ব্রেকিং নিউজ :

দৃষ্টিকোণ নিউজ একটি নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ অনলাইন সংবাদ মাধ্যম, যা সর্বশেষ সংবাদ ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করে।

আমরা দেশের ও বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ খবর, রাজনীতি, অর্থনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর নির্ভরযোগ্য প্রতিবেদন প্রকাশ করি।

ভারত

ভারতের সেনাবাহিনী কতটা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত?

ভারতের সেনাবাহিনী কতটা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত? Image ভারতের সেনাবাহিনী | ছবি: দৃষ্টিকোণ নিউজ
ইমেইল :

সীমান্তে ক্রমবর্ধমান হুমকির মুখে পড়েছে ভারতের সেনাবাহিনী। তবে, এখনো সেনাবাহিনীর পূর্ণ আধুনিকীকরণ সম্পন্ন হয়নি। এই বাস্তবতা সামনে আসতে পারে যে কোনো মুহূর্তে, যা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে প্রতিশোধমূলক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা সংযত রাখতে বাধ্য করতে পারে।ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা নতুন কিছু নয়। তবে, শেষবার যখন সরাসরি মুখোমুখি সংঘর্ষে রূপ নিয়েছিল, তখন ভারতীয় সেনাবাহিনীর দুর্বলতার নগ্ন চিত্র প্রকাশ পেয়েছিল। বিশাল বাহিনী থাকা সত্ত্বেও তারা সীমান্তে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য যথেষ্ট প্রস্তুত ছিল না।২০১৯ সালে পাকিস্তান ভারতীয় একটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার পর ভারত নিজেদের সামরিক আধুনিকীকরণে গতি আনে। প্রধানমন্ত্রী মোদি তখন ব্যাপক অর্থ বিনিয়োগ করেন, নতুন আন্তর্জাতিক অস্ত্র সরবরাহকারী খুঁজে বের করেন এবং দেশীয় প্রতিরক্ষা শিল্পের ওপর গুরুত্ব দেন।কিন্তু এতসব প্রচেষ্টার পরও, বাস্তবে ভারতের সামরিক প্রস্তুতি কতটা এগিয়েছে তা এখনই কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়তে পারে।উত্তেজনা চরমে, প্রতিশোধের আহ্বানসম্প্রতি কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হওয়ার পর, ভারতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ তুঙ্গে উঠেছে। ভারত হামলার জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করেছে এবং প্রতিশোধের অঙ্গীকার করেছে। উত্তেজনা এতটাই বেড়েছে যে ভারত পাকিস্তানের দিকে প্রবাহিত একটি প্রধান নদী বন্ধ করে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছে, যা ইতিহাসে নজিরবিহীন।পাকিস্তান অবশ্য হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং নদীর প্রবাহ বন্ধের হুমকিকে সরাসরি ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ বলে অভিহিত করেছে।সামরিক দুর্বলতা মোদিকে সংযত রাখবে?বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারতের সেনাবাহিনী এখনো রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ২০১৮ সালের সংসদীয় প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল যে, সেনাবাহিনীর ৬৮% সরঞ্জাম পুরোনো। পাঁচ বছর পরেও পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তন ঘটেনি। সর্বাধুনিক সরঞ্জামের অনুপাত বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু তা এখনো প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, ভারতের সীমিত আধুনিক সক্ষমতা মোদিকে সীমিত হামলার পথ বেছে নিতে বাধ্য করতে পারে। যেমন সীমান্তবর্তী এলাকায় নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা বা বিশেষ বাহিনীর ছোটখাটো অভিযান।দ্বিমুখী চাপের মুখে ভারতীয় নেতৃত্বজনগণের আবেগ মোদিকে কঠিন অবস্থানে ফেলছে, কিন্তু ভারতের গণতান্ত্রিক কাঠামো তাকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাপ দিচ্ছে। অপরদিকে, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন ধরে দেশটির নেপথ্য শাসক, যারা রাজনৈতিক সুবিধা নিতে সংঘাত বাড়াতে পারে।বিশ্লেষকরা সতর্ক করে ব

