ব্রেকিং নিউজ :

দৃষ্টিকোণ নিউজ একটি নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ অনলাইন সংবাদ মাধ্যম, যা সর্বশেষ সংবাদ ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করে।

আমরা দেশের ও বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ খবর, রাজনীতি, অর্থনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর নির্ভরযোগ্য প্রতিবেদন প্রকাশ করি।

আপনার টাকা

সরকারি এলপিজি গ্যাসেও লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি, ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ ভোক্তা

সরকারি এলপিজি গ্যাসেও লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি, ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ ভোক্তা Image প্রতীকী ছবি | ছবি: প্রতীকী ছবি
ইমেইল :

বাংলাদেশে সরকারি কোম্পানিগুলোর সরবরাহ করা তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম (এলপিজি) গ্যাসের দাম নির্ধারিত থাকলেও বাস্তবে সেই দামে পণ্য পাচ্ছেন না সাধারণ ভোক্তারা। বিপিসির (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন) আওতাধীন চারটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান থেকে তিন হাজারের বেশি পরিবেশক গ্যাস কিনে থাকলেও, তারা নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দামে তা বিক্রি করছেন বাজারে।বর্তমানে সাড়ে ১২ কেজির একটি গ্যাস সিলিন্ডার পরিবেশকদের কিনতে খরচ হয় ৭৮৪ টাকা, পরিবহন ও অন্যান্য খরচসহ গ্রাহকের কাছে বিক্রির মূল্যে দাঁড়ানো উচিত ৮২৫ টাকা। কিন্তু বাস্তবে সেই সিলিন্ডারই বিক্রি হচ্ছে ১,০০০ থেকে ১,৩৫০ টাকায়।মূল্যবিভ্রাটের কারণ কী?বিপিসির অধীনস্থ চারটি কোম্পানি —পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড, মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড, যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড ও স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেড (SAOCL) — থেকে সরবরাহ পাওয়া গ্যাস বিক্রির ক্ষেত্রে পরিবেশকেরা একাধিক ব্যয় ও ঘাটতির দোহাই দিয়ে অতিরিক্ত দাম নিচ্ছেন।বিপিসির একটি অভ্যন্তরীণ তদন্তেও এ অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমান পরিবেশক নিয়োগ ও বিপণন নীতিমালা বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এবং দ্রুত তা হালনাগাদ করা প্রয়োজন।ভোক্তার কাঁধেই চাপচট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, সরকারি কোম্পানির গ্যাস সিলিন্ডার নির্ধারিত দামে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। মুরাদপুর, বায়েজিদ, ষোলশহর ও কদমতলীর মতো এলাকাতেও একই চিত্র। বেশিরভাগ দোকানে সরকারি গ্যাস অনুপস্থিত, আর যেখানেই আছে, সেখানেও দাম চড়া।পরিবেশকেরা বলছেন, তারা পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ পান না। ফলে কম পরিমাণ গ্যাস বিক্রি করে দোকান ভাড়া, লাইসেন্স ফি, পরিবহন খরচ ইত্যাদি ব্যয় নির্বাহে তারা বাধ্য হয়ে দাম বাড়িয়ে দেন।চট্টগ্রামের একজন পরিবেশক শাহ আলম বলেন, "যতটুকু গ্যা

স পাই, তা দিয়ে দোকান চালানোই কঠিন। খরচ সামলাতে দাম বাড়াতেই হয়।"সরাসরি বিক্রির পরামর্শবিপিসির তদন্ত প্রতিবেদনে সরকারি দামে গ্যাস ভোক্তার হাতে পৌঁছানোর নিশ্চয়তা দিতে বিকল্প ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ডিপো বা বিক্রয় অফিসের তত্ত্বাবধানে গ্রাহক কার্ড চালুর মাধ্যমে সরাসরি জনগণের কাছে গ্যাস সরবরাহ করা যেতে পারে।তদারকির অভাবেই অপব্যবহারবাংলাদেশ কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন (CAB)-এর জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম মনে করেন, এলপিজি গ্যাসের বাজারে সরকারের নির্ধারিত দামের বাস্তবায়নে ঘাটতি রয়েছে। তার মতে, "বিইআরসি এবং বিপিসির দায়িত্ব হচ্ছে বাজার তদারকি করা। কিন্তু তারা সে কাজটি করছে না বলেই পরিবেশকেরা নির্বিঘ্নে বাড়তি দাম নিচ্ছেন।"বিপিসির হুঁশিয়ারিবিপিসির চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান জানিয়েছেন, সরকার নির্ধারিত দামের বাইরে অতিরিক্ত নেওয়ার বিষয়টি তাদের নজরে এসেছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, সরকারি গ্যাস অবৈধভাবে বেসরকারি সিলিন্ডারে ভরে বিক্রির বিষয়েও অভিযোগ পাওয়া গেছে, যা বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া হবে।গ্যাসের বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যবর্তমানে সরকারি কোম্পানির গ্যাসের নির্ধারিত মূল্য ৮২৫ টাকা, অথচ বেসরকারি গ্যাস সিলিন্ডারের মূল্য ১,৪৩১ টাকা। এই বিশাল মূল্যের ব্যবধান মধ্যস্বত্বভোগীদের জন্য মুনাফার সুযোগ তৈরি করেছে। যদি এই ব্যবধান কমানো না হয়, তাহলে সাধারণ মানুষ আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।সরকারি গ্যাস ব্যবস্থাপনার মূল উদ্দেশ্য ছিল স্বল্প দামে সাধারণ মানুষের কাছে জ্বালানি পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না। তদারকির ঘাটতি, অস্পষ্ট নীতিমালা ও পরিবেশকদের অতিরিক্ত মুনাফার লোভে সাধারণ মানুষ আজ ক্ষতিগ্রস্ত। দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে এই সংকট আরও গভীর হবে।

সম্পর্কিত ট্যাগ :

মন্তব্য (০)

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না. প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে *

সম্পর্কিত খবর