ব্রেকিং নিউজ :

দৃষ্টিকোণ নিউজ একটি নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ অনলাইন সংবাদ মাধ্যম, যা সর্বশেষ সংবাদ ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করে।

আমরা দেশের ও বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ খবর, রাজনীতি, অর্থনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর নির্ভরযোগ্য প্রতিবেদন প্রকাশ করি।

কলাম

ইসলামপন্থীদের নির্বাচনী ঐক্য: বাস্তব সম্ভাবনা না আবারও এক ব্যর্থ অধ্যায়?

ইসলামপন্থীদের নির্বাচনী ঐক্য: বাস্তব সম্ভাবনা না আবারও এক ব্যর্থ অধ্যায়? Image সংগৃহীত | ছবি: সংগৃহীত
ইমেইল :

বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ফের আলোচনায় এসেছে ইসলামি দলগুলোর নির্বাচনী ঐক্যের সম্ভাবনা। বর্তমান বাস্তবতায় একটি বড় অংশের ধারণা—আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে এই দলগুলো একটি সম্মিলিত প্ল্যাটফর্মে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছে। তবে প্রশ্ন রয়ে গেছে—এই ঐক্য আসলে আদৌ সফল হবে কিনা, আর জোট গঠিত হলে তার প্রভাব কতটা পড়বে নির্বাচনের মাঠে।ইসলামি রাজনীতির তিন ধারায় বিভক্ত বাস্তবতাবর্তমানে দেশে নিবন্ধিত ইসলামি দলের সংখ্যা ১০টির মতো। এ ছাড়া রয়েছে আরও কিছু অনিবন্ধিত ছোট ইসলামপন্থী সংগঠন, যারা নির্বাচনের সময় সক্রিয় হয়। মূলত, এসব দল তিনটি আদর্শিক ধারায় বিভক্ত: জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন সংস্কারপন্থী ধারার দল দেওবন্দি কওমি ধারার ইসলামি দল, যেমন ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ বেরলভি বা রেজভি আদর্শে বিশ্বাসী কয়েকটি ছোট দল তবে ঐক্যের ইতিহাস বলছে, জামায়াতে ইসলামী ছাড়া অন্য কোনো দল একাধিকবার জোট গড়লেও, জামায়াতের সঙ্গে ঐক্য করার ক্ষেত্রে একধরনের দ্বিধা সবসময়ই ছিল।ঐক্যের অতীত রেকর্ড বলছে, দীর্ঘস্থায়ী হয়নি একতাবদ্ধতা১৯৭৬ সালে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লিগ (আইডিএল) গঠনের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ইসলামি দলগুলোর মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে ১৯৭৯ সালে মাত্র ৬টি আসন জিতে জোটটির পথচলা শুরু হলেও দ্রুতই দলগত বিরোধে ভেঙে পড়ে।পরবর্তী সময়ে হাফেজ্জি হুজুরের নেতৃত্বে উলামা ফ্রন্ট গঠন হলেও, জামায়াতের মতবাদের কারণে তা তাদের ছাড়াই গঠিত হয়। আর এই ভাঙনের ধারা চলে এসেছে বর্তমান সময় পর্যন্ত।১৯৯১ সালে গঠিত ‘ইসলামী ঐক্যজোট’ একমাত্র সক্রিয় জোট হিসেবে কিছু আসনে প্রার্থী দিলেও, ভোটের প্রাপ্তি ছিল মাত্র ০.৮%। অথচ জামায়াতে ইসলামী এককভাবে পেয়েছিল ১২.

