ব্রেকিং নিউজ :

দৃষ্টিকোণ নিউজ একটি নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ অনলাইন সংবাদ মাধ্যম, যা সর্বশেষ সংবাদ ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করে।

আমরা দেশের ও বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ খবর, রাজনীতি, অর্থনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর নির্ভরযোগ্য প্রতিবেদন প্রকাশ করি।

কলাম

এসএসসির ফলাফল যেন আত্মহত্যার কারণ না হয়

এসএসসির ফলাফল যেন আত্মহত্যার কারণ না হয় Image সংগৃহীত | ছবি: সংগৃহীত
ইমেইল :

পরীক্ষায় প্রত্যাশিত ফল না পাওয়া শিক্ষার্থীদের হতাশা, পরিবার ও সমাজের চাপ এবং দৃষ্টিভঙ্গিগত সংকীর্ণতা—এই মিলিত চাপে যখন একটি জীবন শেষ হয়ে যায়, তখন প্রশ্ন ওঠে: দায় কার?২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের দিন ঘনিয়ে আসছে। সম্ভাব্য তারিখ ১৩ জুলাই। প্রায় ১৯ লাখ পরীক্ষার্থী দমবন্ধ করা এক প্রতীক্ষার মধ্যে দিন গুনছে—কে জিপিএ-৫ পাবে, কে পারবে না—এই দোটানায় ভবিষ্যৎ নয়, যেন জীবনটাই ঝুলে আছে।ফলাফল নিয়ে আতঙ্ক: আত্মহত্যা কি একমাত্র পথ?আমাদের সমাজে এখনও পরীক্ষার ফলাফলকে জীবনের সফলতা বা ব্যর্থতার একমাত্র মানদণ্ড হিসেবে ধরা হয়। কেউ জিপিএ-৫ না পেলে যেন তার সব দরজা বন্ধ হয়ে যায়। এই মানসিক চাপই অনেককে ঠেলে দেয় চরম সিদ্ধান্তের দিকে।গত বছর এসএসসি ফল প্রকাশের মাত্র আট ঘণ্টার মধ্যে নয়জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে, যাদের মধ্যে ছয়জনই ছিল মেয়ে।কারা বেশি ঝুঁকিতে?বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ফল খারাপ করা শিক্ষার্থীদের চেয়ে তাদের পরিবার-পরিজনের মানসিক চাপ, গালমন্দ ও অপমানই বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মতে, প্রতিবছর প্রায় ১৩ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে, যাদের একটি বড় অংশ শিক্ষার্থী।দায় শুধু শিক্ষার্থীর নয়আমরা ফল খারাপের জন্য শুধু শিক্ষার্থীকে দায়ী করি, অথচ শিক্ষাব্যবস্থা, সামাজিক চাপ, মিডিয়া ও অভিভাবকদের মানসিক প্রস্তুতির ঘাটতি এর জন্য সমানভাবে দায়ী।পাস করা শিক্ষার্থীদের মুখেই সব আলো, আর যারা অকৃতকার্য হয়, তারা লুকিয়ে থাকে ঘরের কোণে। এই বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে।মানসিক সংকটের

লক্ষণ চেনা জরুরিমনোবিজ্ঞানীরা বলেন, কিছু লক্ষণ থেকে আত্মহত্যার ঝুঁকিতে থাকা শিক্ষার্থীদের শনাক্ত করা যায়: মৃত্যু নিয়ে বারবার কথা বলা বা ইঙ্গিত দেওয়া নিজেকে বন্ধু ও পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করা অসাধারণভাবে মনমরা হয়ে যাওয়া বা হঠাৎ অতিরিক্ত উৎফুল্ল হওয়া প্রিয় জিনিস অন্যকে দিয়ে দেওয়া স্কুল বা সামাজিক কাজে অনাগ্রহ এমন অবস্থায় তাদের পাশে থাকাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।আত্মহত্যা রোধে করণীয়১. পরীক্ষা ও ফলাফল পদ্ধতির সংস্কার করা ২. ফল প্রকাশের আগেই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মানসিক প্রস্তুতি দেওয়ার উদ্যোগ ৩. সোশ্যাল মিডিয়ায় ফলাফল উদযাপন সীমিত রাখা ৪. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষিত কাউন্সেলর নিয়োগ ৫. মেয়েদের জন্য আলাদা সহায়তা কর্মসূচি চালু ৬. পরিবারে ভালোবাসা ও মানসিক সমর্থনের পরিবেশ নিশ্চিত করাসফলতা মানে শুধু জিপিএ-৫ নয়বিজ্ঞানী আইনস্টাইন, বিল গেটস, স্টিভ জবস কিংবা চার্লস ডারউইন—তারা কেউই পরীক্ষায় সব সময় সফল ছিলেন না। কিন্তু পরে পৃথিবীজয় করেছেন।একটি খারাপ ফলাফল মানেই সব শেষ নয়। বরং সেটি হতে পারে নতুন করে নিজেকে আবিষ্কারের সুযোগ।ভালোবাসা ও সহানুভূতিই বড় শক্তিএকজন শিক্ষার্থী যদি বুঝতে পারে—সে যেমন আছে, তেমন করেই ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য, তবে সে হতাশা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে। চলুন, পরীক্ষার ফলাফলকে নয়—শিক্ষার্থীর জীবনের প্রতি ভালোবাসাকে প্রাধান্য দিই। কারণ, একটি জীবন—একটি ভবিষ্যৎ, তার চেয়ে মূল্যবান কিছু নেই।

সম্পর্কিত ট্যাগ :

মন্তব্য (০)

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না. প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে *

সম্পর্কিত খবর