টেস্ট ক্রিকেটে দীর্ঘদিন ধরে অস্ট্রেলিয়ার নির্ভরতার প্রতীক নাথান লায়নকে ১২ বছর পর বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল দলটি। আর সেই সাহসী রদবদলের ফল খুব একটা ইতিবাচক হলো না, অন্তত ব্যাট হাতে নয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টেস্টের প্রথম ইনিংসে মাত্র ২২৫ রানেই গুটিয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়া।জ্যামাইকার কিংস্টনে স্যাবাইনা পার্কে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচটি ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে, কারণ এটিই ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে অনুষ্ঠিত প্রথম দিবারাত্রির টেস্ট। গোলাপি বলে খেলা হওয়ায় স্পিনারদের ভূমিকা কমে যাবে—এই ভাবনায় দীর্ঘ ১২ বছর পর একাদশ থেকে বাদ পড়েছেন অফ স্পিনার নাথান লায়ন।লায়নের জায়গায় দলে যুক্ত হয়েছেন স্কট বোল্যান্ড। এই ম্যাচে চারজন বিশেষজ্ঞ পেসার এবং একজন অলরাউন্ডার নিয়ে পাঁচ পেসার খেলাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, যা তাদের রক্ষণাত্মক নয়, বরং আক্রমণাত্মক কৌশলের ইঙ্গিত দেয়।কিন্তু ব্যাটিং লাইনআপের পারফরম্যান্স ছিল হতাশাজনক। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে একসময় ৩ উইকেটে ১৫৭ রানে অবস্থান করছিল দলটি। সেখান থেকে পরবর্তী ৬৮ রানে তারা হারায় শেষ ৭ উইকেট।অস্ট্রেলিয়ার কেউই হাফসেঞ্চুরি করতে পারেননি। সর্বোচ্চ ৪৮ রান আসে স্টিভেন স্মিথের ব্যাট থেকে, আর ক্যামেরন গ্রিন করেন ৪৬ রান। একসময় যেই স্যাবাইনা পার্কে ৭০ বছর আগে অস্ট্রেলিয়া তুলেছিল তাদের সর্বোচ্চ টেস্ট স্কোর (৭৫৮/৮ ডিক্লেয়ার)
, সেই মাঠেই এবার এমন ধস—ক্রিকেটীয় অস্থিরতার বড় নজির।এই ধসের পেছনে মূল অবদান ক্যারিবীয় পেসারদের। শামার জোসেফ একাই নেন ৪ উইকেট, আর জাস্টিন গ্রিভস ও জেডেন সিলস শিকার করেন ৩টি করে উইকেট। অর্থাৎ, তিন পেসার মিলে অস্ট্রেলিয়ার পুরো ব্যাটিং লাইনআপ গুঁড়িয়ে দিয়েছেন।দিনের শেষে ব্যাট হাতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজও ছিল চাপে। ৯ ওভার শেষে তারা সংগ্রহ করে ১ উইকেটে ১৬ রান। অস্ট্রেলিয়ার বোলিং আক্রমণে কেভলন অ্যান্ডারসনকে বোল্ড করেন অভিজ্ঞ মিচেল স্টার্ক, যিনি এই ম্যাচে খেলছেন তার ১০০তম টেস্ট।চোখ এখন দ্বিতীয় দিনেপ্রথম দিন শেষে দুই দলই নিজেদের শক্তি ও দুর্বলতা দেখিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার শক্তিশালী পেস আক্রমণ যেমন প্রতিপক্ষকে চাপে রেখেছে, তেমনি ব্যাটিং ব্যর্থতা বড় প্রশ্ন তুলছে। দলের সিনিয়র ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বহীনতা এবং লায়নের অনুপস্থিতিতে স্পিন বিভাগ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে ক্রিকেট বিশ্লেষকরা।লায়নকে বাদ দেওয়ার পরিণতি, নাকি কন্ডিশনের ভুল মূল্যায়ন? অস্ট্রেলিয়া ১২ বছর পর লায়নের মতো একজন ধারাবাহিক বোলারকে বাদ দিয়েছে কেবল গোলাপি বলের কারণে। কিন্তু এর বদলে তারা কি হারিয়েছে দলীয় ভারসাম্য? সেটিই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং ব্যর্থতার পর দ্বিতীয় ইনিংসে পিচ যদি স্পিন সহায়ক হয়, তবে লায়নের অভাব অস্ট্রেলিয়ার জন্য বুমেরাং হয়ে ফিরতে পারে।
মন্তব্য (০)