বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সম্প্রতি এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিনকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে সরকার তাঁকে পদ থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত নিলেও এখনো দাপ্তরিক আদেশ জারি হয়নি, ফলে মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে অচলাবস্থা।❖ হঠাৎ সরে দাঁড়ানো ও অনুপস্থিতিজাপানের সঙ্গে বৈঠকে পররাষ্ট্রসচিবের অনুপস্থিতি প্রথমবারের মতো নজরে আসে, যা কূটনৈতিক মহলে বিস্ময় সৃষ্টি করে। জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত ১৫ মে-র ওই বৈঠকে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মো. নজরুল ইসলাম। এর আগের ১০ দিনেও কোনো আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে অংশ নেননি জসীম উদ্দিন।❖ পদত্যাগ না হলেও দায়িত্বহীন৭ মে জসীম উদ্দিনকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে তিনি আর পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে থাকছেন না। সেইদিনই পররাষ্ট্রবিষয়ক নিয়োগ ও শৃঙ্খলাবিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে তাঁকে উপস্থিত না থাকতে মৌখিকভাবে বলা হয়। কিন্তু এখনো তাঁর স্থলাভিষিক্ত কে হবেন, তা চূড়ান্ত হয়নি।❖ পাঁচ কূটনীতিকের সংক্ষিপ্ত তালিকাপররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো.
তৌহিদ হোসেন পাঁচজন কূটনীতিকের নাম দিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করেছেন, যাঁরা সবাই বিসিএস (পররাষ্ট্র) ক্যাডারের ১৫তম ব্যাচের। এদের মধ্য থেকেই নতুন পররাষ্ট্রসচিব বেছে নেওয়া হবে।❖ অফিসার্স ক্লাবের সদস্যপদ স্থগিতমন্ত্রণালয়ের অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে তোলে অফিসার্স ক্লাবের পক্ষ থেকে ১২ মে জসীম উদ্দিনের সদস্যপদ স্থগিতের ঘোষণা। দুর্নীতি ও নৈতিক স্খলনের অভিযোগে তাঁর সদস্যপদ স্থগিত করা হয়। এর ফলে জসীম উদ্দিনের বিদায় যেন অসম্মানজনক না হয়, তা নিয়ে সরকারের বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে। বিকল্প হিসেবে তাঁকে রাষ্ট্রদূত, ফরেন সার্ভিস একাডেমির রেক্টর অথবা বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা করার প্রস্তাব উঠেছে।❖ ইতিহাসে বিরল সিদ্ধান্তপররাষ্ট্রসচিব পদে মাত্র এক বছরের কম সময়ের মধ্যে কাউকে সরিয়ে দেওয়ার ঘটনা বাংলাদেশে বিরল। স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র তিনবার এমন ঘটনা ঘটেছে। জসীম উদ্দিন ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে পদে যোগ দেন, আর ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে তাঁর অবসরে যাওয়ার কথা ছিল।❖ অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও প্রচারণাসামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলমান কূটনীতিকদের পক্ষে-বিপক্ষে প্রচারণা এবং উড়ো ই-মেইলের ভিড় পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, কিছু কর্মকর্তার দলীয় আচরণ এবং পক্ষপাতিত্ব পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিতর্কিত করেছে।❖ নতুন শক্তির উত্থানরোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ পাওয়া খলিলুর রহমান এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ক দূত লুৎফে সিদ্দিকীর মতো ব্যক্তিদের ভূমিকা ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। তাঁদের নিয়োগের ফলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা অনেকক্ষেত্রেই উপেক্ষিত হয়ে পড়েছে।❖ বিদেশি অংশীদারদের বিরূপ প্রতিক্রিয়াপররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দীর্ঘসূত্রতা ও সিদ্ধান্তহীনতা দেখে পশ্চিমা দেশগুলোর অনেকেই এখন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বেশি আগ্রহী। এটি মন্ত্রণালয়ের প্রতি বিদেশিদের আস্থার অভাবকেই নির্দেশ করে।❖ অভিজ্ঞদের দৃষ্টিভঙ্গিসাবেক রাষ্ট্রদূত মো. হুমায়ুন কবীর মন্তব্য করেছেন, "এই সন্ধিক্ষণে বাংলাদেশের কূটনীতিকদের দক্ষতা ও পেশাদারিত্বই দেশের ভাবমূর্তি রক্ষার একমাত্র উপায়।"পররাষ্ট্রসচিব পদে পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক ধরনের অচলাবস্থা ও বিভ্রান্তি চলছে। সিদ্ধান্তহীনতা, দলীয়করণ, অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং বিদেশি মিত্রদের আস্থাহীনতা পরিস্থিতিকে আরও সংকটময় করে তুলেছে। এখন দেখার বিষয়, সরকার এই অচলাবস্থা নিরসনে কত দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে।
মন্তব্য (০)