জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের রংপুরের বাসভবনে হামলার ঘটনায় তদন্তে নেমেছে সেনাবাহিনী। এই তদন্তে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই নেতার কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে, রংপুর নগরের পায়রা চত্বরে।সেনাবাহিনীর সদস্যরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের রংপুরের আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ও জেলা আহ্বায়ক ইমরান আহমেদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন। এই সময় তাঁদের দেখানো হয় হামলার সময়কার ভিডিও ফুটেজ ও স্থিরচিত্র, এবং অভিযুক্তদের শনাক্তে সহযোগিতা চাওয়া হয়।খবর পেয়ে রাত দেড়টার দিকে পায়রা চত্বরে পৌঁছান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তিনি ৭২ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুমের সঙ্গে কথাও বলেন। পরে রাত ২টার দিকে তিনি বৈষম্যবিরোধী নেতাদের নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, সেনাসদস্যরা একাধিক গাড়িতে করে এসে নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং হামলায় জড়িতদের চিহ্নিত করার অনুরোধ করেন। এ সময় মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শামসুজ্জামান সামু, সদস্যসচিব মাহফুজ উন নবী (ডন) এবং জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আনিছুর রহমান (লাকু)কেও ঘটনাস্থলে ডেকে পাঠানো হয়।ব্রিগেডিয়ার হুমায়ুন কাইয়ুম নেতাদের ভিডিও ফুটেজ দেখিয়ে অভিযুক্তদের শনাক্তে সহযোগিতা চান। বিএনপি নেতা শামসুজ্জামান সামু জানান, 'আমরা সহযোগিতা করতে রাজি হয়েছি, প্রয়োজনে সংশ্লিষ্টদের হাজিরও করব।'রাতেই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুম, এনসিপি নেতা সারজিস আলম এবং বিএনপি নেতারা। ব্রিগেডিয়ার হুমায়ুন কাইয়ুম বলেন, "শান্তি বিনষ্টকারী যে-ই হোক, দলমত নির্বিশেষে তাদের বি
রুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থাকবে সেনাবাহিনী।" তিনি আরও বলেন, "সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে কেউ যেন আইন ভঙ্গ করে এমন সুযোগ নেই।"বৈষম্যবিরোধী নেতাদের জিজ্ঞাসাবাদ প্রসঙ্গে ব্রিগেডিয়ার বলেন, "ওনারা ভিডিও ফুটেজ দেখে কিছু ব্যক্তিকে শনাক্ত করেছেন, যাঁদের হাতে লাঠি ইত্যাদি ছিল। তাঁরা বিব্রত হয়েছেন এবং আগামীকাল অভিযুক্তদের হাজির করবেন বলে জানিয়েছেন।"এ প্রসঙ্গে সারজিস আলম বলেন, 'সেনাবাহিনী দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছে, আমরা তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু রাত ১টা-২টার সময় কাউকে ডেকে নেওয়া কিছুটা দৃষ্টিকটু মনে হয়েছে। আমরা চাই দিনের আলোয়, অফিস সময়ের মধ্যে এ ধরনের জিজ্ঞাসাবাদ হোক, যাতে সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে সহযোগিতা করতে পারেন।'এর আগে রাত ১টার দিকে নিজের ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দেন সারজিস আলম। তিনি লেখেন, ‘রংপুরে ফ্যাসিস্টের দোসরদের গ্রেপ্তার না করে সহযোদ্ধাদের বিব্রত করা হলে, আগামীকাল রাজপথে দেখা হবে।’ এই পোস্টের আধা ঘণ্টার মধ্যেই তিনি পায়রা চত্বরে উপস্থিত হন।সারজিস আলম জানান, তিনি তখন পঞ্চগড় থেকে ঢাকার পথে ছিলেন। মাঝপথে জানতে পারেন সেনাবাহিনী বৈষম্যবিরোধী নেতাদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তিনি মনে করেন, "জিএম কাদেরের আগমন ও সাবেক মেয়র মোস্তফার পুনর্বহালের পক্ষে জনমত তৈরি থেকেই এই অস্থির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। জাতীয় পার্টি একটি ক্ষমতাসীন অনুগত বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করছে।" রংপুরে জাতীয় পার্টির নেতার বাড়িতে হামলার ঘটনায় সেনাবাহিনী তদন্তে নেমেছে। বৈষম্যবিরোধী ও বিএনপি নেতাদের সহযোগিতায় পরিস্থিতি নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সারজিস আলম সরাসরি ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে কথা বলেন এবং তদন্তে সহযোগিতার বার্তা দেন।
মন্তব্য (০)