ব্রেকিং নিউজ :

দৃষ্টিকোণ নিউজ একটি নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ অনলাইন সংবাদ মাধ্যম, যা সর্বশেষ সংবাদ ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করে।

আমরা দেশের ও বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ খবর, রাজনীতি, অর্থনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর নির্ভরযোগ্য প্রতিবেদন প্রকাশ করি।

বাজেট

বেসরকারি খাতকে পিষে ঋণনির্ভর বাজেট: আত্মঘাতী পথে অর্থনীতি?

বেসরকারি খাতকে পিষে ঋণনির্ভর বাজেট: আত্মঘাতী পথে অর্থনীতি? Image সংগৃহীত | ছবি: সংগৃহীত
ইমেইল :

“ঋণ করে ঘি খাও”—এই প্রাচীন দর্শন আধুনিক অর্থনীতিতে এখন শুধু আত্মঘাতীই নয়, মারাত্মক সর্বনাশের বার্তা বহন করে। বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, বাংলাদেশ দিনকে দিন এক গভীর ঋণের জালে জড়িয়ে যাচ্ছে। আগামী ২ জুন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট পেশ করবেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ। এই বাজেট হবে সম্পূর্ণ ঋণনির্ভর এবং প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি মাত্র ৫ শতাংশ—যা হতাশাজনক।অথচ বেসরকারি খাতকে চাঙা করার কোনো রূপরেখা এই বাজেটে নেই। দেশের অর্থনীতির চাকা যাদের হাতে ঘোরে, সেই ব্যবসায়ী সমাজ আজ ভয় আর অনিশ্চয়তার মধ্যে বন্দি। বাজেটের আকারও কমানো হয়েছে। কিন্তু একইসঙ্গে সরকার নানান উৎস থেকে ঋণ সংগ্রহে ব্যস্ত, যার বেশিরভাগই কঠিন শর্তসাপেক্ষ।বর্তমান ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০৩ বিলিয়ন ডলার, জনপ্রতি ঋণ প্রায় ১ লাখ টাকা। এমন বাস্তবতায় জন্ম নেওয়া প্রতিটি শিশু জন্মলগ্নেই ঋণের বোঝা বয়ে বেড়াতে বাধ্য হচ্ছে।বিশেষজ্ঞদের মতে, জিডিপির ৪০% এর বেশি ঋণনির্ভর হওয়া অর্থনীতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, আর বাংলাদেশ ইতোমধ্যে এই সীমা ছাড়িয়ে ৪৫ শতাংশে পৌঁছেছে।ঋণের চক্রে দাসত্ব: বিকল্প কোথায়?ঋণের টাকা যেমন আসে, তেমনই শর্তে বাঁধা থাকে। আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশগুলোর কাছ থেকে ঋণ নিতে গিয়ে সার্বভৌম সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে সরকার। অথচ এই অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে হলে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাওয়া উচিত বেসরকারি খাতকে। কারণ এ খাতই কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে, উৎপাদন বাড়ায়, রপ্তানি

বৃদ্ধি করে এবং রাজস্বের মূল উৎস হয়।কিন্তু বিগত ১০ মাসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বেসরকারি খাতকে চাঙা করার পরিবর্তে চলছে দমন-পীড়নের নীতি। শিল্প-কারখানায় হামলা, ব্যবসায়ীদের নামে মামলা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দসহ একের পর এক পদক্ষেপ বেসরকারি উদ্যোক্তাদের আতঙ্কিত করে তুলেছে।সরকারি তথ্য মতে, ৫ আগস্টের পর থেকে ৭৭৩টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে আক্রমণ হয়েছে, দায়ের হয়েছে ১৫ হাজারেরও বেশি হত্যা মামলা। যার মধ্যে ৩৫ হাজার ৭৭৩ জন অভিযুক্ত ব্যবসায়ী।এই অস্থিরতা এবং দমননীতির ফলে নতুন কোনো শিল্প উদ্যোগ চোখে পড়ছে না, ব্যবসায়ীরা অপেক্ষা করছেন পরিস্থিতির উন্নতির আশায়।আন্তর্জাতিক সম্পর্কেও নেতিবাচক প্রভাবআমদানি-রপ্তানির দিক থেকেও সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক আরোপ ও ভারতের সঙ্গে টানাপোড়েনের কারণে রপ্তানি বাণিজ্যে বড় ধাক্কার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ভারতের সেভেন সিস্টারস অঞ্চলে বাংলাদেশি পণ্যের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গার্মেন্টস রপ্তানিও বন্ধ করা হয়েছে ভারতের ওপর দিয়ে।এই অবস্থা চলতে থাকলে অর্থনীতি যে আরও সংকুচিত হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে এক সংকটজনক মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে। ঋণের ওপর নির্ভর করে রাষ্ট্র চালানো কোনো টেকসই নীতি নয়। বেসরকারি খাতকে বাদ দিয়ে উন্নয়নের স্বপ্ন দেখা একধরনের বিভ্রম।সরকার যদি এখনই দিক পরিবর্তন না করে, ঋণের দাসত্ব এবং অর্থনৈতিক পঙ্গুত্ব দেশের ভবিষ্যৎ হয়ে দাঁড়াবে।

সম্পর্কিত ট্যাগ :

মন্তব্য (০)

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না. প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে *

সম্পর্কিত খবর