রাজনীতির চাপে ট্রেন চালু, কিন্তু এখন লোকসানেসরকারি রেকর্ড অনুসারে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ৬৬টি নতুন আন্তনগর ট্রেন চালু করে। এছাড়া মেইল, এক্সপ্রেস, কমিউটার ও লোকাল ট্রেন মিলিয়ে ৯২টি নতুন সেবাও যুক্ত করা হয়। তবে এর ফলে, প্রায় ৯৮টি জনপ্রিয় ট্রেনকে বন্ধ করতে বাধ্য হতে হয়—যা কার্যত একটি রেলপথ সংস্কার ছিল না, বরং আদর্শ নয়।এমতাবস্থায় দেখা যাচ্ছে, এখন বিজয় এক্সপ্রেসের মতো ট্রেনগুলো চালিয়ে খরচও উঠছে না। ২০১৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর এটি ময়মনসিংহ থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত চলতো। কিন্তু ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর বাসস্থান বদল করে জামালপুর–ময়মনসিংহ রুটে চালু করা হলে যাত্রীর সংখ্যা হ্রাস পায়। পেছিয়ে যায় সময়, কমে যায় লাভ।জল্পনাই সমীক্ষার অভাবরেলের কর্মকর্তাদের দাবি, এই রুট পরিবর্তনে কোন গ্রাউন্ড‑রিয়েলিটি যাচাই বা সমীক্ষা করা হয়নি। বরং এটি করা হয়, মন্ত্রী এবং এমপিদের আবদার মেটাতে। ফলে, পরিকল্পনা নয় বরং প্রচণ্ড রাজনৈতিক প্রভাবেই যান পরিবর্তন করা হয়।ঝুঁকিতে রেলের অর্থনৈতিক ভিত্তিরেলঘাটে জ্বালানি, কর্মী ও অন্যান্য খরচ বিবেচনা করে দেখা যায়, শতভাগ ভর্তি হওয়া ট্রেন হলেও লোকসান হয়। পাশাপাশি ইঞ্জিন-কোচের সংকট তো বটেই। আর এখন নতুন ট্রেন চালু করতে চায় না কর্তৃপক্ষ, কারণ যাত্রী কমলে লাভ তোলা যায় না।রাস্তায় বাধা, বন্ধ না চাইলে লোকসান বাড়েনতুন ট্রেন চালু করে জনসভায় দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও, চালু করার পর স্থানীয়রা ট্রেন বন্ধ হওয়ার প্রতিবাদ করে। ফলে বন্ধ করা যায় না; আবার চালিয়ে গেলে লোকসানও কমছে না। বর্তমানে প্রতি বছর রেলওয়ে প্রায় ২৫০০ কোটি টাকার লোকসান করেন, যেখানে ২০০৯‑১০ অর্থবছরে লোকসান ছিল ৬৯০ কোটি।কোন কোথায় লোকসান হচ্ছে সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস: মাত্র ৬ কিমি দূরত্বে স্টেশনের জন্য চালু। মাঝেমধ্যে চলে শুধু ৮৮% ভর্তি, আয় ৩০ লাখ/মাস—তবে পার্কিং না থাকায় কোচ ঘোরানোর ঝামেলা। ঢালারচর এক্সপ্রেস: ২০১৮ সালে নির্মিত নতুন রেল লাইনে ট্রেন ছিল না, ২০২
০‑এ চালু হলেও আয় খুব কম, কারণ যাত্রী স্বল্প দূরত্বে। উপকূল এক্সপ্রেস (ঢাকা–নোয়াখালী): ২০১২–তে চালু হলে যাত্রী সংখ্যা ১৯০% ছিল; বর্তমানে আগের মতো নয়, কারণ শর্টকাট সড়ক ও সময় নির্দিষ্ট না থাকার সমস্যা। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে কিছু লাভবানও হয়তবে উত্তরাঞ্চলের বেশ কিছু ট্রেন লাভজনক: কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস: ১১১% ভর্তি, মাসে আয় ~২ কোটি টাকা। লালমনিরহাট এক্সপ্রেস: ১১৫% ভর্তি, আয় ~২.২৫ কোটি/মাস। বরেন্দ্র এক্সপ্রেস: ১২৪% ভর্তি। একতা এক্সপ্রেস: ঢাকা–পঞ্চগড় রুটে চলাচল, মাসে আয় > ৪ কোটি টাকা। এগুলো চালু থাকলেও, বিকল্প রেক না থাকায় প্রায়ই দেরি হয়, যা যাত্রীদের স্বাস্থ্যাচরণে প্রভাব ফেলে।রেশনালাইজেশনের উদ্যোগ ও প্রতিবন্ধকতাঅন্তর্বর্তী সরকার আসার পর রুট রেশনালাইজেশন কমিশন গঠন করা হয়েছে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন রেল ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা, বিশেষজ্ঞ ও ছাত্র প্রতিনিধি। জানান, আলাভজনক ট্রেনগুলো ধাপে ধাপে বন্ধ হবে এবং যেখানে চাহিদা বেশি সেখানে রেক বাড়ানো হবে। তবে দীর্ঘ আলোচনার পরেও সুপারিশ তৈরি করা যাচ্ছে না, কারণ: কোচ সংকট আছে। স্থানীয় সমর্থন না থাকলে ট্রেন বন্ধ করা যায় না। বিশেষজ্ঞের মতামতবুয়েটের পরিবহন বিশেষজ্ঞ সামছুল হক বলেন: "রাজনৈতিক সমঝোতার দরুণ রেল ভবিষ্যতে সব ঠিকঠাক দেখানো হয়, কিন্তু ফলাফল ভিন্ন। ট্রেন চালু করার আগে পরিসংখ্যান ভিত্তিক পরিকল্পনা দরকার। না হলে রেল এক টাকা আয় করতে আড়াই টাকা ব্যয় করবে—এটা গ্রহণযোগ্য নয়।"উপসংহার রাজনৈতিক আবদার ও প্রতিশ্রুতিতে চালু হওয়া কিছু ট্রেন বর্তমানে লোকসানে চলে, আর জনমত বাধায় বন্ধ করাও কঠিন। তবে সংগ্রহ হিসেবে লাভজনক রুটগুলো সমুন্নত রাখা আর অযথা ঝুঁকিপূর্ণ নতুন ট্রেন লাগছে না—এটাই হচ্ছে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের নতুন আলোচ্যসূচি। আগামী দিনে সিদ্ধান্তগুলো পরিসংখ্যান ও প্রয়োজনের ভিত্তিতে নেয়া হলে, রেলওয়ের আর্থিক সংকট কমানো সম্ভব হতে পারে।
মন্তব্য (০)