রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনে নারীর নতুন মাত্রা২০২৪ সালের গণ–অভ্যুত্থানে নারীদের সাহসী অংশগ্রহণ শুধু রাজপথেই নয়, বরং রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে নারীর অধিকারের পুনর্নির্ধারণের দাবি তোলে। বাংলাদেশের ৫১% নারী জনসংখ্যা রাষ্ট্র গঠনে তাদের অধিকার ও প্রতিনিধিত্ব দাবি করার পূর্ণ নৈতিক অধিকার রাখে। নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন: একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ১৮ নভেম্বর ২০২৪, অন্তর্বর্তী সরকার একটি নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন করে, যার উদ্দেশ্য ছিল—নারীর প্রতি বৈষম্য চিহ্নিতকরণআইনি ও রাজনৈতিক কাঠামোয় সংস্কারের প্রস্তাবনা তৈরিকমিশনের ২০২৫ সালের ১৯ এপ্রিল প্রকাশিত প্রতিবেদনে ১৭টি অধ্যায়ে ৪৩৩টি সুপারিশ দেওয়া হয়েছে, যা তিনটি ধাপে বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাবিত:তাৎক্ষণিক বাস্তবায়নযোগ্য পদক্ষেপনির্বাচিত সরকারের প্রথম পাঁচ বছরে সম্পাদনযোগ্য কার্যক্রমভবিষ্যৎ নারীবান্ধব রাষ্ট্র গঠনের কৌশলগুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো:সংসদে সমানসংখ্যক নারী প্রতিনিধি নির্বাচনযৌন হয়রানি প্রতিরোধ নীতিমালা ও অভিযোগ কমিটিবিয়ের সর্বনিম্ন বয়স ১৮ নির্ধারণসম্পত্তিতে সমান অধিকার নিশ্চিতকরণঐচ্ছিক অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়নবৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতিনারীদের জন্য পূর্ণ বেতনের ছুটিযৌনকর্মীদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতিগণমাধ্যমে নারীর ৫০% অংশগ্রহণস্থায়ী নারী কমিশন প্রতিষ্ঠা অভিন্ন পারিবারিক আইন: সমতার পথে একটি যুগান্তকারী ধাপঅভিন
্ন পারিবারিক আইন—সব নাগরিকের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য একটি আইন কাঠামো, যা:বিয়ে, তালাক, সন্তানের হেফাজত ও উত্তরাধিকার—সবক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিত করেধর্মীয় অনুভূতিকে সম্মান করে সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা করেমুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান—সব ধর্মের নারীরা প্রচলিত আইন দ্বারা ভিন্নভাবে এবং বৈষম্যের শিকার হন। অভিন্ন আইন এ বৈষম্য দূর করবে। ইসলামে সমান অধিকারের জায়গাকোরআন নারীকে সম্পত্তির অধিকার দিয়েছে (সুরা নিসা ৪:১১-১২)‘অছিয়ত’ বা উইলের মাধ্যমে সামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পত্তি বণ্টনের সুযোগ রাখা হয়েছেইসলামী ফিকাহে যুগোপযোগী পরিবর্তনের নজির আছে—এটা নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় সহায়ক প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিরোধরক্ষণশীল গোষ্ঠীর আপত্তি: ধর্মীয় অনুভূতির দোহাই দিয়ে কমিশন বাতিলের দাবিরাজনৈতিক অনীহা ও সিদ্ধান্তহীনতাসিডও সনদের পূর্ণ অনুমোদন হয়নি এখনো রাষ্ট্রের করণীয়:তাৎক্ষণিক সুপারিশ বাস্তবায়ননীতিগত রূপরেখা প্রণয়নবিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনজনমত সংগ্রহ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনাসংবিধান ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষানারী সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন শুধু একটি নথি নয়—এটি সমতা, মানবাধিকার ও ন্যায়ের ভিত্তিতে একটি আধুনিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ নির্মাণের দিকনির্দেশনা। রাষ্ট্রের এখন দায়িত্ব এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করে নারীবান্ধব বাংলাদেশ গড়ার পথে সাহসী অগ্রগতি নিশ্চিত করা।
মন্তব্য (০)