চট্টগ্রামে প্রাইভেট কারে গুলি চালিয়ে দুইজনকে হত্যার পেছনে পাঁচটি মূল কারণ চিহ্নিত করেছে পুলিশ। সম্প্রতি হওয়া এই ঘটনায় ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, অপরাধী গোষ্ঠীর আধিপত্য বিস্তার, শক্তি প্রদর্শন, রাজত্ব ধরে রাখা এবং পুলিশের সহযোগীদের ওপর প্রতিশোধ – এসবকে কেন্দ্র করে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে উঠে এসেছে তদন্তে।ঝুট নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে রক্তক্ষয়ী সংঘাতচট্টগ্রাম মহানগরের বায়েজিদ বোস্তামী এলাকায় অবস্থিত অর্ধশতাধিক শিল্প কারখানার ঝুট কেনাবেচার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতেই মূলত এই হামলা চালানো হয়। দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকার আলোচিত অপরাধী সাজ্জাদ হোসেন ও তাঁর প্রতিপক্ষ সরোয়ার হোসেনের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল।সাজ্জাদ বর্তমানে কারাগারে থাকলেও, তাঁর অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহযোগী মেহেদী হাসান বাইরে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন। পুলিশের মতে, সরাসরি সরোয়ার ও তাঁর অনুসারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়েছিল।গ্রেপ্তারকৃতদের স্বীকারোক্তিতে খুনের ছক স্পষ্ট৩ মে, নোয়াখালীর হাতিয়ায় শ্বশুরবাড়ি থেকে গ্রেপ্তার হওয়া মেহেদী হাসানের জবানবন্দি ও অন্যান্য তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ খুনের পরিকল্পনার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে এর আগেও হত্যা ও চাঁদাবাজিসহ ১৩টি মামলা রয়েছে।এদিকে, সাজ্জাদ ও সরোয়ার একসময় একই গডফাদার – বিদেশে পলাতক বড় সাজ্জাদ আলী খানের অনুসারী ছিলেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে বিরোধ তৈরি হয়। বড় সাজ্জাদ এখনো বিদেশে বসে ছোট সাজ্জাদকে দিয়ে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসসহ নানা অপরাধে নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছেন।ঘটনার বর্ণনা: পরিকল্পিত হামলা ও পাল্টা গুলি৩০ মার্চ রাতে কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে বাকলিয়া এক্সেস রোডে একটি রুপালি রঙের প্রাইভেট কার ধাওয়া করে পাঁচটি মোটরসাইকেলে থাকা সন্ত্রাসীরা। একপর্যায়ে বেপরোয়া গুলি চালানো হয় গাড়

িটির দিকে। পাল্টা গুলি ছোড়া হয় গাড়ি থেকেও, কিন্তু গাড়িতে থাকা বখতিয়ার হোসেন (৩০) ও মো. আবদুল্লাহ (৩২) নিহত হন। তারা সরোয়ার হোসেনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। গাড়িতে সরোয়ারও ছিলেন, তবে তিনি প্রাণে বেঁচে যান।মামলা ও আসামির তালিকানিহত বখতিয়ারের মা ফিরোজা বেগম বাকলিয়া থানায় মামলা করেন। তিনি মামলায় সাজ্জাদ হোসেন ও তাঁর স্ত্রী তামান্না শারমিনসহ সাতজনকে আসামি করেন। অন্য পাঁচজন হলেন: মেহেদী হাসান, মোবারক হোসেন, মো. খোরশেদ, মো. রায়হান ও মো. বোরহান। এরা সকলেই ছোট সাজ্জাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত।তদন্তে নতুন মোড়মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে মো. সজীব আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে জানায়, ঘটনার আগে তারা বায়েজিদ এলাকায় চার ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে পরিকল্পনা ও টার্গেট নির্ধারণ করা হয়।সিসিটিভিতে শনাক্ত, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদপুলিশ জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের সময় মেহেদী হাসানের পরনে ছিল কালো গেঞ্জি ও সাদা কেডস। সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে তাঁকে শনাক্ত করা হয়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। পুলিশ মনে করছে, এতে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে।বিদেশে পলাতক বড় সাজ্জাদ ও অস্ত্রের খোঁজনগর পুলিশের উপকমিশনার আলমগীর হোসেন জানিয়েছেন, বিদেশে থাকা বড় সাজ্জাদই ছোট সাজ্জাদকে অস্ত্র সরবরাহ করেন এবং দলের নিয়ন্ত্রণ দেন। সাজ্জাদ গ্রেপ্তার হওয়ার পর অস্ত্র গায়েব করে ফেলেন বলে তিনি জানিয়েছেন। তবে অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এই ঘটনায় চট্টগ্রামের অপরাধ জগতের পেছনের বৃত্তান্ত ও অর্থনৈতিক আধিপত্যের জটিল চিত্র উঠে এসেছে। পুলিশ এখনো অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে, এবং বাকি জড়িতদের ধরতে চেষ্টা চলছে।