দশকের পর দশক ধরে বিজ্ঞানীদের নজর এড়িয়ে থাকা একটি বিরল আর্কিওপটেরিক্স জীবাশ্ম শেষমেশ উঠে এলো আলোর মুখে। আর এই সন্ধান যেন প্রাগৈতিহাসিক পাখির ওড়ার ক্ষমতা নিয়ে বছরের পর বছরের গবেষণার চূড়ান্ত এক মাইলফলক।১৫ কোটি বছর পুরনো এই জীবাশ্মে প্রথমবারের মতো আবিষ্কৃত হয়েছে এমন কিছু অবশেষ, যা নিশ্চিত করে যে আর্কিওপটেরিক্স শুধু গ্লাইড করতো না — এটি প্রকৃতপক্ষে উড়তে পারতো।আর্কিওপটেরিক্স কে পাখির ইতিহাসে প্রথম প্রজাতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জার্মানির দক্ষিণাঞ্চলে পাওয়া এই জীবাশ্ম এতদিন এক ব্যক্তিগত সংগ্রাহকের কাছে থাকায় গবেষকদের জন্য নিষিদ্ধ ছিল। ২০২২ সালে শিকাগোর ফিল্ড মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্টোরি জীবাশ্মটি কিনে নিলে এক নতুন দিগন্তের সূচনা ঘটে।জীবাশ্মে দেখা যায় 'টেরশিয়াল' নামের ফ্লাইট ফেদার, যা আধুনিক পাখিদের ওড়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।প্রধান গবেষক ড.
জিংমাই ও’কনর বলেন, “এটি এমন এক জীবাশ্ম, যার অস্থিগুলি ৩ডি-তে অক্ষত অবস্থায় রয়েছে, এবং এতে প্রচুর পরিমাণে নরম টিস্যুর নিদর্শন পাওয়া গেছে যা আগে কখনো দেখা যায়নি।”তিনি জানান, জীবাশ্মটির বিশ্লেষণে UV লাইট ও CT স্ক্যান ব্যবহার করে এক হাজার ছয়শো ঘণ্টার বেশি সময় ধরে কাজ করা হয়েছে।পায়ের প্যাডের গঠনে আধুনিক কবুতরের মতো আচরণের ইঙ্গিত পাওয়া যায়, যা প্রমাণ করে আর্কিওপটেরিক্স শুধু গাছে নয়, মাটিতেও খাদ্য সংগ্রহ করতো।জীবাশ্মে মুখগহ্বরের হাড়ে 'cranial kinesis'-এর ইঙ্গিত, যা পাখিদের মাথার হাড় একে অপরের থেকে আলাদা করে নড়াতে সাহায্য করে।ড. স্যু চ্যাপম্যান, ক্লেমসন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বলেন, “এই জীবাশ্ম প্রক্রিয়াকরণের কাজটিও অসাধারণ হয়েছে। নরম টিস্যু এত নিখুঁতভাবে সংরক্ষণ করা বিরল।”তবে তিনি এটাও বলেন, আর্কিওপটেরিক্স হয়তো দীর্ঘ সময় ধরে উড়তে পারতো না, কারণ এতে আধুনিক পাখিদের মতো শক্তিশালী উড্ডয়ন পেশী বা কিলযুক্ত ব্রেস্টবোন ছিল না।এই জীবাশ্মটি এখন ফিল্ড মিউজিয়ামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন, যা 'স্যু' নামের বিখ্যাত T-Rex জীবাশ্মের পর সবচেয়ে বড় অর্জন বলে ধরা হচ্ছে।ড. ও’কনর বলেন, “আমি কখনো কল্পনাও করিনি এমন একটি জীবাশ্ম হাতে পাবো যেটি এতটা পরিপূর্ণ, এতটা তথ্যবহুল। এটি পৃথিবীর জীববৈচিত্র্যের ইতিহাসে এক অসাধারণ রূপান্তরের সাক্ষ্য।”তিনি আরও বলেন, “এ জীবাশ্ম আমাদের দেখাচ্ছে কিভাবে থেরোপড ডাইনোসররা বিবর্তনের মাধ্যমে আধুনিক পাখিতে রূপান্তরিত হয়েছে — যারা আজ পৃথিবীর সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় স্থলচর মেরুদণ্ডী প্রাণী।”এ আবিষ্কারে উঠে এসেছে আরেকটি জরুরি প্রশ্ন— বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে Fossil গুলোকে লুকিয়ে রাখার ফলে কী পরিমাণ অমূল্য তথ্য আমরা হারিয়ে ফেলছি?চ্যাপম্যান বলেন, “বেসরকারি সংগ্রাহকদের হাতে পড়লে প্রায়শই জীবাশ্মের সঠিক সংরক্ষণ হয় না, এবং গুরুত্বপূর্ণ নরম টিস্যু ধ্বংস হয়ে যায়।”জীবাশ্মটির সম্পূর্ণ বিশ্লেষণ এখনও শেষ হয়নি, এবং আরও বহু চমকপ্রদ তথ্য সামনে আসতে পারে বলে আশা করছেন গবেষকরা।“আমি আশা করি, সবার কাছেই এটি একইভাবে রোমাঞ্চকর মনে হবে, যেমনটা আমার কাছে হয়েছে,” বলে শেষ করেন ড. ও’কনর।
মন্তব্য (০)