ব্রেকিং নিউজ :

দৃষ্টিকোণ নিউজ একটি নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ অনলাইন সংবাদ মাধ্যম, যা সর্বশেষ সংবাদ ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করে।

আমরা দেশের ও বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ খবর, রাজনীতি, অর্থনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর নির্ভরযোগ্য প্রতিবেদন প্রকাশ করি।

কলাম

অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েও কেন বাড়ছে অপরাধ? প্রশ্নের মুখে কার্যকরতা

অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েও কেন বাড়ছে অপরাধ? প্রশ্নের মুখে কার্যকরতা Image সংগৃহীত | ছবি: সংগৃহীত
ইমেইল :
৪০

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক উত্তাপ, সামাজিক অস্থিরতা ও বিচারব্যবস্থার দুর্বলতার প্রেক্ষাপটে অপরাধ প্রবণতা ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা নিয়ে উঠেছে তীব্র সমালোচনা ও প্রশ্ন।নির্বাচনের প্রস্তুতির এই সময়টিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজ সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা ও রাজনৈতিক সংস্কার নিয়ে বেশি সরব থাকলেও, বাড়তে থাকা নারী ও শিশু নির্যাতন, মব সন্ত্রাস এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতির বিষয়গুলো অবহেলিত রয়ে গেছে।নারী ও শিশু নির্যাতন: ভয়াবহ চিত্রবাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়েই ১ হাজার ৫৫৫ জন নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, যার মধ্যে ৭৩৬ জন কন্যাশিশু। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪৮১ জন নারী, এর মধ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা রয়েছে ১০৬টি এবং ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন ১৭ জন নারী।এই পরিসংখ্যান শুধু ভয়াবহই নয়, তা পূর্ববর্তী বছরগুলোর তুলনায় আরও বেশি উদ্বেগজনক। বাস্তব চিত্র আরও ভয়ানক হতে পারে, কারণ অনেক ঘটনা লুকিয়ে রাখা হয় সামাজিক চাপ বা নিরাপত্তাহীনতার কারণে।আইনের ফাঁকফোকর আর ডিএনএ ব্যতিরেকে বিচার?অন্তর্বর্তী সরকার ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫’-এ এমন কিছু ধারা যুক্ত করেছে, যেখানে ডিএনএ প্রমাণ ছাড়া বিচার সম্পন্ন করার সুযোগ রাখা হয়েছে। যা ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি করতে পারে। কারণ ধর্ষণের মতো গুরুতর অভিযোগে ডিএনএ প্রমাণ অপরিহার্য বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।এ ছাড়া যৌতুক সংক্রান্ত নির্যাতনের মামলা ‘মধ্যস্থতার মাধ্যমে নিষ্পত্তি’ করার সুযোগ রেখে ভুক্তভোগীদের অধিকতর ঝুঁকির মুখে ফেলা হয়েছে। এতে নারীরা বিচার পাওয়ার পরিবর্তে অপরাধীর সঙ্গেই আপসে বাধ্য হবেন—এমন আশঙ্কা বাড়ছে।মব সন্ত্রাস: গণবিচারের নামে সহিংসতাসাম্প্রতিক সময়ে দেশে মব সন্ত্রাস বা গণপিটুনির ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, গত ৯ মাসে ২০২টি মব সন্ত্রাসে ১৩১ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও ১৬৫ জন। বেসরকারি তথ্য মতে, শুধুমাত্র জুন মাসেই

৪১টি ঘটনায় ১০ জন নিহত হয়েছেন।এই ধরনের ঘটনাকে ‘স্ট্রিট জাস্টিস’ বা ‘জঙ্গল জাস্টিস’ বলা হলেও, এটি আসলে বিচারব্যবস্থার ওপর সাধারণ মানুষের আস্থাহীনতার প্রতিফলন। উদ্বেগজনক বিষয় হলো, সরকারের কিছু পর্যায়ে এই সহিংসতাকে নীরবভাবে বৈধতা দেওয়ার প্রবণতাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে।আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের অবস্থান অবনমনগ্লোবাল পিস ইনডেক্স ২০২৫ অনুযায়ী, বাংলাদেশের শান্তি সূচকে অবস্থান নেমে এসেছে ১২৩তমে, যেখানে গত বছর ছিল ৯৩তম। সামাজিক নিরাপত্তা, রাজনৈতিক সহিংসতা ও অপরাধমূলক কার্যক্রমের বৃদ্ধির কারণেই এ অবনমন ঘটেছে।তরুণদের দৃষ্টিভঙ্গি ও সরকার-বিচ্ছিন্নতাএকশনএইড ও সানেম পরিচালিত এক যৌথ জরিপে দেখা গেছে, ৮০ শতাংশ তরুণ অগ্নিসংযোগ, চুরি ও মব সহিংসতা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাঁরা সবচেয়ে বেশি সংস্কার চান শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, মানবাধিকার এবং নিরাপত্তা খাতে।এই জরিপে তরুণদের ভাবনার সঙ্গে সরকারের বাস্তব কর্মকাণ্ডের তীব্র পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।অপরাধবিজ্ঞানীদের দৃষ্টিকোণবিশিষ্ট অপরাধবিজ্ঞানীদের মতে, রাজনৈতিক-সামাজিক অনিশ্চয়তা, বিচারহীনতা, আর্থিক সংকট ও সামাজিক বন্ধনের অভাব—এই চারটি মূল কারণের কারণে সংঘাত-পরবর্তী সময়ে অপরাধপ্রবণতা বাড়ে।উদাহরণস্বরূপ, লাইবেরিয়ায় এক গবেষণায় দেখা গেছে যে ঝুঁকিপূর্ণ তরুণদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করলে অপরাধপ্রবণতা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়। কিন্তু বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এখনো পর্যন্ত এই ধরনের কোনো সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করেনি।শেষ কথাএটা অনস্বীকার্য যে বর্তমান অনিরাপদ সামাজিক বাস্তবতা শুধু এই সরকারের নয়, বরং দীর্ঘকালীন একটি প্রক্রিয়ার ফল। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা ছিল কিছু দৃশ্যমান ইতিবাচক পরিবর্তনের। সুশাসনের প্রত্যাশা পূরণে শুধুমাত্র রাজনৈতিক সমঝোতা যথেষ্ট নয়, বরং অপরাধ রোধে কার্যকর পরিকল্পনা ও বাস্তবভিত্তিক উদ্যোগ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি। তা না হলে, জনমনে সরকারের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না, বরং অপরাধ ও অব্যবস্থাপনার গ্যাঁড়াকলে দেশ আরও বিপজ্জনক দিকে ধাবিত হবে।

সম্পর্কিত ট্যাগ :

মন্তব্য (০)

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না. প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে *

সম্পর্কিত খবর