দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নির্বাচন ঘিরে উত্তাপের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের ইচ্ছা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর এই সিদ্ধান্তের ইঙ্গিত পাওয়ার পর থেকেই বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল তৎপর হয়ে উঠে তাঁর সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রস্তুতি নেয়।সূত্র বলছে, কোনো রাজনৈতিক দলই চায় না অধ্যাপক ইউনূস এখনই সরে দাঁড়ান, বরং তাঁরা চান, তিনি দায়িত্বে থেকে দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একটি স্পষ্ট ও নির্ভরযোগ্য রোডম্যাপ ঘোষণা করুন।আজ শনিবার প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের দিন। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিএনপিকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় এবং জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধিদলকে সন্ধ্যা ছয়টায় সাক্ষাতের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও আরও কয়েকটি দলের নেতাদের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়। সেখানেই সিদ্ধান্ত আসে— অধ্যাপক ইউনূসকে অনুরোধ করা হবে যেন তিনি পদত্যাগ না করেন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করে একটি সংবিধানসম্মত সমঝোতা গড়ে তোলেন।জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান ইতিমধ্যেই অধ্যাপক ইউনূসকে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার আহ্বান জানিয়েছেন। যদিও তিনি শুক্রবার যমুনায় গিয়ে সাক্ষাৎ পাননি, তবে আজ সন্ধ্যায় তাঁর দলের পক্ষ থেকে আবারও সাক্ষাতের চেষ্টা করা হবে।অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের নিয়মিত বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস অনির্ধারি

ত আলোচনায় নিজের পদত্যাগের ভাবনার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সরকার পরিচালনায় বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য এবং রাষ্ট্রীয় কাজের ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতা তাঁকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে।রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার ঝড় ওঠার পেছনে আরেকটি কারণ ছিল, বুধবার ঢাকা সেনানিবাসে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের দেওয়া বক্তব্য। তাতে তিনি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করে একটি নির্বাচিত সরকার গঠনের ইঙ্গিত দেন, যা সরকারের বাইরে থেকেও চাপ হিসেবে অনেকে বিবেচনা করছেন।এদিকে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া এনসিপির শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, অধ্যাপক ইউনূসের মধ্যে বিরক্তির যে লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, তার পেছনে রয়েছে সেনাবাহিনীর সঙ্গে দূরত্ব, নির্বাচন কমিশনের একতরফা মন্তব্য, এনবিআর বিলুপ্তি ইস্যু, বিএনপির আন্দোলন যমুনা পর্যন্ত পৌঁছানোসহ আরও কিছু বিষয়।সর্বশেষ পরিস্থিতি অনুযায়ী, আজকের বৈঠকগুলোতে অধ্যাপক ইউনূস নিজের অবস্থান পরিষ্কার করবেন কি না, কিংবা রাজনৈতিক দলগুলো তাঁকে কতটা বোঝাতে সক্ষম হয়—সেদিকেই দেশবাসীর দৃষ্টি। কারণ, এই মুহূর্তে তাঁর পদত্যাগ দেশকে একটি নতুন রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিতে পারে, যা কেউই চায় না।সংক্ষেপে আজকের বৈঠকের সময়সূচি: জামায়াতের সঙ্গে বৈঠক: সন্ধ্যা ৬:০০টা বিএনপির সঙ্গে বৈঠক: সন্ধ্যা ৭:৩০টা স্থান: প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ‘যমুনা’ সবার দৃষ্টি এখন অধ্যাপক ইউনূসের সিদ্ধান্তের দিকে। তিনি থাকবেন, না কি যাবেন—এই প্রশ্নের উত্তর আজই মিলতে পারে।