বিশ্ব রাজনীতির উত্তাল প্রেক্ষাপটে গাজা সংকটকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক জটিল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন। ইসরায়েলের উগ্র ডানপন্থী প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর একগুঁয়ে অবস্থান এবং মানবিক সংকটে গাজা জনগণের দুর্দশা নিয়ে আজ ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যনীতি আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নের মুখে পড়েছে।বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের চিরায়ত মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে এক ধরনের ধাক্কা লেগেছে। একদিকে যেমন ইউক্রেন যুদ্ধ এবং অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেশটিকে দুর্বল করেছে, অন্যদিকে আরব বিশ্বের সঙ্গে এক নতুন মাত্রার সম্পর্ক গড়তে গিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন এক প্রকার দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে—বিশেষ করে নেতানিয়াহুর কারণে।কেন ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে হটাতে চাইতে পারেন?গাজার ভয়াবহ মানবিক সংকট: প্রতিদিনই ফিলিস্তিনে নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের প্রাণহানিতে আন্তর্জাতিকভাবে তীব্র সমালোচনা হচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসন বুঝতে পারছে, নেতানিয়াহুর উগ্র নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি সংকটে পড়েছে।আরব বিশ্বের বিনিয়োগ: সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে ট্রাম্প ১০ ট্রিলিয়ন ডলারের ঐতিহাসিক চুক্তি করেছেন। এই দেশগুলো দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পক্ষে এবং নেতানিয়াহুর অবস্থান তার সম্পূর্ণ বিপরীত। ফলে নেতানিয়াহু ট্রাম্পের বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন।যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ চাপ: মার্কিন কংগ্রেসে ইহুদি লবির চাপে থাকলেও ট্রাম্পের ওপর এবার অন্যরকম চাপ তৈরি হয়েছে। তিনি এখন এমন এক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছেন যাতে আন্তর্জাতিক সমর্থন অর্জন সম্ভব হয় এবং ভবিষ্যতের রাজনীতি রক্ষা
পায়।বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনা: ইরান, সিরিয়া, রাশিয়া, চীন ও তুরস্ক যদি গাজা ইস্যুকে কেন্দ্র করে জোটবদ্ধ হয়, তবে তা একটি বড় যুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে পারে। এই ভয়ও ট্রাম্পকে ইসরায়েলের রাজনৈতিক পটভূমিতে হস্তক্ষেপ করতে উদ্বুদ্ধ করছে।নেতানিয়াহুকে সরানো কি এত সহজ?না, মোটেই নয়।নেতানিয়াহুর পেছনে রয়েছে:ইসরায়েলের উগ্র ডানপন্থী সংসদ সদস্যদের সমর্থন।যুক্তরাষ্ট্রে প্রভাবশালী ইহুদি লবি (AIPAC)।ইসরায়েলি রাজনীতির দীর্ঘদিনের ব্যক্তিগত ক্ষমতা চর্চা।সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও একই চেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছেন। নেতানিয়াহু শুধু একজন নেতা নন, তিনি একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক ব্র্যান্ড, যাকে সরানো মানে গোটা ইসরায়েলি ক্ষমতার কাঠামোতে এক ধরনের বিপ্লব ঘটানো।ট্রাম্পের পরিকল্পনা কী?বর্তমানে তার মধ্যপ্রাচ্য উপদেষ্টা স্টিভ উইটকফ ইসরায়েলের রাজনীতিকদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন, যেন নেতানিয়াহুর বিকল্প কোনো নেতা তুলে আনা যায়। পাশাপাশি ট্রাম্প চাচ্ছেন, গাজা ইস্যুতে বিশ্বজনমতের দিকে ঝুঁকে থেকে নিজের ভাবমূর্তি পুনর্গঠন করতে।তবে এটাও সত্য—গোপনে ট্রাম্প একসময় গাজা কিনে নিয়ে পর্যটন এলাকা বানানোর চিন্তা করেছিলেন, যা বিশ্বব্যাপী নিন্দিত হয়েছিল। ফলে এখন তিনি আর কোনো ভুল করতে রাজি নন।ট্রাম্প যদি সত্যিই গাজার সংকট নিরসন চান এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চান, তাহলে তাকে নেতানিয়াহুর উগ্রনীতির বিপরীতে দাঁড়াতে হবে। কিন্তু এই পথ সহজ নয়।নেতানিয়াহুকে হঠানো মানে শুধু একজন নেতাকে অপসারণ নয়, এটি এক নতুন মধ্যপ্রাচ্য রাজনীতির সূচনা। ট্রাম্প কি এই দায়ভার নিতে প্রস্তুত? সময়ই হয়তো এর উত্তর দেবে।
মন্তব্য (০)