ব্রেকিং নিউজ :

দৃষ্টিকোণ নিউজ একটি নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ অনলাইন সংবাদ মাধ্যম, যা সর্বশেষ সংবাদ ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করে।

আমরা দেশের ও বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ খবর, রাজনীতি, অর্থনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর নির্ভরযোগ্য প্রতিবেদন প্রকাশ করি।

ফুটবল

জার্মানি ৭–১ ব্রাজিল: এক অপমানজনক স্মৃতি, যে বেদনার কোনো শেষ নেই

জার্মানি ৭–১ ব্রাজিল: এক অপমানজনক স্মৃতি, যে বেদনার কোনো শেষ নেই Image সংগৃহীত | ছবি: সংগৃহীত
ইমেইল :

২০১৪ সালের বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে জার্মানির ৭-১ গোলের ঐতিহাসিক জয় কেবল একটি ফুটবল ম্যাচে পরাজয় নয়, এটি ব্রাজিলিয়ান জাতির আত্মমর্যাদায় এক গভীর আঘাত। এই ম্যাচ ব্রাজিলের ক্রীড়াইতিহাস্যে একটি চিরস্থায়ী কালো দাগ, যার যন্ত্রণা এখনো জাতিগতভাবে বয়ে বেড়াচ্ছে দেশটি।জাতীয় ট্র্যাজেডি থেকে চিরন্তন যন্ত্রণায় রূপ নেওয়া হারবিশ্বের অনেক জাতির জীবনে কিছু কিছু ঘটনা জাতীয় শোক হয়ে থাকে। ব্রাজিলের জন্য ‘মারাকানা ট্র্যাজেডি’ যেমন ছিল অতীতের গ্লানিকর ঘটনা, ২০১৪ সালের এই সেমিফাইনাল ঠিক তেমনি বর্তমান সময়ের এক নতুন ট্র্যাজেডি। সাহিত্যিক নেলসন রদ্রিগেজ যেমন বলেছিলেন, “মারাকানাজো আমাদের হিরোশিমা।” অনেক ব্রাজিলিয়ান সমর্থকের কাছে ‘মিনেইরাও ট্র্যাজেডি’ ছিল সেই হিরোশিমার পুনরাবৃত্তি।এই হার শুধু মাঠে নয়, মানসিকভাবেও বিধ্বস্ত করে দিয়েছিল সমর্থকদের। কোটি ব্রাজিল সমর্থক আজও সেই ক্ষত ভুলতে পারেননি। এমনকি প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর সমর্থকেরাও মাঝেমধ্যেই এই বেদনাদায়ক পরাজয়ের কথা মনে করিয়ে দেয়। যেন ভ্যান গঘের বিখ্যাত উক্তি “Sadness will last forever” বাস্তবে রূপ নিয়েছে ব্রাজিলের জন্য।সেই দিন যা ঘটেছিল: এক ভয়াবহ বাস্তবতাতারিখ: ৮ জুলাই ২০১৪। মাঠ: স্তাদিও মিনেইরাও, বেলো হরিজেন্তে। বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে মুখোমুখি ব্রাজিল বনাম জার্মানি। ঘরের মাঠে খেলা হওয়ায় ব্রাজিলকেই এগিয়ে রেখেছিল অনেকেই। কিন্তু দলে নেইমার ও থিয়াগো সিলভার অনুপস্থিতি আশঙ্কার মেঘ জমিয়েছিল।ম্যাচের শুরুতে সব ছিল স্বাভাবিক। ১১তম মিনিটে টমাস মুলারের গোলে এগিয়ে যায় জার্মানি। তারপর শুরু হয় ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ। মাত্র ৬ মিনিটের ব্যবধানে জার্মানি করে ৪টি গোল। ২৯ মিনিটেই স্কোরলাইন দাঁড়ায় ৫-০।দর্শকরা ভাবতে পারেননি যা দেখছেন, তা বাস্তব। অনেকে তো ভেবেছিলেন, টিভিতে হাইলাইটস দেখানো হচ্ছে। কিন্তু মুহূর্তেই সবাই বুঝে ফেলেন, এটা দুঃস্বপ্ন নয়—এটাই নিষ্ঠুর বাস্তবতা।ব্রাজিলের রক্ষণভাগ ছিল সম্পূর্ণ অচল। তাদের খেলোয়াড়দের মানসিকভাবে বিধ্বস্ত মনে

