ইসরায়েলের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্ব গাজায় হামলা আরও জোরদার করার পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে, যার অংশ হিসেবে পুরো গাজা ভূখণ্ড দখল এবং সেখানে ত্রাণ সরবরাহের দায়িত্ব নিজেদের হাতে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে তেলআবিব।প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা সর্বসম্মতভাবে রিজার্ভ সেনা ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকেই খাদ্যসহ জরুরি ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব দিতে সম্মত হয়েছে—যা ২৩ লাখ অবরুদ্ধ গাজাবাসীর জন্য নির্ভরযোগ্য উৎস হওয়া উচিত।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ইসরায়েলি কর্মকর্তার বরাতে সংবাদসংস্থাগুলো জানিয়েছে, এই পরিকল্পনায় গাজার সম্পূর্ণ দখল ও নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছে। রয়টার্স জানায়, এই নতুন সামরিক অভিযানের লক্ষ্য হতে পারে পুরো গাজা ভূখণ্ড দখল করা। এএফপি সূত্রে বলা হয়েছে, এই পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে “গাজার জনগণকে দক্ষিণ দিকে স্থানান্তর” এবং “ভবিষ্যতে ভূখণ্ড দখল ধরে রাখা”।এছাড়া সূত্রগুলো জানায়, নেতানিয়াহু এখনও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের "স্বেচ্ছায় গাজা ছাড়ার" পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আগ্রহী।এই পরিকল্পনায় গাজায় ত্রাণ সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করাও অন্তর্ভুক্ত, যদিও ইসরায়েল ২ মার্চ থেকে গাজায় সব ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ করে রেখেছে, যার ১৬ দিন পর আবারো হামলা শুরু করে তারা।দ্য টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, পরিকল্পনা অনুযায়ী আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বেসরকারি নিরাপত্তা ঠিকাদারদের মা
ধ্যমে খাদ্যের বাক্স বিতরণ করা হবে, যার নিরাপত্তা দেবে ইসরায়েলি সেনারা।ভিতরে বিতর্ক, বাইরে সমালোচনাএই পরিকল্পনার তথ্য ফাঁস হতেই ইসরায়েলের অভ্যন্তরেও বিতর্ক শুরু হয়েছে।নেতানিয়াহু বলেন, এই অভিযানের উদ্দেশ্য “হামাসকে পরাজিত করা এবং গাজায় আটক ইসরায়েলি নাগরিকদের ফিরিয়ে আনা”। কিন্তু "হোস্টেজেস অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিস ফোরাম" নামক একটি প্রচার সংগঠন এই পরিকল্পনাকে “বন্দীদের আত্মত্যাগ” বলে মন্তব্য করেছে।মন্ত্রিসভার বৈঠকে রাজনৈতিক ও সামরিক নেতাদের মধ্যে তীব্র মতবিরোধ দেখা দেয়।সেনাপ্রধান আইয়াল জামির হুঁশিয়ারি দেন, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করলে গাজায় বন্দীদের হারানোর ঝুঁকি বাড়বে।এদিকে চরমপন্থী জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির ত্রাণ ও বিদ্যুৎ পুরোপুরি বন্ধ রাখার পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। তিনি বলেন, "খাদ্য গুদাম ও জেনারেটরগুলোতে বোমা হামলা চালাতে হবে যাতে গাজায় কিছুই না থাকে।"জবাবে সেনাপ্রধান জামির বলেন, "আপনি যা বলছেন তা বিপজ্জনক, এটি আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের মতো। আমরা গাজাকে না খাইয়ে মারতে পারি না। আপনার বক্তব্য আমাদের সবাইকে বিপদে ফেলবে।"ইসরায়েলি বিরোধীদলীয় নেতা ইয়াইর লাপিদ সেনা সমাবেশের উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন, তিনি বলেন, "লক্ষ্যহীনভাবে সেনা ডেকে পাঠানো হচ্ছে"। অন্য এক বিরোধী নেতা ইয়াইর গোলান বলেন, "এই পরিকল্পনার কোনো নিরাপত্তাগত মূল্য নেই, বরং এটি নেতানিয়াহুর সরকার রক্ষার কৌশলমাত্র।"
মন্তব্য (০)