বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। নরওয়েভিত্তিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ডিসপ্লেসমেন্ট মনিটরিং সেন্টার (IDMC) প্রকাশিত ‘গ্লোবাল রিপোর্ট অন ইন্টারনাল ডিসপ্লেসমেন্ট ২০২৫’ অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দেশে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৪ লাখে, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৬ লাখ বেশি।প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টানা চার বছর ধরে বাংলাদেশে বাস্তুচ্যুতির সংখ্যা বাড়ছে। ২০২৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৮ লাখ। বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো দুর্যোগ এই বাস্তুচ্যুতির প্রধান কারণ। এর ফলে বাংলাদেশ বর্তমানে দুর্যোগজনিত অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে।বর্ষা মৌসুমে ভয়াবহ বাস্তুচ্যুতি, সিলেটেই ঘর ছাড়তে বাধ্য ৭ লাখের বেশি মানুষপ্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালের বর্ষা মৌসুমে সৃষ্ট বন্যায় প্রায় ১৩ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। শুধু সিলেট বিভাগেই জুন মাসে ৭ লাখ ২৩ হাজার মানুষ বাধ্য হয়েছেন তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে। এর প্রধান কারণ হিসেবে অপরিকল্পিত নগরায়ণ, জলধারণ ক্ষমতা হ্রাস, এবং নালা-খালে পানিপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি হওয়ার বিষয়গুলো উঠে এসেছে।এছাড়াও উল্লেখ করা হয়, ঘূর্ণিঝড় রেমাল বন্যার তীব্রতা বাড়িয়ে তোলে, যার ফলে নদীগুলোর পানি ধারণক্ষমতার বাইরে গিয়ে আকস্মিক প্লাবনের সৃষ্টি হয়।বাংলাদেশে সংঘাত ও সহিংসতার কারণেও বাস্তুচ্যুতিপ্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াও, ২০২৪ সালে সংঘাত ও সহিংসতার কারণে বাংলাদেশে ২ হাজার ৮০০ জন অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন বলে জানায় আইডিএমসি। যদিও এই সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম, তবুও এটি একটি উদ্বেগজনক ইঙ্গিত বল
ে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।বিশ্বজুড়ে বাস্তুচ্যুতির ভয়াবহ চিত্র: গাজা, সুদান ও ফিলিস্তিনে চরম বিপর্যয়বিশ্বের পরিপ্রেক্ষিতে দেখা যায়, ২০২৪ সালে বিশ্বে মোট ৮ কোটি ৩৪ লাখ মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, যা আইডিএমসির ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এদের মধ্যে ৭ কোটি ৩৫ লাখ মানুষ সংঘাত ও সহিংসতায় এবং ৯৮ লাখ মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।বিশ্বের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে দুর্যোগে সর্বাধিক ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, এরপর ফিলিপাইনে ৮৯ লাখ ৯৬ হাজার, ভারতে ৫৪ লাখ ৩১ হাজার ও চীনে ৩৯ লাখ ২৬ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হন।অন্যদিকে, সুদানে সংঘাতে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ৯১ লাখ, ফিলিস্তিনে ৩২ লাখ, এবং গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় বাস্তুচ্যুত হয়েছেন প্রায় ২০ লাখ মানুষ—যা অঞ্চলটির মোট জনসংখ্যার প্রায় সমান।“রাষ্ট্র একা পারবে না, আন্তর্জাতিক সহায়তা জরুরি” — বিশেষজ্ঞের মতসেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের প্রধান নির্বাহী মো. শামসুদ্দোহা বলেন, “বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগের কারণেই বাস্তুচ্যুতি বাড়ছে। এর জন্য একটা দিকনির্দেশনামূলক নীতিমালা থাকলেও, রাষ্ট্র একা এই সমস্যা সামাল দিতে পারবে না। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, বিশেষ করে জাতিসংঘ ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন।”আইডিএমসির বার্তা: সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন দুর্বল ও অসহায় জনগোষ্ঠীপ্রতিবেদনের উপসংহারে আইডিএমসির প্রধান আলেক্সান্দ্রা বিলাক বলেন, “সংঘাত, দারিদ্র্য ও জলবায়ু পরিবর্তনের সম্মিলিত প্রভাবে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির মাত্রা বাড়ছে, যার সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হচ্ছেন সমাজের প্রান্তিক ও অসহায় মানুষরা।
মন্তব্য (০)