ব্রেকিং নিউজ :

দৃষ্টিকোণ নিউজ একটি নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ অনলাইন সংবাদ মাধ্যম, যা সর্বশেষ সংবাদ ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করে।

আমরা দেশের ও বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ খবর, রাজনীতি, অর্থনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর নির্ভরযোগ্য প্রতিবেদন প্রকাশ করি।

অভিমত

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতায় অর্থনীতি চাপে, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে স্থবিরতা

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতায় অর্থনীতি চাপে, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে স্থবিরতা Image সংগৃহীত | ছবি: সংগৃহীত
ইমেইল :

দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখনো অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতায় পরিপূর্ণ। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তাদের দাবিদাওয়া নিয়ে রাজপথে নেমে আসায় অর্থনৈতিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এই অস্থিরতা ও রাজনৈতিক টানাপোড়েন অর্থনৈতিক সংস্কারকে বাধাগ্রস্ত করছে, যার প্রভাব পড়ছে নতুন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে।অর্থনীতিতে কিছু ইতিবাচক ইঙ্গিত, তবে বিনিয়োগে ভরসা নেইগত ৯ মাসে দেশের মৌলিক অর্থনৈতিক সূচকে কিছুটা স্থিতিশীলতা এলেও বিনিয়োগ প্রবাহ এখনো দুর্বল। রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে ইতিবাচক প্রবণতা দেখা দিলেও, মূল্যস্ফীতি এখনো জনজীবনের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।বৈদেশিক লেনদেনে ভারসাম্য ফিরেছে, কারণ রপ্তানিকারকেরা ভবিষ্যতে বাড়তি দাম পাবেন না, এই উপলব্ধিতে এখন অর্থ দেশে ফেরত আনছেন। তবে নতুন উদ্যোক্তারা রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে বড় বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না, ফলে কর্মসংস্থানেও গতিশীলতা আসছে না।ব্যাংক খাতে আস্থা ফিরছে, তবু দুর্বলতা কাটেনিব্যাংকিং খাত নিয়ে পুরোনো আতঙ্ক কিছুটা কমলেও এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। নতুন অধ্যাদেশ জারি হওয়া, আন্তর্জাতিক মানের নিরীক্ষা চালু এবং আমানতকারীদের সুরক্ষায় পদক্ষেপ গ্রহণ কিছুটা ইতিবাচক দিক। তবে এই খাত পুরোপুরি স্থিতিশীল হতে সময় লাগবে।সামষ্টিক অর্থনীতি খাদের কিনারা থেকে কিছুটা দূরে এলেও এখনো অনেক কাঠামোগত দুর্বলতা রয়ে গেছে, যেগুলোর সমাধান ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি উন্নতি সম্ভব নয়।রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও রাজপথের উত্তেজনা অর্থনীতির পথে বড় বাধাপ্রতিদিন কোনো না কোনো স্থানে বিক্ষোভ, সমাবেশ, সড়ক অবরোধ চলছে, যা সাধারণ মানুষের জীবনে দুর্ভোগ তৈরি করছে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বাভাবিক গতি থামিয়ে দিচ্ছে। শাহবাগ, কাকরাইল, মহাখালী – কোনো এলাকাই এই অস্থিরতা থেকে মুক্ত নয়।রাজপথে এই উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা অর্থনৈতিক সংস্কারকেই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এনবিআরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সংস্কার ব্যাহত হচ্ছে আন্দোলন-অবরোধের কারণে। নতুন বিনিয়োগকারীদের আস্থা গড়ার পরিবেশ তৈরি হচ্ছে না, ফলে দীর্ঘমেয়াদি কর্মস

ংস্থানের সুযোগও তৈরি হচ্ছে না।আগামী বাজেটে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার আহ্বানআগামী অর্থবছরের বাজেট হতে হবে বাস্তবভিত্তিক ও সীমিত আকাঙ্ক্ষার। অতীতে বাজেটের আকার বড় দেখানোর প্রবণতা থাকলেও এবার সতর্কভাবে রাজস্ব ও ব্যয়ের ভারসাম্য রাখতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ৫ লাখ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায় সম্ভব নয়, এবং বাজেট ঘাটতি যেন ২ লাখ কোটি টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।রাজস্ব আদায়ে সরাসরি করের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়াতে হবে, পরোক্ষ করের উপর নির্ভর কমাতে হবে। তবে করহার না বাড়িয়ে, কর ফাঁকি বন্ধ এবং দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে আনাই হবে মূল চাবিকাঠি। অনলাইন করব্যবস্থার প্রসার বাড়িয়ে করজাল সম্প্রসারণে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।ব্যয়ের খাতে পুনর্বিন্যাস দরকার, অপচয় নয় দক্ষতা প্রয়োজনসরকারি ব্যয়ের একটি বড় অংশ অপরিবর্তনযোগ্য – যেমন সুদ, বেতন ও ভাতা। তবে এডিপি এবং ভর্তুকির খাতে পুনর্বিন্যাস করা সম্ভব। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে কৃষি যন্ত্রপাতির ভর্তুকি বাস্তবে মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে চলে যাচ্ছে, ফলে খরচ হচ্ছে, কিন্তু সুফল নেই।এডিপিতে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প ছাঁটাই করে প্রকৃত প্রয়োজনীয় উদ্যোগে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার। বাজেটের ৮০% ব্যয় কমানো সম্ভব না হলেও, বাকি ২০% খাতে কৌশলী বদলেই সুফল আনা যেতে পারে।সরকারি ঋণের চাপ, বেসরকারি খাত ঝুঁকিতেবাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার ব্যাংক খাত থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিতে যাচ্ছে, যা বেসরকারি উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রাপ্তিতে প্রত্যক্ষ প্রতিযোগিতা তৈরি করবে। সরকারি ট্রেজারি বিলের সুদের হার ১১-১২ শতাংশ, ফলে ব্যাংকগুলো ঝুঁকিপূর্ণ বেসরকারি ঋণের পরিবর্তে সরকারকে ঋণ দিতেই আগ্রহী হবে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিনিয়োগে আস্থার ঘাটতি, রাজস্ব চ্যালেঞ্জ এবং কাঠামোগত দুর্বলতা—সবকিছু মিলেই অর্থনীতি বর্তমানে এক ধরনের চাপের মধ্যে রয়েছে। সামষ্টিক কিছু অগ্রগতি থাকলেও স্থায়ী উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, দক্ষ বাজেট পরিকল্পনা ও কার্যকর সংস্কার।

সম্পর্কিত ট্যাগ :

মন্তব্য (০)

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না. প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে *

সম্পর্কিত খবর