ব্রেকিং নিউজ :

দৃষ্টিকোণ নিউজ একটি নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ অনলাইন সংবাদ মাধ্যম, যা সর্বশেষ সংবাদ ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করে।

আমরা দেশের ও বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ খবর, রাজনীতি, অর্থনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর নির্ভরযোগ্য প্রতিবেদন প্রকাশ করি।

বিজ্ঞান

বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করলেন পৃথিবীর অতি নিকটবর্তী একটি বিশাল অদৃশ্য মলিকিউলার ক্লাউড

বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করলেন পৃথিবীর অতি নিকটবর্তী একটি বিশাল অদৃশ্য মলিকিউলার ক্লাউড Image সংগৃহীত | ছবি: সংগৃহীত
ইমেইল :

একটি অদৃশ্য মলিকিউলার ক্লাউড যা তারকা ও গ্রহের সৃষ্টি প্রক্রিয়া সম্পর্কে নতুন দিক নির্দেশনা দিতে পারে, তা অবাক করে পৃথিবীর খুব কাছে থেকে শনাক্ত করা হয়েছে।এই ক্লাউডটির নামকরণ করা হয়েছে গ্রীক দেবী ইওস (Eos) নামে, যিনি প্রাচীন পৌরাণিক কাহিনীতে ভোরের দেবী হিসেবে পরিচিত। যদি এটি চোখে দেখা যেত, তবে আকাশে এটি চাঁদের প্রায় ৪০ গুণ চওড়া একটি বিশাল বস্তু মনে হত। এই গ্যাসের ভর প্রায় সূর্যের ৩,৪০০ গুণ এর সমান, যা বিজ্ঞানীদের সম্প্রতি ‘Nature Astronomy’ জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় জানানো হয়েছে।থমাস হাওয়ার্থ, কোয়েন মেরি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও গবেষণায় সহ-লেখক, বলেছেন,“জ্যোতির্বিজ্ঞানে অদৃশ্য কিছু আবিষ্কারের মানে সাধারণত আরও উন্নত টেলিস্কোপ দিয়ে গভীর পর্যবেক্ষণ করা হয় — যেমন ছোট গ্রহ বা দূরের গ্যালাক্সি সনাক্ত করা। কিন্তু এখানে যে বস্তুটি আমরা পেয়েছি, সেটা আমাদের মহাজাগতিক পেছনের উঠানে ছিল, এবং আমরা একেবারে তা মিস করেছিলাম।”মলিকিউলার ক্লাউড কী এবং কেন ইওস এত গুরুত্বপূর্ণ?মলিকিউলার ক্লাউড হলো গ্যাস ও ধূলিকণার একটি ভাণ্ডার, যেখানে হাইড্রোজেন এবং কার্বন মনোক্সাইডের মতো অণু গঠিত হয়। এই ক্লাউডের ঘন অংশগুলো ভেঙে পড়ে নতুন তারকার জন্ম দেয়। সাধারণত, বিজ্ঞানীরা রেডিও ও ইনফ্রারেড তরঙ্গদৈর্ঘ্যে কার্বন মনোক্সাইডের রাসায়নিক সংকেত ব্যবহার করে এই ক্লাউডগুলো সনাক্ত করেন।তবে, ইওস ক্লাউডটি এত কাছে থাকা সত্ত্বেও পূর্বে অদৃশ্য ছিল কারণ এতে কার্বন মনোক্সাইডের মাত্রা খুবই কম, ফলে প্রচলিত প্রযুক্তিতে এর বৈশিষ্ট্যমূলক সংকেত পাওয়া যায়নি।এবং এর রহস্য উন্মোচনের চাবিকাঠি হলো হাইড্রোজেন থেকে নির্গত আল্ট্রাভায়োলেট (UV) আলো অনুসন্ধান।হাওয়ার্থ বলেন,“আমরা এই ক্লাউডটি ধরতে পেরেছি শুধুমাত্র কারণ আমরা আলোর একটি ভিন্ন রঙে তাকিয়েছি।”সৌরজগত গঠনের এক নতুন জানালাইওস ক্লাউডটি আবিষ্কৃত হয় কোরিয়ার স

্যাটেলাইট STSAT-1 এ ব্যবহৃত একটি দূর-আল্ট্রাভায়োলেট স্পেক্ট্রোগ্রাফ FIMS-SPEAR এর মাধ্যমে সংগ্রহ করা তথ্য থেকে। এই তথ্য ২০২৩ সালে সর্বসাধারণের জন্য মুক্তি পেয়েছিল, যা Rutgers University-এর পদার্থবিজ্ঞান ও জ্যোতির্বিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ব্ল্যাক্সলি বারখার্ট প্রথম সনাক্ত করেন।স্পেক্ট্রোগ্রাফটি দূর-আল্ট্রাভায়োলেট আলোকে তার উপাদান তরঙ্গদৈর্ঘ্যে ভেঙে দেয়, যেমন একটি প্রিজম দৃশ্যমান আলোকে বিভক্ত করে। এর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা আলোর উৎস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পেয়ে থাকেন।বারখার্ট জানান,“এটি প্রথমবারের মতো কোনো মলিকিউলার ক্লাউড সরাসরি দূর-আল্ট্রাভায়োলেট নির্গমনের মাধ্যমে আবিষ্কৃত হলো। তথ্যটি দেখিয়েছে যে হাইড্রোজেন অণুগুলো আলোর ফ্লোরোসেন্স (জ্বলন্ত অবস্থায় বিকিরণ) দ্বারা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। এটি সত্যিই অন্ধকারে জ্বলছে।”আশেপাশে এত বড় বস্তু অদৃশ্য কেন?বিশ্ববিদ্যালয় অফ লেইডেনের সহকারী অধ্যাপক মেলিসা ম্যাকলুর, যিনি গবেষণায় অংশগ্রহণ করেননি, বলেছেন,“আমরা মনে করতাম যে সূর্যের কাছাকাছি প্রায় ১,৬০০ আলোকবর্ষের মধ্যে মলিকিউলার ক্লাউডগুলো সম্পর্কে আমাদের ধারণা বেশ সঠিক। তাই এই আবিষ্কারটি সত্যিই চমকপ্রদ।”তিনি আরও যোগ করেন,“ইওস আমাদের থেকে মাত্র ৩০০ আলোকবর্ষ দূরে, যা পূর্বে জানা কোনো ক্লাউডের চেয়ে অনেক বেশি নিকটবর্তী। এটা সত্যিই বিস্ময়কর যে, এত বড় একটি বস্তু এত কাছে থেকে এতদিন আমাদের নজরে পড়েনি। এটি এমন যেন, আপনি এক গ্রামাঞ্চলে থাকেন যেখানে ওপরে বাড়ি এবং খোলা মাঠ আছে, হঠাৎ করেই বুঝতে পারলেন যে সেই খোলা মাঠের নিচে একটি গোপন ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার রয়েছে।”পৃথিবীর নিকটবর্তী এই বিশাল মলিকিউলার ক্লাউড ‘ইওস’ আবিষ্কার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এটি তারকা ও গ্রহের গঠন প্রক্রিয়াকে আরও গভীরভাবে বোঝার সুযোগ করে দিচ্ছে। এটি প্রমাণ করে যে, আমাদের মহাজাগতিক আশেপাশে এখনও অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে যা উদঘাটন করা বাকি।

সম্পর্কিত ট্যাগ :

মন্তব্য (০)

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না. প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে *

সম্পর্কিত খবর