জাতীয় নির্বাচন আগে, নাকি স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে—এই বিতর্ক চলতি বছরের শুরুতে রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ উত্তাপ ছড়িয়েছিল। তবে বিএনপির বিরোধিতার মুখে বিষয়টি তখন চাপা পড়ে যায়।সম্প্রতি কয়েকটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে আবারও স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে করার দাবি জোরালোভাবে তোলা হয়েছে। এর পেছনে কোনো নতুন কৌশল আছে কি না, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নতুন করে কৌতূহল তৈরি হয়েছে।বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং গণ অধিকার পরিষদ স্পষ্ট করে জানিয়েছে, তারা জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দেখতে চায়। যদিও বিএনপি বরাবরই জাতীয় নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে এবং এখনো স্থানীয় নির্বাচন আগে করার দাবিতে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি।নতুন করে কেন সামনে এলো এই দাবি?২৩ এপ্রিল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং গণ অধিকার পরিষদের বৈঠকে দুই দলের নেতারা জানান, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন প্রয়োজনীয়।নুরুল হক নুর যুক্তি তুলে ধরে বলেন, "গত আট মাসে স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি না থাকায় জনগণ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। কিছু এলাকায় জবরদখলের প্রবণতা বেড়েছে। স্থানীয় নির্বাচন মানুষকে স্বস্তি দেবে এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য সময় তৈরি করবে।"এরপর, ২৫ এপ্রিল ময়মনসিংহে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান, "জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দিন। আমরা আপনাদের সদিচ্ছা ও সক্ষমতার প্রমাণ দেখতে চাই।"এছাড়া, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)'র বিভিন্ন নেতারাও জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন।রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশগত ৬ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের এক মতবিনিময় সভায় কমিশনের প্রধান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ জানান, ঢাকার বাইরে সাধারণ মানুষের কাছে স্থান
ীয় সরকার নির্বাচনই বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।পরবর্তীতে ২০ এপ্রিল, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস'র কাছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। যদিও সুপারিশে সরাসরি কিছু বলা হয়নি, তবুও কমিশন চাইছে "স্থানীয় সরকার নির্বাচন দ্রুত করা হোক"।বিএনপির অবস্থানবিএনপি শুরু থেকেই জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের বিরুদ্ধে। দলটির অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে হলে সারাদেশে বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে, যা জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার অজুহাত হয়ে দাঁড়াতে পারে।রুহুল কবির রিজভী বলেন, "জাতীয় নির্বাচনই আগে হওয়া উচিত। যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল, তখনও স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে করা হয়নি।"বিএনপি মনে করছে, আগে স্থানীয় নির্বাচন হলে দলের ভেতর কোন্দল ও বিভাজন তৈরি হতে পারে, যা জাতীয় নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।অন্য দলগুলোর যুক্তিঅন্যদিকে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে চাওয়া দলগুলোর মতে, "স্থানীয় সরকার নির্বাচন তাদের তৃণমূলে শক্তি বাড়াতে সাহায্য করবে এবং জাতীয় নির্বাচনে ভালো অবস্থানে নিয়ে আসবে।"ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান জানান, "আমরা শুরু থেকেই জাতীয় নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দাবি করে আসছি। এতে দলীয় সরকারের প্রভাব এড়ানো সম্ভব।"তবে তিনি বলেন, "অন্যান্য দলের সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো গোপন সমঝোতা হয়নি। সরকার যখন সক্রিয় হয়েছে, তখন আমাদেরও দাবি জোরালোভাবে তুলতে হচ্ছে।"উপসংহারমোটকথা, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের দাবি নতুন করে রাজনৈতিক আলোচনায় উত্তাপ ছড়িয়েছে। বিএনপির বিরোধিতা থাকলেও অন্যান্য দলের চাপের মুখে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, সরকার এবং নির্বাচন কমিশন কী সিদ্ধান্ত নেয়।
মন্তব্য (০)