লছেন, চীনও ভারতের সামরিক প্রস্তুতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। কারণ, ২০২০ সালে ভারত-চীন সীমান্তে প্রাণঘাতী সংঘর্ষের পর ভারত এখন দুই ফ্রন্টে—পাকিস্তান ও চীন—প্রস্তুতি নিতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে সামরিক সরঞ্জাম ও জনবল ব্যবস্থাপনা আরও জটিল হয়ে পড়েছে।সামরিক আধুনিকীকরণের ধীরগতি২০১৯ সালে জেট ভূপাতিত হওয়ার ঘটনার পর থেকেই, ভারত বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে আধুনিক অস্ত্র সংগ্রহ শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি সত্ত্বেও রাশিয়া থেকে এস-৪০০ মিসাইল প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কেনা হয়। ফ্রান্স থেকে রাফালে যুদ্ধবিমান আনা হয় এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে ড্রোন ও হেলিকপ্টার সংগ্রহ করা হয়।তবে, নিজস্ব সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদনের প্রচেষ্টাও চলছে, যদিও তা এখনো ধীরগতির। বিশ্লেষক দুষ্যন্ত সিং-এর মতে, এই আধুনিকীকরণের ফলাফল রাতারাতি পাওয়া সম্ভব নয়; এতে সময় লাগবে।প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জপ্রতিরক্ষা কেনাকাটায় মোদি সরকার দ্রুততার চেষ্টা করলেও, প্রশাসনিক দ্বন্দ্ব ও ক্ষমতার লড়াই আধুনিকীকরণের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২১ সালে সেনাবাহিনী পুনর্গঠনের দায়িত্বে থাকা প্রধান জেনারেলের মৃত্যু এই চেষ্টাকে আরও জটিল করেছে।ভারতের অর্থনীতি পাকিস্তানের তুলনায় প্রায় ১০ গুণ বড় হলেও, সামরিক ব্যয় এখনো জিডিপির ২ শতাংশের নিচে। বিশাল জনগোষ্ঠীর অন্যান্য প্রয়োজনীয়তার চাপে প্রতিরক্ষা খাতে আরও বড় বিনিয়োগ করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।বৈশ্বিক পরিস্থিতির প্রভাবচীনের সঙ্গে সীমান্ত সংঘাতের কারণে ভারতকে হাজার হাজার সেনা সীমান্তে মোতায়েন রাখতে হয়েছে, যা আধুনিকীকরণ প্রচেষ্টাকে ব্যয়বহুল করে তুলেছে। অন্যদিকে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়া থেকে অস্ত্র সরবরাহে বিলম্ব হয়েছে।সরকারি প্রতিবেদন অনুসারে, বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও বৈশ্বিক রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অস্ত্রের অর্ডার প্রক্রিয়া থমকে গেছে।বর্তমান অবস্থানগত পাঁচ বছরে ভারত বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারক হয়েছে। বর্তমানে ভারত রাশিয়ার পাশাপাশি ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের দিকেও ঝুঁকছে।রাশিয়া থেকে কেনা পাঁচটি এস-৪০০ মিসাইল প্রতিরক্ষাব্যবস্থার মধ্যে তিনটি ইতোমধ্যে মোতায়েন করা হয়েছে। ফ্রান্স থেকে কেনা ৩৬টি রাফালে যুদ্ধবিমান যুক্ত হয়েছে, আরও ২৬টি কেনার পরিকল্পনা রয়েছে। ভারত নিজস্ব যুদ্ধজাহাজও তৈরি করে মোতায়েন করছে।প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক অজয় শুক্লার মতে, রাফালে বিমান যুক্ত হওয়ায় ভারতীয় বিমানবাহিনীর সক্ষমতায় বড় পরিবর্তন এসেছে। তবে, তিনি সতর্ক করেছেন, “অস্ত্র থাকার মানেই যুদ্ধের সময় কার্যকর প্রতিরোধ নিশ্চিত করা নয়। ব্যবহারের দক্ষতার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে।”

সম্পর্কিত ট্যাগ :

মন্তব্য (০)

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না. প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে *

সম্পর্কিত খবর