মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্য সফরে সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছেন। আজ মঙ্গলবার সফর শুরু করে আগামী বৃহস্পতিবার সফর শেষ করবেন তিনি। সফরের প্রধান লক্ষ্য—যুক্তরাষ্ট্রে এক ট্রিলিয়ন ডলারের (প্রায় এক লাখ কোটি মার্কিন ডলার) বিনিয়োগ নিশ্চিত করা। বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের অঙ্গীকারওয়াশিংটনের মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউট-এর অর্থনীতিবিদ ক্যারেন ইয়ং জানান, ট্রাম্প এ সফরে উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে ব্যাপক বিনিয়োগের ঘোষণা প্রত্যাশা করছেন। এমনকি বৈঠকে একটি পোস্টারে সম্ভাব্য বিনিয়োগের স্থান ও এর মাধ্যমে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পরিকল্পনাও তুলে ধরবেন তিনি।রিয়াদে সম্মেলন ও চুক্তিসৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি ট্রাম্প আজ রিয়াদে সৌদি-মার্কিন বিনিয়োগ সম্মেলন-এ অংশ নিচ্ছেন। এতে ব্ল্যাকরক, গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট, আইবিএম, কোয়ালকমসহ বহু মার্কিন প্রযুক্তি ও বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীরা অংশ নিচ্ছেন। সৌদি-যুক্তরাষ্ট্র চুক্তির সম্ভাবনাবিশ্লেষক আলি শিহাবি জানিয়েছেন, সফরে একাধিক অর্থনৈতিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। সৌদি সরকারের রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ তহবিল পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (PIF)-এর বর্তমান সম্পদ প্রায় ৯২৫ বিলিয়ন ডলার। এই তহবিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে আরও বিনিয়োগের লক্ষ্য রয়েছে। সৌদি ‘ভিশন ২০৩০’ ও মার্কিন সহযোগিতাসৌদি আরবের ‘ভিশন ২০৩০’ বাস্তবায়নে ট্রাম্পের সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। প্রযুক্তি, পর্যটন, খনি, খেলাধুলা, বিনোদনসহ বিভিন্ন খাতে বিপুল বিনিয়োগে
র মাধ্যমে সৌদি অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে আমিরাতের ১.৪ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ পরিকল্পনাট্রাম্পের সফরের অংশ হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাত যুক্তরাষ্ট্রে আগামী ১০ বছরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), জ্বালানি, সেমিকন্ডাক্টর ও উৎপাদন খাতে ১.৪ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। এআই ও প্রযুক্তি খাতে নতুন মাত্রাট্রাম্প সফরে এআই ও মার্কিন চিপ প্রযুক্তি উপসাগরীয় অঞ্চলে ছড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে। বিশেষ করে আমিরাতের সঙ্গে চিপ রপ্তানি সীমাবদ্ধতা শিথিলের বিষয়ে আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে। সামরিক খাতে ১০০ বিলিয়ন ডলারের চুক্তিসফরে সৌদি আরবের সঙ্গে ১০০ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সরঞ্জাম ক্রয়চুক্তি চূড়ান্ত হতে পারে। এতে ক্ষেপণাস্ত্র, রাডার সিস্টেম ও পরিবহন বিমান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই চুক্তি দীর্ঘদিন পর মার্কিন সামরিক বিক্রির একটি বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশ্ব তেলের বাজারে রাজনীতিতেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর সংগঠন ওপেক প্লাস সম্প্রতি উৎপাদন বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি ট্রাম্পকে খুশি করার একটি কৌশল, কারণ তিনি তেলের দাম কমাতে আগ্রহী। বিশ্লেষকদের মূল্যায়নবিশ্লেষক আলি শিহাবির মতে, “ট্রাম্প এমন একটি সফর চাচ্ছেন, যেটি যুক্তরাষ্ট্রে বিশাল বিনিয়োগের বার্তা দেবে—এবং এই সফর থেকেই তিনি তা পাবেন।”সংক্ষেপে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর শুধুমাত্র কূটনৈতিক নয়, এটি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্বার্থ সুরক্ষার একটি কৌশলগত পদক্ষেপ। বিনিয়োগ, প্রযুক্তি, সামরিক চুক্তি ও শক্তিশালী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কই এই সফরের মূল চালিকা শক্তি।
মন্তব্য (০)