আফগানিস্তানের শাসক গোষ্ঠী তালেবানকে 'বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন' হিসেবে ঘোষণার বিষয়টি পুনরায় মূল্যায়ন করছে যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত একটি শুনানিতে এই বিষয়টি উঠে এসেছে।গতকাল বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলে প্রতিনিধি পরিষদের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির শুনানিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, তালেবানকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করার সিদ্ধান্ত বর্তমানে পুনর্বিবেচনার পর্যায়ে রয়েছে। তাঁর ভাষায়, "এই শ্রেণিবিন্যাস এখন আরও একবার পর্যালোচনার আওতায় এসেছে।" এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এসেছে, যখন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ সম্প্রতি ২০২১ সালের আগস্টে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিশৃঙ্খল সেনা প্রত্যাহারের ঘটনাটি ঘিরে এক ‘নিবিড় পর্যালোচনার’ নির্দেশ দিয়েছেন। ওই সময় কাবুল বিমানবন্দরে আইএসআইএলের আত্মঘাতী বোমা হামলায় ১৩ মার্কিন সেনাসহ ১৫০ জন আফগান নিহত হন।পিট হেগসেথ জানান, “এই ঘটনাটি সম্পর্কে সুষ্ঠু জবাবদিহি নিশ্চিত করতেই নতুন করে পর্যালোচনা প্রয়োজন। এটি মার্কিন জনগণ এবং আমাদের সামরিক বাহিনীর প্রতি আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ।” ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে। এই সিদ্ধান্তের ভিত্তি ছিল ট্রাম্প প্রশাসনের সময় কাতারে তালেবানের সঙ্গে সম্পাদিত এক চুক্তি, যেখানে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল তালেবান আফগা
ন মাটিতে আল-কায়েদা বা আইএসআইএলের মতো সংগঠনের কার্যক্রম প্রতিরোধ করবে।২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে দোহায় হওয়া এই চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে ১৮ বছরের যুদ্ধ শেষ করার উদ্যোগ নেয়। এর আওতায় প্রথম কয়েক মাসেই হাজার হাজার সৈন্য প্রত্যাহার শুরু হয়।তবে বাইডেন প্রশাসন দাবি করে, ট্রাম্পের সময় নেওয়া নীতিগত সিদ্ধান্ত এবং পরিকল্পনার ঘাটতি তাদের সেনা প্রত্যাহার প্রক্রিয়াকে জটিল করে তোলে।অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার তাঁর প্রচারে এই সেনা প্রত্যাহারকে ‘মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে লজ্জাজনক দিন’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তাঁর মতে, “এই প্রত্যাহার হওয়া উচিত ছিল মর্যাদা, শক্তি ও সামরিক সক্ষমতা বজায় রেখে।” সেনা প্রত্যাহার ঘিরে কংগ্রেসের সামনে এরই মধ্যে সাক্ষ্য দিয়েছেন তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন এবং সেনাপ্রধান মার্ক মিলিসহ শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা।২০০১ থেকে ২০২১ পর্যন্ত আফগানিস্তানে পরিচালিত যুদ্ধ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী সামরিক সংঘাত, যা ভিয়েতনাম যুদ্ধকেও ছাড়িয়ে যায়। বর্তমানে হেগসেথের দেওয়া নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, সেনা প্রত্যাহার পর্বে সংঘটিত বিস্ফোরণ, ত্রুটি ও সিদ্ধান্তমূলক বিষয়গুলো নিয়ে সামরিক ও কূটনৈতিক স্তরে নতুনভাবে মূল্যায়ন শুরু হবে। এতে বিশেষভাবে কাবুলের শেষ দিনগুলোতে আইএসআইএলের হামলার তদন্তেও আলোকপাত করা হবে, যা মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) ইতিমধ্যেই শুরু করেছে।
মন্তব্য (০)