বহুদিন ধরেই মহাবিশ্বের রহস্য উন্মোচনে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি এক নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে মহাকাশের বিস্ময়কর এক তত্ত্ব—পৃথিবীসহ আমাদের পুরো মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি আসলে একটি বিশাল, রহস্যময় শূন্য গহ্বর বা ‘ভয়েড’-এর মধ্যে অবস্থিত।এই গবেষণায় বলা হয়েছে, বিগ ব্যাংয়ের সময়কার তুলনায় বর্তমানে মহাবিশ্ব অনেক দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। এই পরিবর্তনের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, আমরা এমন একটি এলাকায় অবস্থান করছি যার ঘনত্ব আশপাশের অঞ্চলের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ কম। এর ফলে মহাকর্ষজ বল বস্তুগুলোকে প্রান্তের দিকে টেনে নিচ্ছে, এবং বাইরে থেকে তাকালে মনে হচ্ছে, মহাবিশ্ব পৃথিবীর কাছাকাছি জায়গা থেকে অস্বাভাবিক দ্রুত হারে সম্প্রসারিত হচ্ছে।যুক্তরাজ্যের রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির বার্ষিক সম্মেলনে এই গবেষণা প্রকাশ করা হয়। এতে “বিগ ব্যাংয়ের শব্দ” নামে পরিচিত একটি তত্ত্বের পক্ষে জোরালো যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। গবেষকরা বলছেন, আমরা যেখানে অবস্থান করছি, তা শূন্যস্থান হবার সম্ভাবনা সাধারণ অবস্থার চেয়ে ১০ কোটি গুণ বেশি।বিশেষজ্ঞরা এই বিস্ময়কর ভিন্নতাকে ‘হাবল টেনশন’ নামে অভিহিত
করেছেন। এটি একটি জটিল মহাজাগতিক সমস্যা, যেখানে হাবল ধ্রুবক দিয়ে পরিমাপ করা সম্প্রসারণের হার প্রত্যাশার তুলনায় বেশি দেখা যাচ্ছে। হাবল ধ্রুবক হলো এমন একটি মান যা দিয়ে ছায়াপথ কিংবা মহাজাগতিক বস্তুসমূহ পৃথিবী থেকে কত দ্রুত দূরে সরে যাচ্ছে তা নির্ণয় করা হয়।পোর্টসমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী ইন্দ্রনীল বণিক জানান, "বর্তমান সম্প্রসারণের হার আমাদের প্রত্যাশার চেয়ে প্রায় ১০ শতাংশ বেশি। এটি এতটাই ব্যতিক্রম যে এটি বিদ্যমান মহাজাগতিক মডেলগুলোর বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।"এছাড়াও গবেষণায় আরও বলা হয়, মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি একটি প্রায় এক শ কোটি আলোকবর্ষ বিস্তৃত শূন্যস্থানের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের কাছাকাছি অবস্থিত। এই শূন্যস্থান যত বেশি ফাঁকা হবে, মহাবিশ্বের বস্তুগুলো পৃথিবী থেকে তত দ্রুত দূরে সরে যাবে—যা মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের গতি বাড়ার একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হতে পারে। এই গবেষণা যদি আরও তথ্যপ্রমাণসহ নিশ্চিত হয়, তবে এটি আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের বহু পুরোনো ধারণাকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করবে। মহাবিশ্ব আসলে কেমন এবং কোথায় আমাদের অবস্থান—এই প্রশ্নে নতুন মোড় এনে দিচ্ছে এই গবেষণা।
মন্তব্য (০)