মার্কিন অর্থনীতিকে শুল্কযুদ্ধের ধাক্কা থেকে রক্ষায় শেষ মুহূর্তে পিছু হটেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই সিদ্ধান্ত বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিক অস্থিরতা কিছুটা হলেও প্রশমিত করেছে, যদিও দীর্ঘমেয়াদে ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা এখনো থেকেই গেছে।সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধে ৯০ দিনের জন্য একধরনের সমঝোতা হয়েছে, যার আওতায় উভয় দেশ নতুন করে কোনো শুল্ক আরোপ করবে না। এতে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বাজারে কিছুটা আশার সঞ্চার হয়েছে এবং বড় ধরনের বিপর্যয় আপাতত এড়ানো গেছে।অর্থনীতিতে সাময়িক স্বস্তি, কিন্তু ঝুঁকি এখনো বিদ্যমানবিশ্লেষকেরা সতর্ক করে বলছেন, এই সাময়িক বিরতি কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। এখনো শুল্কের হার স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি। অর্থনৈতিক আস্থার ঘাটতি ও সরবরাহ ব্যবস্থার ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থা একদিনে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়।“আমরা এখনো বিপদ কাটিয়ে উঠিনি,” বলেছেন আমেরিকান অ্যাকশন ফোরামের প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান দলের সাবেক উপদেষ্টা ডগলাস হোল্টজ-ইকিন। তাঁর মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর শুল্কনীতির প্রভাব এখনো বহাল রয়েছে, যা ছোট ব্যবসা ও সাধারণ ভোক্তাদের জন্য গুরুতর সমস্যা তৈরি করেছে।অস্বাভাবিক শুল্কনীতি ও অর্থনীতিতে অস্থিরতাট্রাম্প প্রশাসন চীনের কিছু পণ্যে সর্বোচ্চ ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল, যা কার্যত বাণিজ্যে একপ্রকার নিষেধাজ্ঞার সমতুল্য ছিল। এতে সরবরাহব্যবস্থায় ধস নামার শঙ্কা দেখা দেয়, এবং বাজারে পণ্যের ঘাটতির আশঙ্কা তৈরি হয়।বিশ্লেষকেরা মনে করেন, এই শুল্কনীতি থেকে পিছু হটা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে বড় ধরনের ধ্বংসের হাত থেকে আপাতত রক্ষা করেছে। যেমন, পিটার বুকভার বলেন, “শেষ পর্যন্ত উভয় দেশ ক্রিসমাসটা বাঁচানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”মন্দার আশঙ্কা কমলেও শেষ হয়নিমুডিজ অ্যানালিটিকস-এর তথ্য অনুযায়ী, বাণিজ্যচুক্তির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কা
র্যকর শুল্কহার ২১.৩ শতাংশ থেকে কমে ১৩.৭ শতাংশে নেমে এসেছে। যদিও এই হার এখনো ১৯১০ সালের পর সর্বোচ্চ, অর্থাৎ পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক নয়।প্রধান অর্থনীতিবিদ মার্ক জান্ডি মনে করেন, এই হার বজায় থাকলে আগামী এক বছরে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি ১ শতাংশের বেশি বাড়তে পারে, একইসঙ্গে জিডিপিও কমে যেতে পারে।মন্দার ঝুঁকি কমেছে, কিন্তু...মুডিজের সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে মন্দার আশঙ্কা এখন ৪৫ শতাংশ, যেখানে আগেও তা ৬০ শতাংশে পৌঁছেছিল। অর্থাৎ ঝুঁকি কিছুটা হ্রাস পেয়েছে, তবে পুরোপুরি যায়নি।অর্থনীতিবিদ জাস্টিন উলফার্স বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো হলেও ট্রাম্পের ক্ষমতায় আসার সময়ের তুলনায় এখনো খারাপ।” এই দ্রুত পরিবর্তন ও অনিশ্চয়তাই "ট্রাম্প ২.০" যুগের বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছে।ভবিষ্যৎ কি আরও অনিশ্চিত?ট্রাম্প নিজেই স্বীকার করেছেন, চীনের পণ্যে আবারও শুল্ক বাড়ানো হতে পারে যদি ৯০ দিনের মধ্যে চুক্তি না হয়। যদিও তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, “শেষ পর্যন্ত একটি চুক্তি হবেই।”তবে বাজারে এখনো উদ্বেগ রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিমান, সেমিকন্ডাক্টর, ওষুধ, খনিজ ইত্যাদি খাতে ভবিষ্যতে আবারও শুল্ক আরোপ করা হতে পারে।অর্থনীতিবিদ জো ব্রুসুয়েলাস মনে করেন, আগামী এক বছরে মন্দার ঝুঁকি এখনো ৫৫ শতাংশ। ডয়েচে ব্যাংক বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যনীতি কিছুটা নমনীয় হলেও “বাণিজ্যযুদ্ধজনিত অনিশ্চয়তা এখনো রয়ে গেছে।”কৃত্রিম সংকট ও অনিশ্চয়তার রেকর্ডবিশ্লেষকেরা বলছেন, এই সংকট পুরোপুরি তৈরি করা বা কৃত্রিম, যা হঠাৎ শুল্ক আরোপ বা পরিবর্তনের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে, পরবর্তী ধাক্কা কখন আসবে তা নিয়ে।যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, বাণিজ্য নীতির এমন অনিশ্চয়তা গত কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ, যা অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে স্থবির করে দিয়েছে।
মন্তব্য (০)