হচ্ছিল। মাঠে জার্মান খেলোয়াড়দের একতরফা আধিপত্য ফুটবল ইতিহাসে এক নজিরবিহীন দৃশ্য তৈরি করেছিল।এক অসম্মান, এক গ্লানি—যা কোনো তুলনাতেই যায় না৭-১ ব্যবধানে হার যেন ব্রাজিলের আত্মমর্যাদায় চরম আঘাত। দ্বিতীয়ার্ধে জার্মানির গতি খানিকটা কম না হলে এই পরাজয় আরও ভয়াবহ হতে পারত। ম্যাচ শেষে জার্মান ডিফেন্ডার হুমেলস বলেন, “আমরা দ্বিতীয়ার্ধে ব্রাজিলকে অসম্মান না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।”জার্মান কোচ ইওয়াখিম লোও বলেন, “আমরা নিজেরাই হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম।” অন্যদিকে ব্রাজিল কোচ স্কলারি একে বলেন তাঁর জীবনের সবচেয়ে খারাপ দিন। বলেন, “এই হারের সমস্ত দায় আমার।”অধিনায়ক ডেভিড লুইজ ম্যাচ শেষে কাঁদতে কাঁদতে জাতির কাছে ক্ষমা চান। আর তখন নেইমার ও সিলভার চেহারায় ফুটে উঠেছিল হতবাক, স্তব্ধ এক অভিব্যক্তি।‘ও গ্লোবো’ পত্রিকা প্রথম পাতায় শিরোনাম করেছিল— “লজ্জা, গ্লানি এবং অপমান”। খেলোয়াড়দের সবাইকে তারা দিয়েছিল শূন্য রেটিং।স্ট্রাইকার ফ্রেড বলেছিলেন, “আমি চাইছিলাম একটা গর্তে লুকিয়ে যাই, যেখান থেকে আর কোনোদিন বের হতে না হয়।”হুলিও সিজারের দৃষ্টিকোণ: যে বেদনা চিরস্থায়ীসেই ম্যাচে ব্রাজিলের গোলবার সামলানো হুলিও সিজার আজও সেই স্মৃতি ভুলতে পারেননি। পরে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমি যখন চোখ বন্ধ করি, তখনো সেই দিনটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে। আমি কল্পনা করি, বহু বছর পর একদিন খবর আসবে— ‘৭ গোল হজম করা গোলরক্ষক হুলিও সিজার মারা গেছেন।’”এ কথাগুলোই বলে দেয় এই ম্যাচ কেবল একটি পরাজয় নয়, এক জাতির আত্মায় খোদাই করে দেওয়া দুঃস্বপ্নের নাম।শেষ কথা: শুধুই হার নয়, এক জাতিগত মানসিক বিপর্যয় ব্রাজিল-জার্মানি ৭-১ ম্যাচটি কেবল স্কোরবোর্ডে লেখা একটি ফলাফল নয়। এটি একটি গর্বিত ফুটবল জাতির গভীরতম দুঃখ, এক জীবন্ত ট্র্যাজেডি। এটি প্রমাণ করে, ফুটবল কখনো কখনো যুদ্ধের চেয়েও বেশি আবেগের বহিঃপ্রকাশ, আর একটি ম্যাচ হতে পারে একটি জাতির বহু বছরের গৌরবকে মুহূর্তেই ধুলায় মিশিয়ে দেওয়ার উপাখ্যান।

সম্পর্কিত ট্যাগ :

মন্তব্য (০)

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না. প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে *

সম্পর্কিত খবর