অর্থনীতির কঠিন বাস্তবতা সামনে রেখে আজ সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। বিকেল ৩টায় তার রেকর্ডকৃত বাজেট বক্তৃতা প্রচারিত হবে বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতারে।এটি দেশের ৫৪তম বাজেট এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে প্রথম বাজেট। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর এটি জুনের শেষদিকে অর্থ বিল আকারে প্রকাশিত হবে এবং ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।সালেহউদ্দিন আহমেদ এক সাক্ষাৎকারে জানান, ‘জনগণের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যকে সামনে রেখেই বাজেট তৈরি হচ্ছে। এটি হবে বাস্তববাদী, কল্যাণমুখী এবং সমতাভিত্তিক বাজেট।’বাজেটের পরিসংখ্যান ও লক্ষ্যমাত্রা২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটের মোট আকার ধরা হচ্ছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় কিছুটা কম। মৌলিক অর্থনৈতিক সূচকের মধ্যে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬.৫ শতাংশ এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৫.
২৫ শতাংশ।এবার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) কমিয়ে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ৩৫ হাজার কোটি টাকা কম।সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ থাকছে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা, তবে এর আওতায় থাকা কিছু প্রকল্প বাদ দেওয়া হচ্ছে। সুদ বাবদ ব্যয় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা এবং সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতায় বরাদ্দ থাকছে ৯৭ হাজার কোটি টাকা।রাজস্ব বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা।আসছে যেসব নীতিগত পরিবর্তনপ্রথম থেকে নবম গ্রেডের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ১৫% এবং ১০ থেকে ২০তম গ্রেডে থাকা কর্মীদের জন্য ২০% মহার্ঘ ভাতা ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে।বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী, অনগ্রসর জনগোষ্ঠীসহ আটটি ভাতা কর্মসূচিতে ভাতার পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে ৫০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। পাশাপাশি চা-শ্রমিকদের সন্তানদের জন্য নতুনভাবে উপবৃত্তি চালু করার কথা ভাবা হচ্ছে।বেসরকারি কিছু ব্যাংককে সাময়িকভাবে সরকারি মালিকানায় নেওয়ার জন্য বরাদ্দ রাখা হচ্ছে বাজেটে। একইসঙ্গে জুলাই শহীদ ও আহত পরিবারগুলোকে এককালীন অর্থ সহ মাসিক ভাতা প্রদানের পরিকল্পনাও রয়েছে।খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতা বাড়িয়ে ৫০ লাখ থেকে ৫৫ লাখ পরিবারে উন্নীত করা হচ্ছে এবং বছরের পাঁচ মাসের পরিবর্তে ছয় মাস চাল বিতরণের পরিকল্পনা রয়েছে।করনীতিতে সম্ভাব্য পরিবর্তনশেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির করপোরেট কর বাড়িয়ে ২৭.৫% করার প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে।যেসব প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক টার্নওভার ৩ কোটি টাকার বেশি, সেসব প্রতিষ্ঠানকে এখনকার ০.৬% এর বদলে ১% হারে কর দিতে হতে পারে।জমি কেনাবেচায় কর হার এলাকাভেদে কমিয়ে আনা হতে পারে—বর্তমানে ৮%, ৬% ও ৪% যা নতুন বাজেটে ৬%, ৪% ও ৩% নির্ধারণের পরিকল্পনা রয়েছে।ফ্ল্যাট বা জমি কেনায় অপ্রদর্শিত অর্থ (কালোটাকা) ব্যবহারের সুযোগ বজায় থাকলেও, করহার এলাকাভেদে বাড়ানো হতে পারে।বাজেট নিয়ে বিশ্লেষকদের অভিমত সিপিডি’র সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বাজেটকে ‘গতানুগতিক’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি মনে করেন, ‘অর্থনৈতিক রোডম্যাপ দেওয়ার সুযোগ থাকলেও অর্থ উপদেষ্টা সে পথে যাননি।’ তার মতে, ‘উন্নয়নের ভাষ্য বদলেরও কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।’
মন্তব্য (০)