উরুগুয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসে ‘পেপে’ মুজিকা আর নেই। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। বুধবার তার মৃত্যুর খবর প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।২০১০ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত উরুগুয়ের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মুজিকা। নিজের সাধারণ জীবনযাপন, ভোগবাদের বিরোধিতা ও সমাজকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি ‘বিশ্বের সবচেয়ে গরিব প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইয়ামান্দু ওরসি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) তার মৃত্যু সংবাদ নিশ্চিত করে লেখেন, “আপনি আমাদের যা কিছু দিয়েছেন এবং সাধারণ মানুষের জন্য যা করেছেন, তার জন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা।”মুজিকার মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট কারণ জানা না গেলেও, তিনি দীর্ঘদিন ধরে খাদ্যনালীর ক্যান্সারে ভুগছিলেন বলে বিবিসি’র প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।সাদাসিধে জীবনযাপনেই ছিল আত্মতৃপ্তিরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে থেকেও তিনি বিলাসবহুল জীবন পরিহার করে সাধারণ মানুষের মতোই জীবন যাপন করতেন। তিনি একাধিকবার জানিয়েছেন, রাজনীতি ছাড়াও তার ভালো লাগত বই পড়া আর নিজের জমিতে কাজ করা।মন্টেভিডিও শহরের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া মুজিকা তরুণ বয়সে ন্যাশনাল পার্টির সদস্য ছিলেন, যা ছিল উরুগুয়ের একটি ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল।বিপ্লবী জীবন, কারাবাস ও রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তন১৯৬০-এর দশকে তিনি ছিলেন টুপামারোস ন্যাশনাল লিবারেশন মুভমেন্ট (এ
মএলএন-টি)-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা। এটি ছিল একটি বামপন্থী গেরিলা সংগঠন, যারা সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে অংশ নেয়, এবং হামলা ও অপহরণের মতো কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল। তবে মুজিকা সবসময় দাবি করেছেন যে তিনি কখনো কাউকে হত্যা করেননি।তিনি একাধিকবার কারাবরণ করেন, ১৯৭০ সালে ছয়বার গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসেন। কারাগারে থাকাকালে দু’বার পালিয়েছিলেন, এর মধ্যে একবার ১০৫ জন বন্দীর সঙ্গে টানেল কেটে পালানোর ঘটনা ছিল উরুগুয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পালানোর ঘটনা।১৯৭৩ সালে উরুগুয়ে যখন সামরিক শাসনে প্রবেশ করে, তখন তাকে ‘নয়জন জিম্মি’র অন্যতম হিসেবে রাখা হয়। এই সময় তিনি প্রায় ১৪ বছর কারাগারে কাটান, যার অধিকাংশ সময়ই তাকে একা ও নিদারুণ নির্যাতনের মধ্যে রাখা হয়।১৯৮৫ সালে উরুগুয়ে গণতন্ত্রে ফিরে গেলে মুক্তি পান মুজিকা, এবং এরপর ধীরে ধীরে সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরেন।বিশ্বজুড়ে ভালোবাসা পাওয়া নেতামাত্র ৩৪ লাখ জনসংখ্যার ছোট্ট দেশ উরুগুয়ের প্রেসিডেন্ট হয়েও তার জনপ্রিয়তা ছিল আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। লাতিন আমেরিকা ছাড়িয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন বিশ্ব রাজনীতির অন্যতম মানবিক মুখ।তার সহজ-সরল জীবনদর্শন ও কর্মমুখর নীতি আজও অনেকের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস। হোসে মুজিকার মৃত্যু শুধু উরুগুয়ের নয়, গোটা বিশ্ব রাজনৈতিক অঙ্গনের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। তার মতো মানুষ রাজনীতির আঙিনায় খুব কমই জন্মায়।
মন্তব্য (০)