ব্রেকিং নিউজ :

দৃষ্টিকোণ নিউজ একটি নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ অনলাইন সংবাদ মাধ্যম, যা সর্বশেষ সংবাদ ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করে।

আমরা দেশের ও বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ খবর, রাজনীতি, অর্থনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর নির্ভরযোগ্য প্রতিবেদন প্রকাশ করি।

যুক্তরাষ্ট্র

ট্যারিফ ইস্যুতে পিছু হটার ইঙ্গিত দিচ্ছেন ট্রাম্প

ট্যারিফ ইস্যুতে পিছু হটার ইঙ্গিত দিচ্ছেন ট্রাম্প Image ট্রাম্প | ছবি: দৃষ্টিকোণ নিউজ
ইমেইল :

গত এক সপ্তাহে আমি যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা থেকে ওয়াশিংটন ডিসি এবং পরে কানাডার সাসকাচেওয়ানে ভ্রমণ করেছি। এই যাত্রাপথে আমি প্রত্যক্ষ করেছি, বিশ্ব অর্থনীতির চালনার ধরনে ঐতিহাসিক পরিবর্তনের স্পষ্ট প্রভাব। এখন প্রচণ্ড অনিশ্চয়তার মাঝে, কেউই নিশ্চিত নয়, ভবিষ্যতে গন্তব্য কোথায়।হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেন থেকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) সদর দফতর পর্যন্ত হাঁটা সময় মাত্র ৯ মিনিট। এই ছোট্ট পথে গত কয়েক দিনে দুটি বিপরীত বিশ্বের মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটেছে।হোয়াইট হাউস হলো সেই স্থান, যেখানে চলতি মাসের শুরুতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক বিতর্কিত চার্ট ও প্রশ্নবিদ্ধ সমীকরণ দিয়ে তার "পারস্পরিক ট্যারিফ" নীতির ঘোষণা দেন। আর আইএমএফের বৈঠকস্থল, যেখানে মাত্র তিন সপ্তাহ পর, বিশ্বের অর্থমন্ত্রীগণ বাজার বিশৃঙ্খলা আর বিভ্রান্তির মাঝেই ক্ষত মেরামতের চেষ্টা করছেন।IMF, G7 ও G20 সদস্যদের বৈঠকে একটি বিশেষ দৃশ্যপট দেখা যায়। মার্কিন প্রতিনিধিরা সরাসরি শত্রুতা নয়, বরং হতাশা, বিস্ময় এবং গভীর উদ্বেগের সম্মুখীন হন। বিশ্ব অর্থনীতি যখন মহামারি, যুদ্ধ এবং জ্বালানি সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, ঠিক তখন মার্কিন নীতির কারণে আবারও সংকটের মুখে পড়ছে।বিশেষ করে পূর্ব এশীয় দেশগুলোর উদ্বেগ ছিল সবচেয়ে প্রবল। এপ্রিলে তাদের মার্কিন চাকরি "লুট ও ডাকাতি" করার অভিযুক্ত করা হয়, যদিও এদের অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র।G7 বৈঠকের মূল আলোচনা ছিল জাপানের ক্ষোভ। মার্কিন বানিজ্য নীতির মোড় ঘুরে যাওয়ায় তারা নিজেদের বিশ্বাসঘাতকতার শিকার মনে করছে। জাপানের অর্থমন্ত্রী কাতসুনোবু কাতো স্পষ্ট ভাষায় জানান,"মার্কিন ট্যারিফ ব্যবস্থা অত্যন্ত হতাশাজনক, যা প্রবৃদ্ধিতে আঘাত করছে এবং বাজার অস্থিতিশীল করে তুলছে।"পিছু হটার সুরটালমাটাল বন্ড মার্কেটের প্রেক্ষাপটে এই সপ্তাহে মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধে পিছু হটার মৃদু সংকেত আরও জোরালো হয়ে ওঠে। চীনের সঙ্গে আলোচনায় ফেরার জন্য যুক্তরাষ্ট্র একের পর এক "জয়পতাকা" ওড়ায়—চীনের অর্থনৈতিক সাফল্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শন থেকে শুরু করে "বিশ্ব অর্থনীতির সুন্দর ভারসাম্য পুনর্গঠন" এর প্রস্তাব পর্যন্ত।তবে প্রত্যাশিত মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বসেন্ট এবং তার চীনা সমকক্ষের বৈঠক বাস্তবায়িত হয়নি।বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি এখন ধারণা করছেন, যুক্তরাষ্ট্র আস্তে আস্তে নিজেদের অতিক্রমের জায়গা থেকে পিছু হটছে, যদিও প্রকাশ্যে তা স্বীকার করা হচ্ছে না।বিশ্বের

