলনে যোগ দেন। তাঁদের মধ্যে উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাবিনা শরমীন উপস্থিত ছিলেন।ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম জানিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে ১৪৪ ধারা জারি থাকায় সেখানে কাউকে যেতে দেওয়া হবে না।সরকারের অবস্থান ও উত্তপ্ত পরিস্থিতিরাত ১০টার পরে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা দ্রুতই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং যৌক্তিক দাবিগুলো সমাধানে সরকার আন্তরিক থাকবে।”তবে তাঁর বক্তব্য চলাকালীন এক শিক্ষার্থী ভিড়ের মধ্য থেকে পানির বোতল নিক্ষেপ করলে তা উপদেষ্টার মাথায় লাগে। এরপর তিনি বক্তব্য বন্ধ করে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।ছাত্রদলের অবস্থানদিবাগত রাত ১২টার পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে বলেন, “তথ্য উপদেষ্টার ওপর হামলার ঘটনায় আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি, তবে এর দায়ভার বিশ্ববিদ্যালয় নেবে না।” তিনি আরও বলেন, “সরকার থেকে সুস্পষ্ট ও লিখিত আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত আমরা এখান থেকে সরছি না।”
মন্তব্য (০)