২% ভোট ও ১৮টি আসন। যা এই বাস্তবতাই তুলে ধরে—বাকিদের তুলনায় জামায়াত অনেক বেশি সংগঠিত, কিন্তু মতানৈক্যের কারণে এক ছাতায় থাকা কঠিন।এইবার জোট হলে কী হবে? জোট গড়ার পথে বাধা কোথায়?বর্তমান প্রেক্ষাপটে যে ‘ঐক্যচেষ্টা’ চলছে, সেখানে মূলত জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের সম্ভাব্য জোটকেই কেন্দ্র করে আলোচনা। কিন্তু ঐতিহাসিক বাস্তবতায় দেখা গেছে—এই দুই দল কখনোই এক প্ল্যাটফর্মে ছিল না।ধর্মীয় ব্যাখ্যার মতপার্থক্য, নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব এবং কৌশলগত মতানৈক্য এখনো স্পষ্টভাবে রয়ে গেছে। যদিও জামায়াত একাধিক আসনে প্রাথমিকভাবে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে, তবুও শরিকদের জন্য কতটা ছাড় দেবে, সেটা স্পষ্ট নয়।অন্যদিকে ইসলামি আন্দোলনসহ অনেক দলের মধ্যে জামায়াতবিরোধী মনোভাব দীর্ঘদিন ধরে আছে। তাই একটি বড় প্রশ্ন হলো—এই দলগুলো জামায়াতের নেতৃত্ব মেনে নেবে কি? আর যদি না নেয়, তবে এই ঐক্য আদৌ কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।ঐক্য হলে কতটা ভোট টানতে পারবে ইসলামি দলগুলো?অতীত পরিসংখ্যান বলছে, ইসলামি দলগুলোর সম্মিলিত ভোটব্যাংক ১৪–১৬ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এই ভোটে সরকার গঠন দূরে থাক, সংসদে উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি নিশ্চিত করাও কঠিন।তবে এবার রাজনৈতিক পরিস্থিতি একটু ভিন্ন। কারণ— আওয়ামী লীগ নির্বাচনে না এলে তাদের ভোট কোথায় যাবে, তা অনিশ্চিত ৪০% ভোটারই তরুণ, যারা এখনও সিদ্ধান্তহীন গত ১৬ বছরে সুষ্ঠু নির্বাচনের অভাব থাকায় জনমতের প্রকৃত চিত্র জানা যাচ্ছে না গণ–আন্দোলনের কারণে রাজনৈতিক মনোভাব পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে এইসব পরিবর্তন ইসলামি দলগুলোর জন্য একটি 'উইন্ডো অব অপরচুনিটি' হয়ে উঠতে পারে, যদি তারা সঠিকভাবে কৌশল গ্রহণ করে।দুর্নীতিমুক্ত ভাবমূর্তি ও ‘ভারত ইস্যু’তে লাভবান হতে পারে ইসলামপন্থীরাবর্তমানে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে দুর্নীতি ইস্যু অত্যন্ত স্পর্শকাতর। ইসলামি দলগুলো কখনো সরাসরি সরকারে না আসায়, তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলনামূলকভাবে কম।এ ছাড়া ভারতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক বরাবরই শীতল। ফলে অনেক ভোটার, যারা ভারতের প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন, তারা ইসলামি দলগুলোকে তুলনামূলক নিরপেক্ষ মনে করতে পারেন।নারী ও সংখ্যালঘুদের প্রতি অবস্থান কী হবে? ভোটারদের প্রশ্নভোটাররা এখন জানতে চান—ইসলামি দলগুলো ক্ষমতায় গেলে নারীদের শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণে কেমন ভূমিকা রাখবে? পাশাপাশি সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হবে?যেহেতু ইসলামি দলের কাঠামোয় এই গোষ্ঠীগুলোর উপস্থিতি নেই বললেই চলে, তাই তাদের রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে দলগুলো কী পদক্ষেপ নেবে, সেটিও ভোটের মাঠে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।উপসংহার: এইবারের ঐক্য ভিন্ন পথে যাবে কি?ইসলামি দলগুলোর মধ্যে এর আগেও একাধিকবার ঐক্যচেষ্টা হয়েছিল, তবে তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। তবে বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য অনুপস্থিতি, তরুণ ভোটারদের ভূমিকা এবং ভারত বিরোধী মনোভাব—এসব কিছুর সমন্বয়ে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে। এই ঐক্য সফল হবে কিনা, না কি আবারও মতানৈক্যের আগুনে ভস্মীভূত হবে—তা সময়ই বলে দেবে। তবে এটা নিশ্চিত যে, ইসলামি দলগুলো যদি বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কৌশল ঠিক করতে পারে, তবে এবারের নির্বাচনে তারা প্রথমবারের মতো কিছু বাস্তব ফলাফল অর্জনের পথে পা বাড়াতে পারে।

সম্পর্কিত ট্যাগ :

মন্তব্য (০)

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না. প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে *

সম্পর্কিত খবর