বড় বড় রিটেইলার প্রতিষ্ঠান যেমন ওয়ালমার্ট ও টার্গেটের সিইওরা প্রেসিডেন্টকে সতর্ক করেছেন, মে মাসের শুরু থেকেই পণ্যশূন্য তাকের সমস্যা দেখা দিতে পারে।বিশেষভাবে লক্ষণীয় হলো, চীন থেকে লস অ্যাঞ্জেলেস বন্দরে কনটেইনার ট্রাফিকের ধস। IMF এর গবেষকরা জানিয়েছেন, সেটেলাইট ইমেজ থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে চীনা বন্দরগুলো থেকে কম এবং অনেক খালি জাহাজ ছেড়ে যাচ্ছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র পক্ষ থেকে এসব অস্বীকার করা হচ্ছে।ওয়েস্ট উইং এর নাটকীয়তাIMF বৈঠকের শেষে তুলনামূলক শান্ত অবস্থা বিরাজ করেছে। এর কারণ হলো, মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বসেন্ট ট্যারিফ ইস্যুতে কর্তৃত্ব গ্রহণ করেছেন এবং বাজারকে কিছুটা স্থিতিশীল করেছেন।আন্তর্জাতিক কূটনীতিকরা বলছেন, ট্যারিফ নীতিতে ৯০ দিনের বিরতি এসেছে অনেকটা ওয়েস্ট উইং এর হাস্যকর নাটকের কারণে।শোনা যাচ্ছে, বসেন্ট প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে বন্ড মার্কেটের ক্ষতি সম্পর্কে বোঝাতে সক্ষম হন তখনই, যখন অন্য এক হোয়াইট হাউস উপদেষ্টা একটি ভুয়া বৈঠকের ফাঁদ পেতে "পারস্পরিক ট্যারিফ সমীকরণের" মূল রচয়িতা পিটার নাভারোকে ওভাল অফিসের আশেপাশে টহল দেওয়া থেকে দূরে সরিয়ে রাখেন।ওয়াল স্ট্রিটের কিছু বড় কর্পোরেট নেতারা মনে করেন, নাভারোকে বরখাস্ত করা ছাড়া স্বাভাবিকতা ফিরে আসবে না। তবে ট্রাম্প নাভারোকে বরখাস্ত করবেন না বলেই ধারণা করা হচ্ছে, কারণ তিনি জানুয়ারী ৬ দাঙ্গার সমর্থনে জেল খেটেছেন এবং প্রেসিডেন্টের প্রতি এখনো অনুগত।এই পুরো পরিস্থিতি যেন ট্রাম্পের রাজদরবার নিয়ে বাস্তব সময়ের কোনও হিলারি ম্যানটেল উপন্যাস। কিন্তু এর ফলে অর্থনীতিবিদ ও সরকারগুলো এখন অচিন্তনীয় বিষয় নিয়েও ভাবতে শুরু করেছে—এমনকি তার আশঙ্কাই তাদের সরাসরি ট্যারিফের চেয়ে বেশি চিন্তিত করছে।ভয়াবহ সম্ভাবনাবর্তমানে ছড়িয়ে পড়ছে কিছু ভয়ঙ্কর সম্ভাবনার গুজব।বিশ্বজুড়ে আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে "সোয়াপ লাইন" নামে পরিচিত ব্যবস্থাপনা রয়েছে, যার মাধ্যমে মার্কিন ডলারের প্রবাহ নিশ্চিত করা হয়। কিন্তু এখন আশঙ্কা করা হচ্ছে,"যুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যতে কূটনৈতিক অস্ত্র হিসেবে সোয়াপ লাইনের নিয়ন্ত্রণ ব্যবহার করতে পারে"।এটি হয়তো অকল্পনীয় মনে হয়, কিন্তু এখন আর সম্পূর্ণ অসম্ভবও নয়।আরেকটি সম্ভাবনা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত থাকা দেশগুলোর উপর চাপ সৃষ্টি করে তাদের মার্কিন সরকারি বন্ডে কর বসানো। মার্কিন সরকারের কিছু উপদেষ্টার বক্তব্য ও গবেষণাপত্রে এই বিষয়গুলো ইঙ্গিত করা হয়েছে।

সম্পর্কিত ট্যাগ :

মন্তব্য (০)

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না. প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে *

সম্পর্কিত খবর