মেক্সিকোর উত্তরে অবস্থিত সহিংসতায় জর্জরিত সিনালোয়া রাজ্যে ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। স্থানীয় পুলিশ রাস্তা ও একটি পরিত্যক্ত গাড়ি থেকে মোট ২০টি মরদেহ উদ্ধার করেছে, যেগুলোর বেশ কয়েকটি ছিল মাথাবিহীন।সোমবার সিনালোয়ার সরকারি কৌঁসুলির দপ্তর এক বিবৃতিতে জানায়, রাজ্যের রাজধানী কুলিয়াকানের পাশের একটি সড়কের ধারে চারটি মরদেহ পাওয়া গেছে, যেগুলোর মাথা বিচ্ছিন্ন ছিল। একই সময় একটি পরিত্যক্ত গাড়ির ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয় আরও ১৬টি মৃতদেহ।পাশেই একটি ব্যাগে পাওয়া যায় পাঁচটি মানুষের কাটা মাথা। প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে, এগুলো প্রতিদ্বন্দ্বী মাদক চক্রের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের ফলাফল।মাদকচক্রের বার্তা রেখে যাওয়া চিরকুটপুলিশের মতে, মরদেহগুলোর পাশে একটি চিরকুট পাওয়া গেছে, যা সম্ভবত কোনো মাদক চক্রের পক্ষ থেকে বার্তা হিসেবে ফেলে রাখা হয়েছে। তবে চিরকুটে কী লেখা ছিল, তা এখনো প্রকাশ করা হয়নি।স্থানীয় কর্তৃপক্ষ মনে করছে, এই ঘটনার সঙ্গে সিনালোয়ার শক্তিশালী ও প্রতিদ্বন্দ্বী মাদক চক্রগুলোর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব জড়িত। অঞ্চলটি মেক্সিকোর অন্যতম সহিংস ও অপরাধপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত।সরকারের প্রতিক্রিয়া ও সাধারণ মানুষের হতাশাসিনালোয়া সরকারের মুখপাত্র ফেলিসিয়ানো কাস্ত্রো ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, “যে মাত্রার সহিংসতা আমরা দেখছি, তা ঠেকাতে সংগঠিত অপরাধ দমনে সরকারের কৌশল নতুন করে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।”তিনি আরও বলেন,
“সেনাবাহিনী ও পুলিশ যৌথভাবে কাজ করছে, যাতে সিনালোয়ায় স্থায়ী শান্তি ফিরিয়ে আনা যায়।”তবে বিপরীতে, স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে। গত কয়েক মাস ধরে অঞ্চলজুড়ে সহিংসতা অব্যাহত, যা মাদক পাচার ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সংঘর্ষের ফল।এল চাপো বনাম এল মায়ো: সংঘাতের পেছনের দুই নামএ সংঘাতের অন্যতম পটভূমি হলো সিনালোয়া কার্টেলের দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষের মধ্যকার দ্বন্দ্ব। একদিকে আছেন কার্টেলের সহপ্রতিষ্ঠাতা জোয়াকিন ‘এল চাপো’ গুজমানের অনুসারীরা, অন্যদিকে আছেন ইসমায়েল ‘এল মায়ো’ জামবাদার পক্ষ।গত বছরের জুলাইয়ে ইসমায়েল জামবাদা যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে কার্টেলের মধ্যে সহিংসতা আরও বেড়ে যায়।যুক্তরাষ্ট্র জানায়, ৭৬ বছর বয়সী জামবাদা ও এল চাপোর ৩৮ বছর বয়সী ছেলে জোয়াকিন গুজমান লোপেজকে টেক্সাসের এল পাসো থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। জামবাদার দাবি, তাঁকে অপহরণ করে একটি ব্যক্তিগত বিমানে করে জোরপূর্বক যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।এল চাপো ও লোপেজ: একজন দণ্ডিত, অন্যজন বিচারাধীনজোয়াকিন ‘এল চাপো’ গুজমান ২০১৯ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন, মাদক পাচার ও সহিংস অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে। অন্যদিকে, তাঁর ছেলে গুজমান লোপেজ বর্তমানে শিকাগোর একটি ফেডারেল আদালতে বিচারাধীন, যেখানে তিনি নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন।
মন্তব্য (০)