ব্রেকিং নিউজ :

দৃষ্টিকোণ নিউজ একটি নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ অনলাইন সংবাদ মাধ্যম, যা সর্বশেষ সংবাদ ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করে।

আমরা দেশের ও বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ খবর, রাজনীতি, অর্থনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর নির্ভরযোগ্য প্রতিবেদন প্রকাশ করি।

অভিমত

বাজেট নিয়ে বিশ্লেষণ: বৈষম্যহীন ও টেকসই উন্নয়ন এখনও অধরা

বাজেট নিয়ে বিশ্লেষণ: বৈষম্যহীন ও টেকসই উন্নয়ন এখনও অধরা Image সংগৃহীত | ছবি: সংগৃহীত
ইমেইল :

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ঘোষিত নতুন বাজেটে বৈষম্যহীন ও টেকসই অর্থনৈতিক কাঠামোর প্রতিশ্রুতি থাকলেও বাস্তব পরিকল্পনায় এর প্রতিফলন তেমন চোখে পড়েনি। বাজেট উপস্থাপনায় যে উদ্দেশ্যের কথা বলা হয়েছে, তা ছিল একটি ন্যায্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও দীর্ঘমেয়াদি কাঠামো গঠনের লক্ষ্যে সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেওয়া। তবে বাস্তবতায় তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা গেল না।রাজনৈতিক সরকারের ক্ষেত্রে নানা রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা ও প্রতিশ্রুতি থাকায় কাঠামোগত সংস্কারে সীমাবদ্ধতা দেখা দেয়। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের সেই ধরনের চাপ থাকে না। তাই এ সরকারের বাজেটে জনগণের প্রত্যাশা ছিল, অন্তত কিছু খাতকে কেন্দ্র করে কাঠামোগত পরিবর্তনের সূচনা ঘটবে। দীর্ঘমেয়াদি এসব সংস্কার রাতারাতি বাস্তবায়ন সম্ভব না হলেও সূচনা করলে ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্ত ভিত্তি তৈরি হতো। কিন্তু তা হয়নি।সমাজে দিন দিন বৈষম্য বাড়ছে, বিশেষ করে ‘সুযোগের বৈষম্য’। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও নারী অধিকারের মতো মৌলিক খাতে যে বৈষম্য রয়েছে, সেটিকে বাজেট প্রস্তাবে গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা দরকার ছিল। এই খাতে কাঠামোগত পরিবর্তনের চেষ্টা সমাজে দীর্ঘস্থায়ী ইতিবাচক পরিবর্তনের পথ খুলে দিত। দুর্ভাগ্যবশত, বাজেটে এমন দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন পাওয়া যায়নি।আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো কর্মসংস্থান। অর্থনীতির কাঠামো পুনর্বিন্যাস করতে হলে প্রথমেই কর্মসংস্থান বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি হলে শুধু সামাজিক বৈষম্য কমবে না, বরং মানুষের জীবনমানও উন্নত হবে। এই উন্নয়ন আবার ভবিষ্যতে টেকসই প্রবৃদ্ধির ভিত

্তি হিসেবে কাজ করতে পারত।কিন্তু কর্মসংস্থান বাড়াতে হলে বিনিয়োগ বাড়াতে হয়। অথচ বর্তমানে বিনিয়োগ পরিস্থিতি খুব একটা ভালো নয়। দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে ওঠেনি। শুধু বিনিয়োগ সম্মেলন আয়োজন করে বিনিয়োগ বাড়ানো সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক কিংবা স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য যেসব বাধা রয়েছে, যেমন নীতিগত অনিশ্চয়তা, দুর্নীতি, অবকাঠামোগত দুর্বলতা—তা দূর করা ছাড়া কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ আসবে না।মূল্যস্ফীতির বিষয়টিও উপেক্ষিত হয়নি। বিগত তিন বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেশের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তুলেছে। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতির মাধ্যমে সুদের হার বাড়িয়ে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও কার্যত সফলতা আসেনি। কারণ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে শুধু মুদ্রানীতিই যথেষ্ট নয়; রাজস্বনীতি ও বাজার ব্যবস্থাপনার সঙ্গেও সমন্বয় থাকা আবশ্যক।এ বছর বাজেটে শুল্ক হ্রাস-বৃদ্ধির মতো কিছু পদক্ষেপ দেখা গেলেও তা মূল্যস্ফীতির লাগাম ধরার জন্য যথেষ্ট নয়। মানুষ ক্রয়ক্ষমতা হারাচ্ছে, বহু পরিবার আবারও দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাচ্ছে। এটি শুধু সামাজিক দিক থেকে নয়, অর্থনৈতিকভাবেও একটি বড় হুমকি।সব মিলিয়ে বলা যায়, এই বাজেটে দেশের অর্থনীতির প্রকৃত সমস্যাগুলোর কোনোটিরই কার্যকর সমাধানের ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। কাঠামোগত পরিবর্তন, বৈষম্য হ্রাস, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়ন কিংবা মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরার মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো থেকে যায় উপেক্ষিত।মুস্তফা কে মুজেরী, সাবেক মহাপরিচালক, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)

সম্পর্কিত ট্যাগ :

মন্তব্য (০)

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না. প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে *

সম্পর্কিত খবর